শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মলয় রায়চৌধুরী

 

কবিতার কালিমাটি ১০৪


দাম্পত্য

তখন আমরাও নোংরা এমনকী অশ্লীল কথাবার্তা

করেছি বলাবলি, হেসেছি রাস্তার মাঝে কেননা আমাদের

ভাষা কেউই তো বুঝতো না। তখন বুড়ির ঢেউ-চুল 

কোমর পর্যন্ত সুগন্ধ মাখানো, মুখ গুঁজে ঘুমোতুম তাতে--

চোখ দুটো, বুকও বড়ো-বড়ো, যা দেখে বড়দি বলেছিল

আমরা এরকম কনে তোর জন্যে খুঁজেই পেতুম না

তার আগে পীরিতের কতো খেল দেখিয়েছিলিস বাবা

তুই ঠিক ঈগলের মতো তুলে আনলি সাবর্ণ চৌধুরীর বাড়ি

তখন বুড়ির জামদানি আঁচল উড়তো ময়ূরপঙ্খী হয়ে

মোজেক মেঝেয় ব্যালেরিনা হিল তুলতো সাম্বা নাচের ছন্দ।

একান্ন বছরে বুড়ির স্মৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছে সেসব;

মাঝে-মাঝে বলে তোমার গোঁফও ছিল রাজকাপুরের।

বুড়ির পছন্দ মর্ত্যের হানি বাফনা আর ইন্দ্রজিৎ বোস

আমি সুচিত্রা সেন নার্গিস মধুবালাকে আজও ভালোবাসি--

বুড়ো বয়সে পৌঁছে বুড়ি বলে এটাই দাম্পত্য-জীবন

যৌবনে সংসারের খাইখরচ-ঝক্কি-ঝামেলায় টেরই পাইনি

দাম্পত্যের শেষ পর্বে শোক-দুঃখ-অপচয়ও আনন্দ আনে।

 

আনন্দ

দেখতেই পাচ্ছেন, আমরা দুই অশীতিপর হাসিমুখে বসে আছি

আমরাও সেটাই দেখছি। আপনারা  দেখতে পাচ্ছেন না 

আমাদের কাঁধ, হাঁটু, কোমরের ব্যথা

কাজের বউ আসছে না, যদিও মাইনে দিতে হয়েছে যাতে না ছেড়ে যায়

যদি বা বাসন মাজি, এমনকী গান গেয়ে, মেরে পিয়া গয়ে রংগুন

ওঁহাসে কিয়া হ্যায় টেলিফুন, তুমহারি ইয়াদ সতাতি হ্যায় 

কিংবা কভি আর কভি পার লাগা তিরে নজর

সঁইয়া ঘায়ল কিয়া হ্যায় তুনে মেরা জিগর, কিংবা

জাদুগর সঁইয়া ছোড়ো মোরি বাঁইয়া আবি ঘরি জানে দো

বুড়ি বলে, ভাগ্নে জামায়ের হাতে হাজা হয়ে গেছে 

স্যানিটাইজার আর বাসন মাজায় যাও টিভি দ্যাখো

আমি বলি শশীর সুন্দরী বউ অতো বড়ো ফ্ল্যাটের কাজ তো

একাই সামলায়, ওদের দশহাজারি কামওয়ালি চলে গেছে

অগত্যা ফুলঝাড়ু দেবার কাজটা নিয়েছি আর কী আশ্চর্য

এতো পাকাচুল মেঝেতে পড়ে থাকে তা তো বলত না ঝি

ন্যাতাটা গোড়ালি দিয়ে মেঝের ওপর ঘষি, মাটিতে বসতে পারি না যে

বুড়ি রিলাকসিল বা ব্যথার তেল মাখিয়ে দ্যায়, আমি ততোক্ষণ

গান গাই এ গুলবদন এ গুলবদন, ফুলোঁ কি মহক, কাঁটো কি চুভন

তুঝে দেখ কে কহতা হ্যায় মেরা মন, কহিঁ আজ কিসিসে পেয়ার

না হো জায়ে। দেখতে  পাচ্ছেন তো আমরা দুই অশীতিপর কীরকম 

মজাসসে আছি!

 

 

বাসন মাজা

রবীন্দ্রনাথ, আপনি কখনও বাসন মাজেননি সেটা জানি

কেননা আপনি তো গুরুদেব যাঁরা বল্মীকের ভেতরে থাকেন

বুদ্ধদেব বসু মহাশয়, রান্নাপটু, উনিও মেজেছেন কিনা সন্দেহ

জীবনানন্দ বউকে একই সঙ্গে ভালো ও খারাপ বাসতেন

ডায়েরিতে আইনস্টাইনি ফরমুলায় বলেননি বাসন মাজার কথা

এবং বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, সুধীন দত্তেরা জানি না জানতেন কিনা

কাজের মেমরা এসে কোথায় বাসন মাজেন! অলোকরঞ্জন থাকেন

অর্ধেক বিদেশে আর বাকি হাফ দেশে; আলোক সরকারও

হয়তো জানতেন না বাজারে এসে গেছে বাসন মাজাকে কবিতার চেয়ে

সহজ করার জন্য ঝুরোসাবান তারের নানান জালিকা।

মহিলা ও পুরুষ কবিদের এটাই তফাত — অনেকে জানে না।

আমি আর দাদা শৈশব থেকে শিখেছি বাসন মাজার কারিকুরি

এখন তা কাজে দিচ্ছে; বুড়ি তো ঝুঁকতে পারে না, আমি পারি

এই বয়সেও রোজই বাসন মাজি ফুলঝাড়ু দিই বুঝলেন আলবেয়ার ক্যামু

গারসিয়া মার্কেজ — প্লেগ নয়, করোনা ভাইরাসের দিনে বুড়ো-বুড়ি প্রেম!

 

Top of Form

Bottom of Form

 

 


1 টি মন্তব্য: