শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মৌলীনাথ গোস্বামী

 

কবিতার কালিমাটি ১০৪


বৃষ্টির পরে

আবার যবে বৃষ্টিশেষের রাতে

প্রহর যখন আর্দ্র পরস্পর

সদ্যস্নাত তুমুল জ্যোৎস্নাতে

বারান্দায় বেলিফুলের স্বর

 

তোমায় দেখি চূর্ণ তারার রাতে

এমন করে দেখিনি বহুদিন

হাত রাখিনি ঠোঁটের বিছানাতে

চোখের কোণে ভালোবাসার ঋণ

 

না যদি হয়, অনর্গল রাতে

হাওয়ার থেকে ওড়না খসে গেলে

হৃদ রেখেছি তোমার নারী হাতে

রাত এনেছি অনঙ্গ চাঁদ জ্বেলে

 

বৃষ্টিশেষের নিরাভরণ রাতে

ভাসতে যদি, ভাসাতে মন চায়

চোখ ঢেকেছি নিলাজ আঁখিপাতে

চল্ ডুবে যাই অলকানন্দায়

 

আগুনের শবযাত্রা

আগুনের উলুধ্বনি জানা নেই কবে শেষ হবে

কবে সব পরিযায়ী নিজেদের ঘরে ফিরে যাবে

 

ঘর মানে দুই হাত সুখ, ঘর মানে দু'বেলা খোরাকি

পথ তুমি শুশ্রূষা হও, যন্ত্রণা কিছু থাক বাকি

 

একটা জীবন, তাকে আর কত পুড়ে যেতে হবে

ক'বার সে ছাই হবে একমুঠো জলের অভাবে

 

ঘর তার তৃষ্ণার জল, বাড়ি তার দূরের জোনাকি

রাত তুমি যত পোড়ো, আমিও তো পুড়ে যেতে থাকি

 

আমার অস্থি বিছানো, রাস্তায় তুমি হেঁটে যাবে

আমার চোখের জলে আগুনের চিতা লেখা হবে

 

সাইক্লোন

বাতাসের গতিবেগ কত ছিল, একশো কী দু'শো

যতটুকু জানা গেছে

সে হিসেবে যদিও বা মতভেদ ছিল

একা একা পায়চারি ক'রে বিভ্রান্ত উপগ্রহ এক

বহুদূর মহাকাশ থেকে

এইসব অবিরাম বলে গিয়েছিল

 

স্যাটেলাইট সব কিছু পারে

পারে না মাপতে শুধু কত জোরে ভেঙে পড়ে ঘর-

পাঁজরের স্তূপ থেকে আকাশের দিকে

বাড়ির চালের সাথে কত বেগে ওড়ে দীর্ঘশ্বাস

 

আগাছার মত

পলক ফেলার চেয়ে দ্রুত

ভেসে যায় গৃহস্থ বর্তমান, জীবনের গতিপথ

ভেঙেচুরে দুমড়িয়ে পড়ে থাকে রাস্তায় ঘাটে!

 

তারপর তবুও বেহায়া রোদ ওঠে-

 

ছিপছিপে হাওয়া হয়ত বা অপরাধবোধে ভোগে

ধ্বংসাবশেষ জুড়ে অনুতাপে একা একা বয়...

 

পারস্পেক্টিভ মেনে গতিময় মানবজীবন

নিজেই নিজের শবদেহ দেখে থমকায়!

 

থামে না

 

প্ৰচণ্ড গতিবেগে, ধ্বংসের চোখে চোখ রেখে

ঝড়ের মতন ফিরে আসে

জীবনের ক্যানভাসে

 

পুনরুত্থানের গতি, স্যাটেলাইট কোনদিন মাপবে না...

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন