শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শিবাংশু দে

 

অর্ধসত্যে কামাচ্ছন্ন হে সুন্দর - ২       



  


তুঙ্গভদ্রার তীরে

বিট্ঠল মন্দির ও কৃষ্ণবাজার এলাকাটি বিরূপাক্ষ মন্দির থেকে উত্তর-পূর্বে তিন কিমি মতো। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের স্বীকৃত কেন্দ্র ছিলো এই অনুপম নির্মাণটি। পনেরো শতকের প্রথম দিক থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কখনও তৈরি হওয়া শুরু  হয়েছিলো তার। সম্ভবত দ্বিতীয় দেবরায় থেকে শুরু করে কৃষ্ণদেবরায়, অচ্যুতরায় এবং সদাশিবরায়ের রাজত্ব পর্যন্ত নির্মাণ জারি ছিলো। ১৫৬৫ সালে ধ্বংস হয়ে যাওয়া পর্যন্ত তার সৌন্দর্যীকরণ সমানে চলেছে। মন্দিরে পাওয়া নানা শিলালিপি থেকে বহু পুরুষ ও মহিলা দাতাদের নাম জানা যায়। অর্থাৎ একটা সামগ্রিক যোগদান ছিলো এর নির্মাণে। মন্দির পরিসরটি পূর্বমুখী। প্রধান দ্বার বা গোপুরমটি ছাড়া আরও দুটি গোপুরম আছে দুই পাশে। প্রধান মন্দির বা মহামণ্ডপটি রয়েছে কেন্দ্র স্থলে। বাকি মণ্ডপ ও দেবালয়গুলিও পূর্বমুখী। সমগ্র পরিসরটি ৫০০x৩০০ ফিট মাপের। মন্দিরগুলির গড় উচ্চতা পঁচিশ ফিট।

মন্দির পরিসরের বাইরে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত জুড়ে রয়েছে টানা বিপণীর সারি। প্রায় এক কিমি দীর্ঘ পাথরের সারবাঁধা স্তম্ভগুলি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। সারা এলাকাটি মানুষের কাছে 'বিট্ঠলপুরা' নামে পরিচিত। এখানে আলওয়র পরম্পরার একটি বৈষ্ণব মঠ ও তীর্থ ছিলো। উত্তর দিকের পথটিতে রামানুজ স্বামীর নামাঙ্কিত একটি মন্দিরও রয়েছে।

হাম্পি শহরের উত্তর সীমা জুড়ে তুঙ্গভদ্রা নদী । নদী পেরোলে আনেগোন্ডি, অঞ্জনাদ্রি পাহাড়, কিংবদন্তির কিস্কিন্ধ্যা। সচরাচর বিট্ঠল মন্দিরটি হাম্পিতে দর্শকদের শেষ দ্রষ্টব্য থাকে। এই মন্দিরটি কৃষ্ণদেবরায়ের শেষ কীর্তি এবং হাম্পির মতো পুরাতাত্ত্বিক সোনার খনিরও সেরা সম্পদ, মুকুটমণি। উত্তর কর্ণাটক, মধ্য ও পশ্চিম অন্ধ্র এবং দক্ষিণ মারাঠাওয়াড়ার ভূমিগত বিন্যাসে বিপুল মাপের নানা আকারের  প্রাকৃত সৌন্দর্যময় পাথরের প্রাচুর্য চোখে পড়ে। সেগুলির মধ্যে কিছু বালিপাথর আর পরিমাণে সংখ্যাগুরু গ্র্যানাইট গোষ্ঠীর পাথর। হাম্পি শহরের অন্যান্য দর্শনীয় দিকচিহ্নগুলির প্রতি যথাসাধ্য সময়ের পরিসর রেখেও বিট্ঠল মন্দিরের জন্য  অন্ততঃ চার-পাঁচ ঘন্টা বরাদ্দ রাখতে হয়। বাহন-আড্ডা  থেকে মন্দির বেশ খানিকটা পথ, চড়াই পথ ধরে উপরের দিকে এগিয়ে যাওয়া। সেখানে পর্যটন দফতর থেকে খোলা সফরি গাড়ির ব্যবস্থা করা আছে। এই গাড়িগুলি বৈদ্যুতিক ব্যাটারিতে  চলে। পথশ্রম থেকে সময় সাশ্রয়ই এই বাহনগুলিতে চড়ার প্রধান কারণ, নয়তো হেঁটে যেতেই ভালো লাগে।

অল্প চড়াই। দুধারে বিশাল বর্তুল মসৃণ পাথরের সাজানো সরণী। মাঝেমধ্যে কিছু প্রত্ন অবশেষ। কোথাও সবুজ, কোথাও একটু জল। গাড়ি এসে দাঁড়ায় একটি সমতল বাঁধানো গাড়ি আড্ডায়। এখান থেকে হেঁটে যেতে হবে। সামনের দিকে চাইতেই একটি প্রায় আকাশছোঁয়া গোপুরম চোখে পড়লো, যার শিখর অংশটি প্রায় ধ্বস্ত। তবু রাজকীয় তার গরিমা। এগিয়ে যাওয়া, পূর্ব গোপুরটির দিকে। এটাই প্রধান প্রবেশপথ। নীচের অংশটি চিরাচরিত দক্ষিণী পাথরের ভাস্কর্য, কিন্তু শিখরের অংশটি পোড়া ইঁটের গাঁথনি দিয়ে নির্মিত হয়েছিলো। সম্ভবত কম সময়ে কাজ সাঙ্গ করার তাড়ায়। সেই অনুপম ভাস্কর্যগুলি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিলো তালিকোটার যুদ্ধে পরাজয়ের পর। তার চিহ্ন সারা শিখর জুড়ে। গোপুর পেরিয়ে ভিতরের চত্বরে পা দিলেই যেটা চোখে পড়ে, সমগ্র নির্মাণটির জ্যামিতিক ছন্দ। চারদিকে ছড়িয়ে থাকা নানা মন্দির, মণ্ডপ, কারুকাজ একসঙ্গে আকর্ষণ করতে থাকে চুম্বকের মতো।



এই যেমন বিট্ঠল মন্দিরে যখন যাই। একটি গোপুরম পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলেই চোখ চমকে ওঠে প্রথমে। তারপর সেই উজ্জ্বলউদ্ধার ছড়িয়ে যায় মনে, মস্তিষ্কে। অবাক হয়ে দেখি তার স্থাপত্যের জ্যামিতিক জাদু। অভাবনীয় শিল্প আর সমৃদ্ধি। হৃদয়খোঁড়া বিশাল গোপুরমগুলি। যারা শেষ হয়ে গিয়েছিলো দুর্বৃত্তদের মশালের লেলিহান শিখায়। একটাই সৌভাগ্য এই চত্বরে কেউ কামান দাগেনি শেষপর্যন্ত। নয়তো এই সৌন্দর্যও অধরা থেকে যেতো আমাদের। মূল নির্মাণগুলি - মহামণ্ডপ, কল্যাণমণ্ডপ, রঙ্গমণ্ডপ, দেবীমন্দির ও গরুড়রথ।

 

ইতরের দেবতা

দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতবর্ষের একটা বিস্তীর্ণ ভূভাগে ইতরযানী সমাজের এক লোকদেবতা ছিলেন। মহারাষ্ট্র, গোমন্তক, কর্ণাটক, অন্ধ্র, এমনকি তামিলদেশ পর্যন্ত ছড়ানো ছিলো তাঁর রাজপাট। তিনি ছিলেন অন্ত্যজের দেবতা। প্রথমে তাঁর পুজো হতো এক খন্ড কালোপাথরকে ইষ্ট ভেবে। পরবর্তীকালে রূপ বদলালো। কিন্তু সে রূপ একজন রাখাল বালকের প্রতীক। দু'টি হাত কোমরে দিয়ে সে যেন গরুবাছুর চরাচ্ছে। গ্যালিলি পর্বতের অপরপারে যেন সেই মায়াবী রাখাল। খ্রাইস্ট ইজ মাই শেফার্ড। আদিম পশুপালক কৌম সমাজের  রাজা হবার যে স্বপ্ন আর লড়াই সারা বিশ্ব জুড়ে চোখে পড়ে, তারই আরেকটা নিদর্শন। নানা নাম পেয়েছেন তিনি কালান্তরে, বিঠোবা, পাণ্ডোবা, বিট্ঠল, পাণ্ডুরঙ্গ। মহারাষ্ট্রের ইতরযানী জনজাতি, ওয়রকরি সম্প্রদায় অথবা কর্ণাটকের হরিদাস গোষ্ঠী। তাঁদের দেবতা এই বিট্ঠল। তিনি ব্রাহ্মণ্য প্যান্থিয়নের কুলীন দেবতাদের কেউ ন'ন। ইতর শ্রমজীবী মানুষজনের সান্ত্বনার আশ্রয়। মহারাষ্ট্রের পন্ধারপুরে তাঁর মূল মন্দির। কিন্তু এই দেবতার ইতিহাস এখানেই থেমে থাকে না।  

কিংবদন্তি ছাড়া দেবতার জন্ম হয় না। বিট্ঠলেরও গপ্পো আছে। সব কিংবদন্তির মতো ধর্ম ও রাজনীতির ভারসাম্য সামলে মানুষের মুখে মুখে তৈরি হওয়া গপ্পো। আমাদের অর্বাচীন পুরাণ, স্কন্দ ও পদ্ম, দু'টিতেই বিট্ঠল বা বিঠোবাকে নিয়ে গপ্পোকথা রয়েছে বিস্তর। বিট্ঠল উপকথা সৃষ্টি হয়েছে পুণ্ডলিক (পুণ্ডরীক) নামে এক ভক্তকবিকে কেন্দ্র করে। স্কন্দপুরাণে বলা হচ্ছে, সাধু পুণ্ডলিক ছিলেন অত্যন্ত পিতৃমাতৃভক্ত। একবার গোবর্ধন থেকে কৃষ্ণ 'গোপাল' বেশে পুণ্ডলিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। গোপালের সেই শিখীপাখা চূড়া, পাচনবাড়ি, গরুর পাল, মকরকুণ্ডল আর শ্রীবৎস চিণ্হ দেখে পুণ্ডলিক তাঁকে চিনতে  পারেন। তখন ভক্ত তাঁর ভগবানকে অনুরোধ করেন ভীমানদীর তীরে তিনি যেন অবস্থান করেন। তাহলে সেই স্থান একসঙ্গে 'তীর্থ' ( মানে জলাশয়ের সমীপে পুণ্যস্থান) ও 'ক্ষেত্র' (মানে পবিত্র ভূখণ্ড) দুয়েরই স্বীকৃতি পাবে। কৃষ্ণ সম্মত হলেন এবং সেই ভীমানদীর পারে অবস্থিত হলেন 'বিট্ঠল' বা 'বিঠোবা' রূপে। সেই স্থানটির নাম আজ পন্ধারপুর।    

অন্য মতে যে গপ্পোটি, সেটি আরো ইন্টারেস্টিং। এটি পদ্মপুরাণে পাওয়া যায়।  পুণ্ডলিক প্রথমে ছিলেন অত্যন্ত পত্নীপ্রাণ (পড়ুন, কামপরবশ স্ত্রৈণ। তুলসিদাস-রত্নাবলীর গপ্পো মনে পড়ে কি?) এইজন্য তিনি প্রবীণ অসুস্থ পিতামাতাকে অবহেলা করতেন (চিরকালীন ভারতবর্ষের তত্ত্ব, বৌমুখো ছেলে বাবা-মা'কে দেখে না)। এইখানে কুক্কুট মুনির প্রবেশ। এই মুনি পুণ্ডলিককে কী মন্ত্র দিলেন জানা নেই, কিন্তু পুণ্ডলিক পলকে পিতামাতা-অন্ত প্রাণ হয়ে গেলেন। পন্ধারপুরে যখন এসব ঘটনা চলেছে, তখন দ্বারকায় রাধাদেবী গেটক্র্যাশ করে সরাসরি কৃষ্ণের দরবারে এসে হাজির। বলা নেই কওয়া নেই, তিনি রাজসভায় গিয়ে কৃষ্ণের অঙ্ক অধিকার করে বসে পড়লেন। আর নড়েন চড়েন না। কৃষ্ণ তাঁকে কোলচ্যুত করার কোনও চেষ্টাও করেন না। তাঁর চিরাচরিত স্বভাব। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণের বিয়ে করা পাটরাণী স্বয়ং রুক্মিণী (প্রসঙ্গতঃ লর্ড কৃষ্ণের বিয়ে করা মোট ওয়াইফের সংখ্যা ১৬১০৮)। রাধার তাতেও কোনও হেলদোল নেই। এ হেন অপমানে গোসা করে রুক্মিণী দ্বারকা ছেড়ে বহুদূরে পন্ধারপুরের কাছে দন্ডীবনে এসে অধিষ্ঠান করলেন। এসব দেখে কৃষ্ণেরও খোঁয়ারিও একটু ভাঙলো। তিনি ব্যস্ত হয়ে পট্টমহিষীকে খুঁজতে বের হলেন। শেষে  দণ্ডীবনে এসে পৌঁছোলেন তিনি। সেখানে পুণ্ডলিকের বাড়ির কাছে রুক্মিণীকে খুঁজে পেয়ে দ্বারকারাজ পুলকিত। প্রচুর সাধ্যসাধনা করে কনহাইয়াজি বৌয়ের গোসা ভাঙলেন।  কিন্তু বৌ'কে নিয়ে দ্বারকা ফিরে গেলে তো ফের অশান্তি। রাধা তখনও দ্বারকায় পুরো রোয়াবে মজুদ। রাধারমণ নিরুপায় হয়ে ভক্তের শরণ নিলেন। ভক্ত পুণ্ডলিক বাড়ির বাইরে একটা ইঁট পেতে প্রভুকে বললেন, ঠাকুর, এই ইঁটের উপর তুমি বিরাজিত হও। সস্ত্রীক বিট্ঠলরূপে ভীমানদীতটে পুণ্ডরীকপুরে (পরবর্তীকালের পন্ধারপুর) অধিষ্ঠান করো। এখন থেকে ভক্তজন যুগলে বিট্ঠল-রুখুমাই বিগ্রহ বানিয়ে পুজোআচ্চা করবে। ঠাকুর রাজি হলেন। পুণ্ডলিক ছিলেন বিষ্ণুপূজক ব্রাহ্মণ। তাই নতুন ব্যবস্থায় ইতরজনের দেবতা বিট্ঠল, ব্রাহ্মণ্য দেবকূলে বিষ্ণুর নবরূপ গ্রহণ করে একটা স্থায়ী জায়গাও করে নিলেন। ইতিহাস বলছে পুণ্ডলিক নামের এই ভক্ত তেরো শতকে হোয়সলরাজ সোমেশ্বরের দাক্ষিণ্যে পন্ধারপুরের এই মন্দিরটি ও তীর্থক্ষেত্রটির পত্তন করেছিলেন। কন্নড় সন্ত পুণ্ডলিক ছিলেন ওয়রকরি বিট্ঠলপূজক সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রচারক। যদিও ষষ্ঠ শতকেই রাষ্ট্রকূটদের তাম্রশাসনে বিঠোবা কাল্টের উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু তা ছিলো পুণ্ডলিকের বিট্ঠল চেতনা থেকে পৃথক তত্ত্ব।

এভাবে  পশুপালক আহির-যাদবদের লৌকিক দেবতা আকৃতিহীন বিঠোবা দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতে প্রবল লোকপ্রিয়তা পেয়ে গেলেন। গণভিত্তির দৌলতে অভিজাতমনস্ক সনাতন বিষ্ণুপূজক ব্রাহ্মণ্য মেনস্ট্রিমেও যোগ দিলেন। আগেই লিখেছি, এই দেবতার উল্লেখ পঞ্চম-ষষ্ঠ শতক থেকে নানা দস্তাবেজে পাওয়া যায়। কিন্তু তাঁকে মূলস্রোতের ধর্মে জুড়ে ফেলার কৌশলটা সম্ভবতঃ ছিলো দশম শতকে আদি শঙ্করের। আমরা দেখেছি এই ভাবেই নীলাচলে নিষাদের দেবতা জগন্নাথকে বিষ্ণুর বাঁধনে ধরে ফেলেছিলেন তিনি। শঙ্করের নামে 'পাণ্ডুরঙ্গস্তোত্র' বলে একটি বিট্ঠল পূজামন্ত্রও প্রচলিত আছে। বিষ্ণুরূপ নেবার আগে বিট্ঠলের ক্রমবিকাশ হয়েছিলো শিব, বুদ্ধ ও জৈন তীর্থংকরের রূপে। বাবাসাহেব আম্বেদকর পন্ধারপুর মন্দিরের বিট্ঠলের মূর্তিটিকে বুদ্ধের মূর্তি বলে উল্লেখ করেছিলেন। রামকৃষ্ণ ভান্ডারকর অবশ্য বলেন বিঠোবা কন্নড় ভাষায় বিষ্ণুবাবার অপভ্রংশ। বস্তুতঃ প্রথমপর্বে পন্ধারপুর ছিলো শৈব তীর্থ। শৈব ব্রাহ্মণ পুণ্ডলিক ক্রমে বিষ্ণুর অনুগত হয়ে পড়ায় বিট্ঠলও 'হর'রূপ থেকে 'হরি'রূপে পরিবর্তিত হয়ে যা'ন। বিট্ঠলের মুকুটে লিঙ্গরূপে শিব অবস্থান করেন। অবশ্য এই 'হর'রূপেরও আগে তিনি বুদ্ধরূপে বা জৈনদেবতারূপে বিরাজমান ছিলেন।  তার সাক্ষ্যও রয়েছে নানা পুথিতে। এমন কি লোককথা অনুযায়ী 'অস্পৃশ্য' মাহার সম্প্রদায়ের মানুষই বিট্ঠলের প্রধান উপাসক ছিলেন এককালে। এ প্রসঙ্গে সর্বজনগ্রাহ্য তথ্য হলো, বিট্ঠল বা বিঠোবা ইতর কৌমসমাজের লোকদেবতা। তাঁর আর্যায়ন হয়েছিলো ব্রাহ্মণ্যধর্মের নিজস্ব প্রয়োজনে।

প্রাথমিক গৌরচন্দ্রিকা পর্বে আবার ফিরে আসি। দেবতা বিট্ঠলের প্রতি ভক্তি বোধ করি না অবশ্যই। কিন্তু আগ্রহ রয়েছে বিট্ঠল নামের সেই প্রেরণাটির প্রতি। যাঁকে ইষ্ট ভেবে মধ্যযুগে সন্ত নামদেব, সন্ত একনাথ, সন্ত তুকারাম, সন্ত জনাবাই, সন্ত জ্ঞানেশ্বর প্রমুখ শূদ্র, অন্ত্যজকুলে জাত সেরা ভারতসন্তানরা সারাদেশে সমতা ও প্রেমধর্মের প্রচার করেছিলেন। বিট্ঠলের 'মন্দির' ব্রাহ্মণরা দখল করে নিলেও এই সব মনস্বী বিট্ঠল বা বিঠোবা নামক প্রতীকটিকে আলাদা রাখতে চেয়েছিলেন।  ব্রাহ্মণ্য ছুঁতমার্গী লোকাচারকেন্দ্রিক বিগ্রহের বাইরে একটি ইতরযানী বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বিট্ঠল তাই এক সমন্বয়ের দেবতা। ঠিক 'ভারতবর্ষ' নামক দেশটির মতোই। বিট্ঠল দেবতা দিয়েছেন 'অভঙ্গ' নামে মরাঠি বা কন্নড় ভক্তিগীতির একটি রম্য স্রোত। দিয়েছেন বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য কীর্তি রাজধানী হাম্পিতে বিজয়বিট্ঠলকে উৎসর্গ করা একটি মন্দির। এই মন্দিরের কথা বলবো বলেই এই দীর্ঘ 'শিবের গীত'।

 

''তুলসিমালেয়া হাকুভুডাক্কে আরসনাগি নাচুতিদ্দে

সরসিজাক্ষ পুরন্দর বিট্ঠলনু তুলসিমালে হাকিসিদানু...'' (পুরন্দরদাস বিট্ঠল)

 

 (ক্রমশ) 


২টি মন্তব্য:

  1. অত্যন্ত সুলিখিত! ভ্রমণ কাহিনী শুধু দেখাতে সীমাবদ্ধ থাকলে চলে না, তাকে হতে হয় এইরকম, চলার পথে ছুঁয়ে যেতে হয় ইতিহাস পুরাণ লোকগাথা। ছুঁইয়ে দিতে হয় আপন মনের মাধুরীও। তবেই ভ্রমণদেবতার আশির্বাদ নামে ভ্রমণকারীর মস্তকে। সার্থক লেখাটির জন্য লেখককে অভিনন্দন!

    উত্তরমুছুন