আবুল হাসান: সে এক লাবণ্য
ধরে
কবে কখন প্রথম আবুল হাসান পড়া শুরু করেছিলাম সেটা এখন আর মনে নেই। তবে জীবন যখন হতাশার যন্ত্রণায় নিমজ্জিত হয় তখন কবি হাসানের কবিতাই একমাত্র ভরসার স্থল হয়ে ওঠে এখনো। আবুল হাসানের কবিতার কথা মনে পড়ে তা হচ্ছে কবি শেলীর সেই বিখ্যাত উক্তি - সেই গানগুলিই হচ্ছে সুমধুর যা আমাদের দুঃখকাতর চিন্তার কথা প্রকাশ করে (Our sweetest songs are those that tell of saddest thought)।
কীটসের কবিতায় যে তীব্র বেদনাবোধ অথবা
র্যাঁবোর কবিতায় জীবনের যে নিদারুণ যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি আমরা লক্ষ করেছি, কবি আবুল
হাসানের দ্যুতিময় কবিতায়ও সেইসব অনুষঙ্গ উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠেছে। আবুল হাসান তাঁর ব্যক্তিজীবন
ও সামাজিক জীবনযন্ত্রণার যে অভিজ্ঞান অর্জন করেছিলেন, সেটাই তাঁর কবিতাকে এক মহৎ শিল্পে
মহিমান্বিত করেছে। তাঁর কবিতা পড়তে পড়তে আমি তাই পাঠক হিসেবে বিশেষ এক ঘোরের মাঝে ক্রমশ
আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। হাসানের কবিতা তখন আর তাঁর নিজের থাকে না, হয়ে ওঠে সর্বজনীন। তাঁর
প্রতিটি কবিতাই রাত্রির নৈঃশব্দ্যের মতো ধ্যানমগ্ন। তিনি ছিলেন এমনই এক আজন্ম বিশুদ্ধ
কবি যিনি নিজের জীবনকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিঃশেষ করেই কবিতা লিখেছিলেন। অল্প বয়সেই একজন
সৃজনশীল কবি হিসেবে তাই বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন হাসান। মাত্র এক দশকের কাব্যসাধনায় আধুনিক
বাংলা কবিতার ইতিহাসে অর্জন করেছিলেন বিশিষ্ট স্থান। প্রতিভাবান না হলে এরকমটা সম্ভবপর
ছিল না। কবি হাসান আত্মত্যাগ, দুঃখবোধ, মৃত্যুচেতনা, বিচ্ছিন্নতাবোধ, নৈঃসঙ্গচেতনা,
স্মৃতিমুগ্ধতা এবং মুক্তিযুদ্ধকে কবিতার বিষয়-আশয় করে নিয়েছিলেন। যাপিত জীবনে খুব আধুনিক
একজন মানুষ ছিলেন না তিনি, তবে সাহিত্যজীবনে তিনি ছিলেন প্রবল আধুনিক এক কবি। একদিকে
গ্রামীণ জীবনের প্রতি টান, অন্যদিকে শহরবাসের মিথস্ক্রিয়া তাঁর কবিতায় প্রোথিত করেছিল
আধুনিকতার বীজ। থেকেও না-থাকা আবার না-থেকেও থাকাই ছিল তাঁর স্বভাব। সে কারণেই বোধহয়
তাঁর চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা খুব একটা বিচলিত করতো না তাকে।
একজন কবির উপর তাঁর সময়ের যে গভীর প্রভাব
পড়বে, সেটাই তো স্বাভাবিক ও অনস্বীকার্য় বিষয়। সময়, যুগ-যন্ত্রণার নানা ঘটনাপ্রবাহ
কবিমানসে যে অন্তরযাতনার সৃষ্টি করে, বিশেষ করে আধুনিক নগরজীবনের উন্মেষের ফলে ব্যক্তিজীবনে
যে সামগ্রিক জটিলতার সৃষ্টি হয়, তাই কবিমনকে বিষাদগ্রস্ত করে তোলে। সময়, স্বদেশ, সংগ্রাম
আবুল হাসানের মনের গভীরে যেমন কম্পন সৃষ্টি করেছিল, একইভাবে ঢেউ তুলেছিল দুঃখ-বেদনা,
নেতি-নৈরাজ্য, সংশয়, আত্মক্লেশ আর আশাহীনতাও। হাসান এইসব ক্লেশ ও ক্লেদকে ধারণ করে
হয়ে উঠেছিলেন আধুনিকতার ঋদ্ধ ঋষি। এসবই কবির
অন্তর্গত বোধ ও উপলব্ধিতে কখনো যুগিয়েছে আনন্দ ও সুখ, কখনো বা অপার বেদনা। কবি আবুল
হাসান এমন একসময়ের কবি যখন বাংলা কবিতায় নগরজীবনের নানা দিকের উন্মেষ ঘটে চলেছে। এই
সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও ছিল চরম উত্তাল। এই সময়কার কবিদের মধ্যে বিশেষ করে শামসুর
রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, ইমামুর রশীদ, শহীদ কাদরী, আবদুল মান্নান সৈয়দ, সিকদার
আমিনুল হক, রফিক আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ, সাযযাদ কাদির প্রমুখ কবির কবিতায় অন্তর্গত
ক্ষরণ ও রাজনীতির প্রত্যক্ষ উপস্থিতির সুস্পষ্ট ছাপ পরিলক্ষিত হয়।
মাত্র ঊনত্রিশ বছর বেঁচে ছিলেন হাসান।
কিন্তু এই স্বল্পজীবন পরিসরে রচিত অসংখ্য কবিতায় তাঁর শাণিত বোধ, আবেগ ও প্রজ্ঞার তীব্র
সমন্বয় ঘটেছিল। আবুল হাসানের অধিকাংশ কবিতা
বাহ্যিক ও অন্তর্গত জীবনের টানাপোড়েন ও দ্বন্দ্বের প্রত্যক্ষ সংশ্লেষে অনবদ্য। এতে
সার্থকভাবে ফুটে উঠেছে প্রেম বিরহ রাজনীতি শোষণ বঞ্চনা তথা সমাজের যাবতীয় বিষয়-আশয়।
অন্যায় অত্যাচার নিপীড়ন বৈষম্য হতাশা অভাব অনটন নৈরাজ্য ইত্যাদি সমস্ত কিছুর সমন্বিত
রূপ হাসানের কবিতা। প্রকৃতপক্ষে, তাঁর কবিতা জীবন ও সমাজের বিশাল ক্যানভাসের প্রতিচ্ছবি। ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ ও যন্ত্রণার
উপস্থাপন তিনি এমনভাবে করেছেন যা চুড়ান্ত পর্যায়ে নৈর্ব্যক্তিক ও সর্বজনীন রূপ লাভ
করেছে।
১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপারার
বর্নি গ্রামে নানার বাড়িতে কবি আবুল হাসান জন্মগ্রহণ করেন। আবুল হাসানের ডাকনাম ছিল
‘টুকু’। প্রত্যেকটি মানুষেরই মনোভূমি গঠনে তাঁর পরিবেশ-প্রতিবেশ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার
অভিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। কবি হাসান তাঁর মাতৃ ও পিতৃ দুকূলেরই
শিক্ষা-সংস্কৃতি-সুরুচির উজ্জ্বল উত্তরাধিকার লাভ করেছিলেন। উচ্চশিক্ষিত সংস্কৃতিবান
মার্জিত রুচির আত্মীয়দের অপত্য স্নেহ ও আদর, প্রগতিশীল চিন্তার আবহ ও উদারনৈতিক সান্নিধ্য
আবুল হাসানের অগ্রসর মানস নির্মাণে বিশেষ ভুমিকা পালন করেছিল। এভাবেই তাঁর সামাজিক
ভাবনা, রাজনৈতিক চিন্তা, জ্ঞানপিপাসু মানসিকতা ও শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ভাবনা গড়ে
ওঠে। হিন্দু-মুসলিম অধ্যুষিত গোপালগঞ্জের বিস্তীর্ণ জনপদ, মধুমতি নদী, শ্যামল-সবুজ
চর, পাখা-পাখালির অবাধ বিচরণ, সাঁই বাবার সানাই – এরকম অনেক কিছু তাঁর কবিমানস গড়ে
তুলতে সাহায্য করেছিল। সারাবছর ধরে সেসব গ্রামে চলতো পালা-পার্বণ, মেলা, যাত্রাগান,
জারীগান, কবিগান, নাটক, কীর্তনের আসর। তাঁর আদর্শ শিক্ষাগুরু ছিলেন স্থানীয় স্কুলের
প্রধান শিক্ষক রুস্তম আলী মোল্লা। এরপর বাবার চাকরির সুবাদে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। আরমানিটোলা স্কুলে পড়ালেখার সময় থেকেই আবুল হাসান
নিয়মিত কবিতা লিখতে শুরু করেন।
আবৃত্তি, অভিনয়, কবিতা লেখা, গান শোনা,
কোরআন পাঠের মাধ্যমে সে-সময়েই তিনি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। যৌবনের প্রথম ঋতুতেই
তিনি জীবনানন্দের বরিশালে গিয়ে হাজির হন। তখনই তার পরিচয় ঘটে ষাটের তরুণ কবি-লেখক হুমায়ুন
কবির, শশাংক পাল, মাহফুজুল হক খান, আবুল হাসনাত প্রমুখের সঙ্গে। বরিশাল ও ঢাকার নানা
কাগজে তাঁর অনেক কবিতা প্রকাশ পেতে থাকে। এই সময়েই সময় তিনি বরিশালের মেয়ে সুলতানা
রাজিয়া খোন্দকারকে ভালোবেসে ফেলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ব্রজমোহন মহাবিদ্যালয় থেকে যশোর
শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দ্বিতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।
১৯৬৫ সালে আবুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হলেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার্জন সম্পন্ন করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভর্তি হয়েই হাসান সাহিত্যচর্চায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করেছিলেন। এই সময়টিতে তিনি ঢাকার
তরুণ কবিদের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্যে আসেন এবং আস্তে আস্তে পদার্পণ করেন ‘উদ্বাস্তু-উন্মুল’
যৌবনে। পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেলে আবুল হাসান অর্থের প্রয়োজনে পত্রিকায় চাকরি নেওয়ার
কথা ভাবতে থাকেন।
১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা পৌঁছেন।
পরবর্তী্তে ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পিজি হাসপাতালে ভর্তি
হন। অবশেষে মাত্র ২৯ বছর বয়সে পিজি হাসপাতালে ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর এই পৃথিবীর মায়া
ছেড়ে চলে যান।
তাঁর জীবনীকাররা বলছেন, আবুল হাসান ১৯৭০
সালে এশীয় কবিতা প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। ঐ একই সালে ভারতের কলকাতা থেকে সমগ্র পৃথিবীর
প্রতিনিধিত্বশীল কবিদের প্রকাশিত সংকলন ‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থে তাঁর লেখা
‘শিকারী লোকটা’ স্থান পায়।
১৯৭২ সালে ‘রাজা যায় রাজা আসে’ কাব্যগ্রন্থটি
প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথেই আবুল হাসানের কবিখ্যাতি
ছড়িয়ে পড়ে। এরপর অসুস্থ অবস্থাতেই ১৯৭৪ সালে তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘যে তুমি হরণ
করো’ প্রকাশিত হয়। হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়েই
তিনি তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘পৃথক পালঙ্ক’র পাণ্ডুলিপি তৈরি করা থেকে প্রুফ দেখা সব কাজই করেছেন। ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত
হয় তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘পৃথক পালঙ্ক’। এরপর ১৯৮৫ সালে তাঁর মৃত্যুর ১০ বছর পর নওরোজ সাহিত্য সংসদ ‘আবুল হাসানের অগ্রন্থিত কবিতা’
প্রকাশ করে। হাসান বেশ কিছু সার্থক ছোটগল্পও রচনা করেছিলেন। ১৯৯০ সালে মৃত্যুর ১৫ বছর
পর প্রকাশিত হয় তাঁর ‘আবুল হাসান গল্প সংগ্রহ’। কবিতা ও গল্প ছাড়াও তিনি জার্মানি থেকে ফিরে এসে ‘কুক্কুরধাম’ নামে একটি বৃহৎ
কাব্য রচনার পরিকল্পনা করেছিলেন। যদিও শারীরিক
অসুস্থতার কারণে তা শেষ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।
জীবদ্দশায় আবুল হাসানের যে তিনটি কাব্যগ্রন্থ
প্রকাশিত হয় তার প্রতিটিই আলাদা বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। কবি হিসেবে আবুল হাসানের বিশিষ্টতা
তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা থেকেই সাক্ষরিত হয়ে যায়। তিনি যে মনে-প্রাণে একজন বাউল ছিলেন
এবং হ্যামলেটের মতো নিঃসঙ্গ দুঃখবোধ ও প্রশ্নাতুর ছিলেন, তা তাঁর ‘প্রশ্ন’ কবিতায় দেখতে
পাই।
চোখ
ভোরে যে দেখতে চাও
রঞ্জন
রস্মিটা চেনো তো?
বুক
ভোরে যে শ্বাস নিতে চাও
জানো
তো অক্সিজেনের পরিমানটা কত?
এতো
যে কাছে আসতে চাও
কতটুকু
সংযম আছে তোমার?
এতো
যে ভালোবাসতে চাও
তাঁর
কতটুকু উত্তাপ সইতে পারবে?
হাসানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ রাজা যায়
রাজা আসে। এই কাব্যগ্রন্থটি শিল্পঋদ্ধিতে অনন্য ও তাঁর নিটোল গাঁথুনির জন্য অতুলনীয়।
আবুল হাসানের এসব কবিতা আমাদের এমনই অভিভূত করে রাখে যে কবিতা পাঠের সময় তাঁর হৃদয়গ্রাহী
বিবরণ আমাদের মাঝেও একধরনের নিঃসঙ্গতা ও বিষণ্ণতা
এনে দেয়। ‘আবুল হাসান’ নামক কবিতায় নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে রহস্যময়তা সৃষ্টি করেছেন।
তিনি নিজেকে এমন এক পাথরের সাথে তুলনা করেছেন
যা কেবলই লাবণ্য ধরে, যে পাথর উজ্জ্বল অথচ মায়াবী ও করুণ। তাঁর কবিতার প্রতিটি পঙক্তি
পাঠককে ভাবায়, নিয়ে যায় গূঢ় অভিজ্ঞানের রাজ্যে যেখানে দর্শন ও মনস্তাত্ত্বিক দ্বৈরথ
মিশে একাকার হয়ে গেছে। কবিতাটি পড়ে একবার মনে হয় কবি হাসানকে বোধ হয় অনেক জানা হয়ে
গেল, আবার একই সঙ্গে মনে হয় কিছুই জানা গেলো না। এমনই ছিলেন হাসান –
সে
এক পাথর আছে কেবলই লাবণ্য ধরে, উজ্জ্বলতা ধরে আর আর্দ্র, মায়াবী করুণ এটা সেই পাথরের
নাম নাকি? এটা তাই?
এটা কি পাথর নাকি কোন নদী? উপগ্রহ? কোন
রাজা?
পৃথিবীর
তিনভাগ জলের সমান কারো কান্না ভেজা চোখ?
মহাকাশে
ছড়ানো ছয়টি তারা? তীব্র তিমির তমোহর
কী
অর্থ বহন করে এই সব মিলিত অক্ষর?
[রাজা
যায় রাজা আসে]
কবিতার মাধ্যমে মানব মনের আবেগের নিঃসরণ
হয়, তাই হয়ে ওঠে বিষয় ও ব্যক্তির কথন। জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বোধন। কবিতায় দোত্যিত হয় দ্বিতীয়
জীবন, দ্বিতীয় মানুষ ও দ্বিতীয় পৃথিবী। আনন্দ ও যন্ত্রণার মিলনেই কবিতার সৃষ্টি। এই
কারণেই মাত্র একুশ বছর বয়সেই হাসান বলেছিলেন,
‘সব ভালো কবিতাই আমার কবিতা’। কবিতার এই অমোঘ আকর্ষণেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি
বিভাগের ছাত্রত্ব ত্যাগ করে বরণ করে নিয়েছিলেন যন্ত্রণায় দীর্ণ কৌমার্য। এ কারণেই তাঁর
হয়নি সংসারধর্ম, বাণিজ্য। আমৃত্যু কেটেছে দুঃখ, দারিদ্র্য ও অনিশ্চয়তার মাঝে। তবুও
তিনি দুঃখবরণ করেই সাধারণের উদ্দেশে বলেছেন :
বদলে
দাও, তুমি বদলাও
নইলে
এক্ষুনি
ঢুকে
পড়বে পাঁচজন বদমাশ খুনী,
যখন
যেখানে পাবে
মেরে
রেখে যাবে,
তোমার
সংসার, বাঁশী, আঘাটার নাও।
বদলে
যাও, বদলে যাও, কিছুটা বদলাও!
[বদলে
যাও, কিছুটা বদলাও]
তাঁর বন্ধুরা জানিয়েছেন, কবিতা রচনায়
ক্লান্তিহীন ছিলেন হাসান। সাহিত্য সৃষ্টিতে ছিলেন আজন্ম অতৃপ্ত। সাহিত্যের জন্য নিদারুণ
এই পরিশ্রমকে তিনি বলতেন ভালোবাসার পরিশ্রম। কবিকে তাই সিসিফাসের মতো পাথর তোলার কর্ম
সাধনায় অক্লান্ত হতে হয়। তাতে শরীর কোথায় গেলো, সংসার-সংঘ-রাষ্ট্র কথায় গেলো, অর্থ-বিত্ত-বৈভব
এলো কিনা সেসব ভাববে সাধারণ লোকে, কবি নয়। তাই তো কবি হাসানের জানার ইচ্ছে হয়েছিল পণ্যের
বাজারে কি সবকিছুই পণ্য হয়ে যায়? ভাব-অনুভাব-মহানুভবতা, জীবনবোধ কি নগরসভ্যতায় এসে
ইস্পাতের দৃঢ় মোড়কে আটকা পড়বে? বাস্তব-অবাস্তবতার মধ্যে আবেগের সরলতা কি অনুভূতিহীন
হয়ে যাচ্ছে দিনদিন? ‘ব্লেড’ কবিতাতে আমরা তারই চমৎকার শৈল্পিক বিবরণ দেখতে পাই:
লিমিটেড
কোম্পানীর কোকিল স্বভাবা মেয়ে,
তাকে
যদি ডাকি, ওহে ইস্পাতিনী ঘরে আছো
মোড়কের
মায়াবী অন্দর থেকে মুখ লুকায় সে,
বলে,
আরে, এযে সে ইতর নাগর।
হাসানের
কবিতার ভাষা, শব্দ প্রয়োগ, উপমা, অলংকার, গীতিধর্মীতার মধ্যেও যন্ত্রণাদগ্ধ কবির প্রতিচ্ছবি
লক্ষ করি। যদিও এই যন্ত্রণাবিদগ্ধতা কবিকে সামাজিকতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে বরং এই বেদনাবোধ
হাসানের কবিতার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। কখনো প্রেম, দেশপ্রেম, দ্রোহ-বিদ্রোহ ইত্যাদি
আকারে এ বেদনা উদ্ভাসিত।
‘উচ্চারণগুলি শোকের’ এমন একটি কবিতা
যেখানে গভীর মর্মবেদনায় মুক্তিযুদ্ধকালীন অনুষঙ্গ প্রতিভাত হয়েছে। চারপাশ দেখে কবির
মনে উদ্দীপ্ত বেদনার প্রকাশ ঘটেছে এইভাবে:
ছোটো
ভাইটিকে আমি
কোথাও
দেখি না
নরম
নোলক পরা বোনটিকে
আজ
আর কোথাও দেখি না!
কেবল
পতাকা দেখি
কেবল
উৎসব দেখি,
স্বাধীনতা
দেখি,
তবে
কি আমার ভাই আজ
ঐ
স্বাধীন পতাকা?
তবে
কি আমার বোন, তিমিরের বেদীতে উৎসব?
হাসানের যে তুমি হরণ করো কাব্যগ্রন্থটি
আরও উজ্জ্বল। কবিতা ও কবিদের বিষয়ে হাসান একবার বলেছিলেন, “আমাদের বাড়িঘর কিছুই নেই।
আছে কবিতা, গরীব কবিতা আর গরীব ক্ষিধে।” কবিতা বিষয়ে তাঁর উচ্চারণ ছিল রুক্ষ, কর্কশ,
ব্যাঙ্গাত্মক ও হেঁয়ালিপূর্ণ। অর্থ নয়, বিত্ত নয়, প্রতিপত্তি নয়, এমন কি চূড়ান্ত অর্থে
নারীও নয় – কবিতা, শুধু কবিতাই আরাধ্য হয়েছিল হাসানের জীবনে।
কবির কষ্ট নিয়ে তিনি আরও বলেছেন:
কবি
যতবার কাঁদে এদেশেও অনাচার মৃত্যু আর রক্তারক্তি বাঁধে
কবির
মৃত্যু নিয়ে আজো দ্যাখো ঐখানে লোফালুফি
ঐ
তো পদ্মায় ওরা কবির ভাসন্ত মরদেহ নিয়ে খেলছে, খেলছে।
[কবির
ভাসমান মৃতদেহ]
অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ,
রাজনীতি-সমাজমনস্কতা, দেশপ্রেম প্রভৃতি তার কবিতাকে করে তুলেছে মহীয়ান। সর্বোপরি তিনি
ছিলেন জীবনের বিশুদ্ধতার পক্ষে। তার স্পষ্ট উচ্চারণ এমনটিই প্রমাণ করে:
প্রিয়তম
পাতাগুলি ঝরে যাবে মনেও রাখবে না
আমি
কে ছিলাম, কী ছিলাম – কেন আমি
সংসারী
না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি
হিরণদাহ, হয়েছি বিজন ব্যথা, হয়েছি আগুন!
হাসানের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ পৃথক পালঙ্কের
কবিতাগুলিও অনন্য। জীবনের অনিবার্য সত্য — কল্পনা ও সৃজনশীলতায়, শিল্প ও সুন্দরের জগতে
অবস্থানের স্পৃহাকে পলায়নপর মনোভাব বলা যায় না। কারণ, কল্পনাও একধরনের বাস্তবতা, অন্তর্গত
বাস্তবতা। হাসান পলায়নবাদী ছিলেন না, কারণ, তিনি শিল্পকে খুঁজেছেন মানুষের মাঝে, প্রেমের
মাঝে:
থাকুক
দুচোখে দুর্ভিক্ষের দাহ,
করুক
আবার আন্ধার আঁধিব্যাধি
আমাদের
প্রেম না পেল কবির ভাষা
কাব্যচূড়ায়
আমরা তো বাধি বাসা।
[যুগলসন্ধি]
কবিতার পাণ্ডুলিপির উপর আঁকাআঁকি করা
ছিল হাসানের অভ্যেস। তাঁর কবিতার বিচিত্র চিত্রকল্প, উপমা ও শব্দের ব্যবহারে ছিল জীবনের
উদ্ভাস। তিনি ছিলেন অনন্ত কল্পনাপ্রবণ এবং সূক্ষ্ণ শিল্পবোধসম্পন্ন একজন মানুষ। তাঁর
কবিতার শব্দবিন্যাস, প্রকরণ, কাঠামো, বিষয় নির্বাচন, স্বর ও প্রতীকের অনন্যতা আমাদের
অভিভূত করে। এই কবিতাটির কথা ধরা যাক:
চলে
গেলে - তবু কিছু থাকবে আমার : আমি রেখে যাবো
আমার
একলা ছায়া, হারানো চিবুক, চোখ, আমার নিয়তি।
জল
নেমে গেলে ডাঙা ধরে রাখে খড়কুটো, শালুকের ফুল :
নদীর
প্রবাহপলি, হয়তো জন্মের বীজ, অলঙ্কার - অনড় শামুক!
[অপরূপ
বাগান]
প্রেমের প্রতি মানবীয় যে আদিম আকাঙ্ক্ষা
থাকে, হাসানের কবিতায় তা পরিস্ফুট। হাসান কখনো এঁকেছেন ব্যর্থতার ছবি, কখনো সফলতার।
প্রেমের সঙ্গে সুন্দরের বা কদর্যতার মিশ্রণ বা দ্রোহ আলাদা মাত্রায় উত্তীর্ণ হয়েছে
হাসানের কবিতায়। আর স্বতন্ত্র পথের যাত্রী হিসেবেই তার কণ্ঠস্বর ভিন্নতর ও আলাদা। হাসপাতালে
ভর্তি থাকা অবস্থায়ও একটু সুস্থ বোধ করলেই তিনি লিখেছেন অসাধারণ সব কবিতা। কয়েকটি দৃষ্টান্ত:
(১)
অসুখ
আমার অমৃতের একগুচ্ছ অহঙ্কার!
আত্মার
অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা ক্ষুধিত জানয়ারের
রোমশ
বলশালী শরীরের দুটি সূর্যসমান রক্তচক্ষু
(দুই)
হায়
সুখী মানুষ, তোমরাই শুধু জানলে না অসুখ কত ভালো কত চিরহরিৎ বৃক্ষের মতো শ্যামল
কত
পরোপকারী, কত সুন্দর।
(তিন)
আমি
অসুখে যেতে যেতে এক চক্কর তোমাদের নরকে
সব
সুখি মানুষদের দেখে এলাম – এটাই বা কম কি!
লিখেছেন ‘রোগ শয্যায় বিদেশ থেকে’ বা
‘শাদা পোশাকের সেবিকা’ শিরোনামের অতুলনীয় সব কবিতা।
আবুল হাসানের কিছু নাতিদীর্ঘ কবিতা রয়েছে।
বিষয়বস্তু ও প্রকাশশৈলীর কারণে যা পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। এরকমই এক
অসম্ভব বেদনাবোধের অনুষঙ্গ ‘মোরগ’ কবিতায় লক্ষ করা যায়। রিলকের কথায় একজন কবি জীবনে
মাত্র কয়েকটি বার-বার পড়ার মতো কবিতা লেখেন। আবুল হাসানের এই ‘মোরগ’ কবিতাটি আমি বারবার
পড়েছি আর ভেবেছি জীবনে কতবার মোরগের খুন হওয়ার দৃশ্য দেখেছি, কিন্তু কখনো কী ঘুণাক্ষরেও
ভাবতে পেরেছি এমন একটি কবিতার একটিমাত্র চরণও:
ঘুরে
ঘুরে নাচিতেছে পণ্ডিতের মতো প্রাণে
রৌদ্রের
উঠানে ঐ নাচিতেছে যন্ত্রণার শেষ অভিজ্ঞানে!
পাখা
লাল, শরীর সমস্ত ঢাকা লোহুর কার্পেটে!
মাথা
কেটে পড়ে আছে, যায় যায়, তবুও নর্তক
উদয়শঙ্কর
যেন নাচিতেছে ভারতী মুদ্রায়!
হাসানের কবিতা শিল্পবোধ আর মানবজীবনের সূক্ষ্ণতম অনুভূতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। এভাবে জড়িয়ে থাকার কারণেই হাসানের কবিতা লাভ করেছে ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা। কবিতা জীবনবিচ্ছন্ন কোনো ব্যাপার নয়, আধুনিক জীবনযন্ত্রণা এতে প্রতিফলিত হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। শিল্পের কাছে জীবনের তো এরকমই প্রত্যাশা থাকে। এই যে অনুভব, এই যে জীবনের কথা, তারই সফল বাস্তবায়ন আমরা লক্ষ করি তাঁর ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ কবিতাটিতে:
ঝিনুক
নীরবে সহো
ঝিনুক
নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও
ভিতরে
বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও।
জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি এমন বেশকিছু
কবিতা গ্রন্থিত হয়েছে হাসানের ‘অগ্রন্থিত কবিতা’য়। কবি হাসান ছিলেন প্রকৃতপক্ষেই একজন
বোহেমিয়ান ও উদ্বাস্তু মানুষ। রোগ-শোক, নিঃসঙ্গতা আর সন্তের মাধুর্য মিলে-মিশে ছিল
তাঁর জীবনে। এই নিয়ে তার উচ্চারণ:
স্পেনীয়
কবির মতো নয়, কতদূর ঘোড়সওয়ার
করডোভা
নগরী জেনে কাজ নেই। তার চেয়ে ঋত্বিকের
তিতাসের
বালুর ভিতর জল, মিত সভ্যতার জল, মাছের
জালের
জল খুঁড়ে তুলতে হবে শব্দকে। এবং দেখতে হবে
একটি
বেদের শিশুর অবুঝ হিল্লোলে ধানক্ষেতে নাচতে
নাচতে
ভেঁপুর বাজনায় যেন হাস্যমুখী স্বর্গ হয়ে যায়।
(কবিতা)
প্রেম কবিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনা
হিসেবে কাজ করে কবির মনে। প্রেম এমন এক চিরঞ্জীব শক্তি যা কবিকে দেয় অপার অনুপ্রেরণা,
যদিও তা হতে পারে কখনো আনন্দ ও আশা সঞ্চালনকারী, কখনো-বা বেদনার নানা রঙে বহুবর্ণিল।
কবিতায় হাসান লিখছেন:
যতো
আনো ও-আঙুলে অবৈধ ইশারা
যতো
না জাগাও তুমি ফুলের সুরভী
আঁচলে
আগলা করো কোমলতা, অন্ধকার
মাটি
থেকে মৌনতার ময়ূর নাচাও কোন
আমি
ফিরব না আর, আমি কোনদিন
কারো
প্রেমিক হবো না
প্রেমিকের
প্রতিদ্বন্দ্বী চাই আজ
আমি
সব প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হবো।
[প্রেমিকের
প্রতিদ্বন্দ্বী]
ব্যাঞ্জনাময় বাক্য ও স্বর হাসানের কবিতায়
স্বতঃস্ফুর্তভাবে উদ্ভাসিত। কবি হিসেবে মৌলিক হয়ে উঠবার দিকেই সবসময়ই ঝোঁক ছিল তাঁর।
সে
কবে কখন বোলো সোনার পিণ্ডের মতো
মূল্যবান
মুহূর্তগুলো ছুঁড়ে দিয়ে
শয়তানের
ধাঙর তালুতে বাজাব অশ্লীল তালি?
বোলো
হে কখন ধ্যানের মতো চিররীতি সাজুজ্যের দায়ে
মৃত্যুর
লোবান শুঁকে মরে যাবো ফসিল সত্তায়?
‘শিল্প তো স্বাতীর বুকে মানবিক হৃৎপিণ্ড’
- এখানে প্রেম ও মানবতাকে কবি সমীকৃত করেছেন।
মানুষের একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতা ও মৃত্যুচেতনা
হাসানের কবিতার প্রধান প্রধান অনুষঙ্গ। আশা-নিরাশা, মৃত্যুচিন্তার কথা তাই বারবার বিষয়
হয়ে উঠেছে তার কবিতায়:
মৃত্যু
আমাকে নেবে, জাতিসংঘ আমাকে নেবে না।
আমি
তাই নিরপেক্ষ মানুষের কাছে, কবিদের সুধী সমাবেশে
আমার
মৃত্যুর আগে বলে যেতে চাই
সুধীবৃন্দ
ক্ষান্ত হোন
[জন্ম
মৃত্যু জীবোনযাপন]
কিম্বা
দুঃখের
এক ইঞ্চি জমিও আমি অনাবাদী রাখবো না আর আমার ভেতর
[কালো কৃষকের গান]
তবে কেবলি হতাশার কবি ছিলেন না হাসান।
মাঝে মাঝে তাঁকে আশাবাদীও হতে দেখি - “সেখানে বুনবো আমি তিন সারি শুভ হাসি, ধৃতি পঞ্চইন্দ্রিয়ের
/ সাক্ষাৎ আনন্দময়ী একগুচ্ছ নারী…/ ও জল ও বৃক্ষ ও রক্তপাত, রাজনীতি ও নিভৃতি, হরিৎ
নিভৃতি। এইরকম বহু কবিতার পংক্তিতে তিনি লিখে গেছেন তাঁর স্বল্প আয়ুষ্কাল আর জীবনের
কথা।
হাসানের মধ্যে ছিল আধুনিক মানুষের স্মৃতিমুগ্ধতা
ও আত্মমুখিনতার নানা প্রবণতা। তিনি ছিলেন হার্দিক রক্তক্ষরণের রূপকার। বয়সের সীমানা
ছাড়িয়ে নিজের সম্পর্কে তাই এভাবেই বলেতে পেরেছেন:
গোলাপের
নীচে নিহত হে কবি কিশোর আমিও ভবঘুরেদের প্রধান ছিলাম।
জোৎস্নায়
ফেরা জাগুয়ার চাঁদ দাঁতে ফালা ফালা করেছে আমারও
প্রেমিক
হৃদয়!
আমিও
আমার প্রেমহীনতায় গণিকার কাছে ক্লান্তি
সঁপেছি
বাঘিনীর
মুখে চুমু খেয়ে আমি বলেছি আমাকে উদ্ধার দাও!
সক্রেটিসের
হেমলক আমি মাথার খুলিতে ঢেলে তবে পান করেছি মৃত্যু
হে
কবি কিশোর।
[গোলাপের
নীচে নিহত যে কবি কিশোর]
নান্দনিক দিক থেকেও হাসানের কবিতা ভাস্মর। “প্রতীক উপমা, চিত্রকল্প আর অলংকার ছাড়া লেখকের সৃষ্টিজগতে আত্মপ্রকাশের আর কোনো পথ নেই এবং সেখানে পাঠকের উপলব্ধি সেতু সৃষ্টি করে এক অজানা তীরের সঙ্গে – বলেছিলেন প্রখ্যাত মনোসমীক্ষক কার্ল গুস্তাভ য়ুং। কবিতাকে, মনে হয় এই আপ্তবাক্যের প্ররোচনায় নান্দনিকতায় অভিনব কিন্তু উজ্জ্বল করে তুলেছিলেন কবি আবুল হাসান। তিনি নানা রঙের উজ্জ্বল বর্ণ দিয়ে কোমল, কঠিন সিক্তরসে চিত্রকল্প তৈরি করেছেন। হাসানের খুব কঠিন বা কষ্টের বিবরণেও আছে সানাইয়ের সুরের কোমলতা, বিষাদ, যা পাঠকের শ্রুতি ও মননকে স্নিগ্ধ করে তোলে।
আবুল হাসান গত হয়েছেন বহুদিন, তবু আজও
তাঁর বাজানো সানাইয়ের সুর শুনতে পাই আমাদের হৃদয় মন্দিরের একতারায়। তিনি ছিলেন পূর্বাহ্ণে
ফোঁটা অপরাহ্ণের এমনই এক ফুলকলি, যা পরিপূর্ণ পরিস্ফুটনের আগেই ঝরে গেছে। তাঁর এই অকাল
বিদায় আমাদের চিরকালই অভিভূত ও বিষণ্ণ করে রাখবে। আমরা বারবার স্নাত হবো তাঁর কাব্যসলিলে
আর মনে পড়বে সুকান্তর মতোই, তবে ভিন্ন আরেক আধুনিক কবির কথা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন