শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মোহাম্মদ হোসাইন

 

কবিতার কালিমাটি ১০৪


একটি কাল্পনিক সাক্ষাৎকার

 

চৌদ্দ নম্বর ডেডবডির খোঁজ কি পেয়েছিলেন সুবোধ সরকার?

সেদিন কী বলেছিল ডোম?

মর্গে কি পেয়েছিল লাশ?

 

তাছাড়া, চৌদ্দ নম্বরই বা হল কেন? কী ছিল তার মাহাত্ম্য?

কে যেন, প্রশ্ন করলো।

জিজ্ঞেস করতে হবে, পরেরটা কেন হল না বা পূর্বেরটা

পনেরো নম্বরও তো হতে পারত, কিংবা তেরো নম্বর

 

হয়নি, হয়নি বলেই চৌদ্দ নম্বর ডেডবডিটা খুঁজে বের করতে হবে

বুঝে নিতে হবে রহস্যটা বাঁক নিয়েছে কোনদিকে! সে কি বাকুলিয়ার না পুরুলিয়ার না বাঁকুড়ার বুঝে নিতে হবে।

আচ্ছা, সে কি কোনও মহিলা ছিল, না পুরুষ?

বাঙাল ছিল না তো! কিংবা, নক্সাল?

নিষিদ্ধ কোনো রাজনৈতিক কর্মী ছিল?

নাকি প্রেমিক? নাকি বিদ্রোহী?

 

আর , কাউকে পাওয়া যায় নি? কী এমন হয়েছিল সেদিন?

লাশটি কি তরুণের, না বৃদ্ধের, মধ্যবয়সী কারও?

অতীত, বর্তমান ঘেঁটে ঘেঁটে ভবিষ্যতে এসে পড়েছি, কিন্তু, ডেডবডিটা কোথাও পাচ্ছি না, কেউ পাচ্ছে না!

 

কবরখানায় গিয়ে দেখি শত শত ডেডবডি

একই রকমের, একই চেহারার হাড়গোড়, খুলি, মগজ

কেবল, সাড়ে তিনহাত জমি, সেলাইবিহীন শত শত শাদাজামা, শুভ্র ফুলগুচ্ছ

 

একটু আগে দাহ করা হল যাকে শ্মশানঘাটে,

সেখানেও কেউ জানে না, লাস্ট কত নম্বর ছিল!

শুধু যে মা কাঁদছিল আকাশের খিলান ধরে, সে বলল, তার হাতে বর্শা ও বাঁশি ছিল

গঙ্গা এসে নিয়ে গেছে ছাই

ঝড়ে-বৃষ্টিতে নিশ্চয়ই ফিরে আসবে একদিন

 

কালের চাকায় ঘষটে ঘষটে সেই বৃদ্ধা আজ অন্ধ

কপালের বলিরেখায় সন্ধ্যার আবছা আলো

মিলিয়ে যাওয়া হাওয়ায়

 

ধূপের কড়া ঘ্রাণ...

 

গোরুর চোখ

 

যেন গোরুর চোখ

শুকালো না কোনোদিন

ভেজা রয়ে গেল, রয়ে গেল আজীবন

ধ্বনিময়

এমন তো চাইনি আমি

তুমি চেয়েছিলে?

নিবিড়তা চেয়েছিলে

চেয়েছিলাম আমিও

 

কতকিছু পার হয়ে যাচ্ছে

একটু একটু সরে যাচ্ছে সময়

একটু একটু সরে যাচ্ছে দেয়াল

একটু একটু নদী

সিঁথির মাঝখানে সরণি

হেলে পড়ছে, হেলে পড়ছে

 

স্থির কেউ নেই, স্থিরতায়ও কেউ নেই

বাবুই উড়ছে, তালগাছ উড়ছে

থামছে না কেউ

 

তবু, কাছে টেনে নেয়

মানুষের ভেতরের দিঘি

দিঘির ভেতরে থইথই জল...

 

নতুন কবিতা

 

ছুটি নেব কিছুদিন

পড়ার টেবিল, এলানো বালিশ

খাট

ছুটি নেব দরকারি কাজ, দরকারি জিনিস

 

ছুটি বাজারের থলে, কাঁচালংকা, বিবিধ

তৈজস

চোখকে বলছি, বলছি তর্জনীকেও

কিছুদিন ছুটি নেব

 

মাথাকেও বলছি ছুটি নেব

বলছি ইন্দ্রিয়কে, চিন্তাকে

কানের কাছে বলছি কানে কানে

ছুটি নেব ছুটি নেব

 

ছুটি নেব প্রিয়মুখ, প্রিয় আল্পনা

কবিতা

চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেব

নির্ভার, নির্ভাবনার

 

কোনও দায় নেই, হাইপার নেই

স্মৃতি নেই, বিস্মৃতি নেই

ছুটি... ছুটি... ছুটি...

 

মনের ঘরে তালা

চাবির ঘরে চাবি

মনকেও বলব ছুটি

ছুটিকেও বলব ছুটি

ছুটি... ছু...টি...

 

অভিমান, কষ্ট তোমাকে ছুটি

বুক ধড়ফড়, না ঘুমুনো, ছুটি, ছুটি

চোখের নীচে কালি, স্বাদহীন জিহবা তোমাদেরও ছুটি

ভুলে যেও প্রেম, ভুলে যেও ভালবাসা

ভালবাসা, তোমাকেও ছুটি

সামাজিক প্রথা, সামাজিক ঘাস

তোমাদেরও ছুটি

 

আর কোনও কান্না নয়, আর কোনও দাবী নয়

যে যেখানে আছে, সে সেখানে থাকুক তার তার মত

একাকী যে আছে সে একাকীই থাকুক

যৌথ খামারে যে, সে থাকুক জোরালো ও

জীবনঘনিষ্ঠ

 

কামারশালায় গরম হোক লোহা ও লাবণ্য

প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে ফুটুক ফুল, বাগানে ও বনানীতে

মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়ুক বা কমুক

জারি থাকুক, যার যার ইচ্ছা ও অনিচ্ছা

 

প্রকৃতি থাকুক, প্রকৃতির মত, রোদ হোক

মেঘ থাকুক মেঘের অন্বেষায়

দিনে ও রাতে

বৃষ্টি হোক, তুমুল বৃষ্টি হোক, বৃষ্টিতে ভিজে যাক ভোরের কাক, শামুক, ঝিনুক, পুঁইলতা

ভিজে ভিজে একসা হোক সুতপার শাড়ি

শায়া ও ব্লাউজ

নরমকাঁচুলি থেকে ঝরে পড়ুক মধুময় বৃষ্টির রেণু

আমার ঠোঁট, আমার কলম শুষে নিক তা

মৃত্তিকায় মৃত্তিকায় ফুটে ওঠুক নতুন চারা, আবারও নতুন কবিতা...

 


1 টি মন্তব্য: