বিজ্ঞাপনের ইতিহাস (২)
টেলিভিশন ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির আগে সীমিত সংখ্যক প্রিন্ট মিডিয়া বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজটি করত। তারও আগে, যখন প্রিন্ট মিডিয়ার অস্তিত্বও ছিল না, বিজ্ঞাপন প্রচার হতো নানান জায়গায় - বাজারে, জনতার ভিড়ে কবিতা আবৃত্তি করে, গান গেয়ে শোনানোর মাধ্যমে, দেয়ালে গ্রাফিতি এঁকে কিংবা পাথর, কাঠ, স্টিলের পাতে খোদাই করে। নির্দিষ্ট কিছু পণ্য, সেবা, ইভেন্টের প্রচার-প্রসার, এমনকি রাজনৈতিক ক্যাম্পেইন, আসামী ধরার কাজেও বিজ্ঞাপনের ব্যবহার হতো সীমিত পরিসরে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতি, ভোক্তা ও মিডিয়া বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার-প্রসারেও বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে রেডিও ও টেলিভিশনের মত ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে বিজ্ঞাপনের ইতিহাসে যুক্ত হয় নতুন মাইলফলক। এরপর ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া এসে এই ধারাকে এত বেশি তরান্বিত করে যে, বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারে ব্যক্তি পর্যায়ে তাদের পণ্য ও সেবার বিজ্ঞাপন পৌঁছে দিতে পারছে।
বর্তমানে রেডিও-টেলিভিশন কমার্শিয়াল, বিলবোর্ড, অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের সময় হঠাৎ শুরু হওয়া ভিডিও, বিরক্তিকর পপ-আপ মেসেজে প্রত্যেকদিন প্রায় শত শত বিজ্ঞাপন আমাদের চোখে পড়ে। প্রাসঙ্গিক হোক বা অপ্রাসঙ্গিক; যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি বাইরে ঘুরতে যাওয়া, টেলিভিশন দেখা, রেডিও শোনা, ম্যাগাজিন বা পত্রিকা পড়া, গেমিং, কিংবা ইন্টারনেট ব্রাউজ করা বন্ধ করে দেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এগুলো এড়ানো প্রায় অসম্ভব। আপনি পছন্দ করুন বা না করুন, বিজ্ঞাপনগুলো অসংখ্যবার আপনার চোখে পড়বেই।
কিন্তু
বিজ্ঞাপনের এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঠিক কবে থেকে শুরু হয় তা আমাদের জানা দরকার।
প্রিন্টিং প্রেস শুরুর আগে বিজ্ঞাপন
কেমন ছিল
বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার প্রচার-প্রসারের ইতিহাস প্রায় কয়েক হাজার বছরের পুরনো। কোন প্রতিষ্ঠান কবে, কখন এর প্রচলন করেছিল তা জানা না গেলেও বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া নানা তথ্য-চিত্র সাপেক্ষে সেসময়ে বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজে প্যাপিরাসে লেখা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাচীন মিশরে প্যাপিরাসে বিক্রয়যোগ্য পণ্যের প্রচার হত। হারিয়ে যাওয়া পম্পেই নগরীর ধ্বংসাবশেষ এবং প্রাচীন আরবের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্যাপিরাসে লেখা বাণিজ্যিক বার্তা এবং রাজনৈতিক ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্যে তৈরি লিফলেট ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রাচীন গ্রিস, রোমে এসব কাজে লেখালেখির এই মাধ্যমটির বহু প্রচলন দেখা যায়।
তবে তারও আগে এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকায় পাথরের দেয়ালে খোদাই করে কিংবা গ্রাফিতি এঁকেও বিজ্ঞাপন প্রচার হত। এমনকি আমাদের দেশে খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় চার হাজার বছর আগের পাথরে খোদাই করা নোটিশ আবিষ্কৃত হয়েছে।
চাইনিজ শিজিং বা ক্লাসিক অফ পয়েন্টিতে উল্লেখ রয়েছে, খ্রিষ্টপূর্ব এগার থেকে সপ্তম শতাব্দীর চীনে ক্যান্ডি বা মিঠাই জাতীয় খাবার বিক্রির উদ্দেশ্যে বাঁশি বাজিয়ে ক্রেতাদের আহ্বান করা হত। সে সময় ক্যালিগ্রাফিক বিলবোর্ডের প্রচলনের কথাও উল্লেখ রয়েছে। পূর্ব চীনের জিনান শহর থেকে সং রাজবংশের সময়কার তৈরি তামার পাতে লেখা একটি বিজ্ঞাপন উদ্ধার করা হয়। বিজ্ঞাপনটির উপরের অংশে খরগোশের লোগো সহ ‘লিউসের সূক্ষ্ম সুঁইয়ের দোকান’ এবং নিচের অংশে ‘আমরা উচ্চমানের ইস্পাতের রড ক্রয় করে সেগুলো দিয়ে সূক্ষ্ম ও উৎকর্ষ সুঁই তৈরি করি, যেগুলো যেকোনো সময় বাড়িতে ব্যবহারের উপযোগী’ লেখা রয়েছে। একেই এখন পর্যন্ত সংরক্ষিত প্রাচীনতম বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের একমাত্র উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।পঞ্চম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর ইউরোপের অধিকাংশ মানুষই পড়তে জানত না। তাই সেসময় পণ্য বা সেবার সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রতীক বা সেগুলোর ছবি কিংবা চিহ্ন ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজটি করা হত। এছাড়াও স্ট্রিট কলাররা নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার গুণ বর্ণনা করে গীতিকবিতা গেয়ে বেড়াত। এ ধরনের গীতিকবিতাগুলো ত্রয়োদশ শতাব্দীতে প্রকাশিত কবিতার বই Les Crieries de Paris বা ‘স্ট্রিট ক্রাইস অফ প্যারিস’-এ উল্লেখ রয়েছে।
প্রিন্ট মিডিয়ার আগমনের পর বিজ্ঞাপন
কেমন ছিল
আধুনিক মুদ্রণের ইতিহাসের শুরুটা প্রায় ২২০ খ্রিষ্টাব্দের আগে, চীনের হান সাম্রাজ্যের সময়কালে। ‘ওড-ব্লক প্রিন্টিং’ নামে সর্বাধিক পরিচিত মুদ্রণের এই পদ্ধতিটির মাধ্যমে সেসময় রেশমের কাপড়ে বিভিন্ন রকমের লেখা, ছবি ও নকশা ছাপা হত। নবম শতাব্দীর শেষের দিকে মুদ্রণের এই পদ্ধতিটির বিস্তৃতি বাড়তে থাকে। কাপড়, স্ট্যাম্পসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যবহারের পাশাপাশি কাগজেও এর পুরোপুরি ব্যবহার শুরু হয়। সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ মুদ্রিত ‘ডায়মন্ড সূত্র’ নামের বইটি প্রকাশিত হয় ৮৬৮ সালে। কাগজে মুদ্রণের ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞাপনের ইতিহাসের সংযোগ তৈরি হয় পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের পর। ধারণা করা হয়, ইংরেজ ব্যবসায়ী, কূটনীতিজ্ঞ ও লেখক উইলিয়াম ক্যাক্সটন কর্তৃক লেখা প্রথম ইংরেজি প্রিন্টেড বইয়ের প্রচারের লক্ষ্যে ১৪৭৭ সালের দিকে কাগজে মুদ্রিত বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। বিজ্ঞাপনের এই পদ্ধতিটি পরবর্তীতে হ্যান্ডবিল আকারে জনপ্রিয়তা পায়। ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে ভেনিসে সাপ্তাহিক সরকারি গ্যাজেট প্রকাশ হওয়া শুরু হয়। ধীরে ধীরে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের ধারণাটি ইতালি, জার্মানি, হল্যান্ড এবং ব্রিটেনেও বেশ দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পড়ে। বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের ধারণাটিও সে সময় থেকেই জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। অন্যদিকে মুদ্রণের অগ্রগতি খুচরা বিক্রেতা এবং ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলোকে হ্যান্ডবিল এবং ট্রেড কার্ড ছাপানোর সুযোগ করে দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, ১৬৭০ সালের লন্ডনের খুচরা ব্যবসায়ী জনাথন হোল্ডারের কথাই ধরা যাক। প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে তিনি তার দোকানে আসা প্রত্যেক ভোক্তাকে সব রকমের পণ্যের নাম ও দাম সম্বলিত একটি প্রিন্টেড ক্যাটালগ প্রদান করতেন। বর্তমানে এ ধরনের ক্যাটালগের ব্যবহার বেশ স্বাভাবিক হলেও সেসময় হোল্ডারের এই আবিষ্কার খুচরা বিক্রেতাদের জন্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এবং খারাপ ব্যবসায়িক অনুশীলন হিসেবে ধরা হত।
১৭০২ সালে ব্রিটেনে প্রকাশিত হয় প্রথম দৈনিক পত্রিকা 'দ্য ডেইলি কোরান্ট'। তবে এর মাত্র দুই বছর পরেই, ১৭০৪ সালে ব্রিটিশ নর্থ আমেরিকায় প্রকাশিত হওয়া আরেকটি পত্রিকা'দ্য বোস্টন নিউজ-লেটার। এর মাধ্যমে ইতিহাসের প্রথম সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনটি ছাপানো হয়। এটি নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডের অস্টার-বে’তে একটি জমি বিক্রয় সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন ছিল। সে সময় থেকে দৈনিক পত্রিকা নির্ভর বিজ্ঞাপন ব্যবস্থার প্রচলন বেশ ভালোভাবে শুরু হলেও বিজ্ঞাপনের ইতিহাসে নতুন চমক আসতে প্রায় পঁচিশ বছর লেগেছিল। ১৭২৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন কর্তৃক প্রকাশিত ‘দ্য পেনসিলভেনিয়া গ্যাজেট’-এ একটি আলাদা পৃষ্ঠাই রাখা হয় বিজ্ঞাপন প্রচারের লক্ষ্যে। এতে করে বেশ অনেকটা লভ্যাংশ বিজ্ঞাপন থেকে আসে এবং পত্রিকার দাম কমিয়ে ফেলা হয়। ফলে পত্রিকার কাটতিও বেশ বেড়ে যায়। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের এরূপ সুদূরপ্রসারী চিন্তা যে অন্যান্য সকল দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকাগুলো দারুণভাবে গ্রহণ করেছিল, তা বর্তমানের পত্রিকাগুলোর দিকে তাকালেও বোঝা যায়৷
বিজ্ঞাপনী সংস্থার আগমন কী ভাবে হয়
বর্তমানে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো মূলত ক্রিয়েটিভ এজেন্সি হিসেবেই বেশি পরিচিত। এধরনের সংস্থাগুলো মূলত একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদানকৃত সেবা বা পণ্যগুলোর সৃজনশীল ব্র্যান্ডিং থেকে শুরু করে নানান প্লাটফর্মে প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে কাজ করে যায়। সংস্থাগুলো কোনো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিভাগ হতে পারে, কিংবা স্বাধীন ফার্ম হিসেবেও কাজ করে যেতে পারে। বর্তমানে এগুলো বেশ চোখে পড়লেও আজ থেকে প্রায় দু’শত বছর পূর্বে হাতেগোনা কয়েকটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার অস্তিত্ব ছিল।
ইতিহাসের প্রথম বিজ্ঞাপনী সংস্থাটি শুরু হয় ১৭৮৬ সালের লন্ডনে, উইলিয়াম টেইলরের হাত ধরে। তাছাড়া প্রথম দিককার বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ফ্ল্যাট স্ট্রিট, লন্ডনের জেমস ‘জেম’ হ্যোয়াইট, লন্ডন গ্যাজেটের অফিসার জর্ন রেয়নেল’য়ের নামও উঠে আসে। তবে ইউরোপের বাইরে, আমেরিকা, কানাডা এবং পুরো পৃথিবীব্যাপী বিজ্ঞাপনী সংস্থার অগ্রদূত হিসেবে ‘ভলনে বি. পালমার’কে স্মরণ করা হয়। পালমার ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে তার বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘ভলনে পালমার এজেন্সি’শুরু করেন। 'Adland: A Global History of Advertising' বইয়ে পালমারকে আমেরিকা এবং কানাডার বিভিন্ন শহর এবং প্রাদেশিক অঞ্চলগুলোর সবচাইতে ভালো পত্রিকাগুলোর অনুমোদিত প্রতিনিধি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি বিজ্ঞাপনদাতা এবং প্রকাশকগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতা অবলম্বন করতেন।
তবে মাত্র দুই বছরের মধ্যে পালমারের বিজ্ঞাপনী সংস্থার মডেলে পরিবর্তন আসে। ১৮৪২ সালে তিনি ফিলাডেলফিয়ায় অফিস খুলে বসেন। সে সময় তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় অল্প দামে বিজ্ঞাপনের পাতা ক্রয় করে সেগুলো বিজ্ঞাপনদাতাদের নিকট বেশি দামে বিক্রয় শুরু করে। ক্লায়েন্টের প্রয়োজন মোতাবেক বিভিন্ন লে-আউট, আর্টওয়ার্ক তৈরি করে দিলেও পালমার মূলত অ্যাড-স্পেস ব্রোকার হিসেবেই বেশি পরিচিতি পায়। পালমারের এই বিজ্ঞাপনী সংস্থার মডেলটি পরবর্তীতে বেশ জনপ্রিয় এবং অনুকরণীয় হয়ে উঠে। তবে বর্তমানে ক্রিয়েটিভ এজেন্সির ধারণাটি নিয়ে আসে ২১ বছর বয়েসি ‘ফ্রান্সিস ওয়েল্যান্ড আয়ার’।
১৮৬৯ সালে ফ্রান্সিস তার বাবার নামে নিউইয়র্কে ‘এন. ডব্লিউ. আয়ার এন্ড সন’ নামের একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি রিলেজিয়াস উইকলির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করে। তবে তাঁর বিচক্ষণতা এবং সৃজনশীলতাকে পুঁজি করে বেশ দ্রুতই তিনি ভলনে পালমার এজেন্সি সহ আরো কয়েকটি বড় বিজ্ঞাপনী সংস্থা করায়ত্ত করে বসেন। ফ্রান্সিস পত্রিকার বিজ্ঞাপন পাতা ক্রয়-বিক্রয় ছাড়াও বিভিন্ন ক্লায়েন্টের জন্য ব্র্যান্ডিং করা সহ আকর্ষণীয়, সৃজনশীল বিজ্ঞাপন তৈরিতে লোকবল কাজে লাগান। মূলত বর্তমানে এজেন্সিগুলোর ‘ক্রিয়েটিভ টিম’য়ের ধারণাটি ফ্রান্সিসের এজেন্সি থেকেই এসেছে। De Beers, AT&T, ইউ. এস. আর্মি সহ আরো অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের বিখ্যাত স্লোগান তৈরির কাজটিও এন. ডব্লিউ. আয়ার এন্ড সন’-এর।বিলবোর্ড বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপনের মূল কাজই যেহেতু কোনো একটি নির্দিষ্ট পণ্য, ইভেন্ট বা সেবার দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, সেহেতু উনিশ শতাব্দীর শেষের দিকে কোম্পানিগুলো নানানভাবে তাদের বিজ্ঞাপন প্রচারের পথ খুঁজতে লাগলো। সে সময় থেকেই মূলত বিজ্ঞাপন প্রচারে বিলবোর্ডের প্রচলন পুরোপুরিভাবে শুরু হয়। প্রথম নথিভুক্ত বড় আকারের বিলবোর্ডটি জারেড বেল কর্তৃক তৈরি। হাতে আঁকা ৯X৬ আঁকারের বড় বিলবোর্ডটি ১৮৩৫ সালের নিউইয়র্কে একটি সার্কাস শো’র জন্য তৈরি হয়েছিল।
টেলিভিশন বিজ্ঞাপন
আধুনিক সময়ের সংস্কৃতিতে টেলিভিশনের প্রভাব অনস্বীকার্য। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে প্রায় কয়েক দশক ধরে মানুষের ঘরে ঘরে কেন্দ্রীয় বিনোদনের জায়গা দখল করে নিয়েছিল এই চারকোণার যাদুর বাক্সটি। বিনোদনের সাথে সাথে বিজ্ঞাপনের চেহারা পাল্টে দেওয়ার কাজেও টেলিভিশনের বড় ভূমিকা ছিল, তা ইতিহাসের পাতা ওল্টালেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
প্রথম দিকে টিভি কমার্শিয়াল প্রচারে আমেরিকা সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ১৯৩৯-এর দিকে পরীক্ষামূলক-ভাবে প্রক্টর এন্ড গ্যাম্বল, জেনারেল মিল সহ আরো কয়েকটি কোম্পানির বিজ্ঞাপন বার্তা আকারে সম্প্রচার করে। যদিও একই ধরনের চর্চার জন্য ১৯৩০-এর দিকে ম্যাসাচুসেটস ভিত্তিক টিভি নেটওয়ার্ক W1XAV’কে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।সুতরাং বিজ্ঞাপন দুনিয়ার ইতিহাস যতই বিস্তৃত হোক না কেন গোটা বিশ্ব আটকে আছে এর বৃত্তে l তাকে আরও কত ভাবে আকর্ষণীয় করে তোলা যায় তা নিয়ে চলছে নিত্য পরীক্ষা নিরিক্ষা। বিজ্ঞাপনের ভাষা বদলে গেছে যেমন - বাজারে দু প্রকারের ঘি পাওয়া যায় সুশ্রী আর বিশ্রী। আপনি কোনটা চান - শ্রী ঘৃত'র বিজ্ঞাপনের ভাষা এমন ছিল। বর্তমানে বিজ্ঞাপন হয়ে গেছে কিছুটা বর্ণনামূলক । তা সে প্রিন্ট মিডিয়াই হোক কিংবা টেলিভিশান মিডিয়া হোক৷ সংস্থা তার পণ্যটির গুণাগুণ স্বল্প পরিসরে বর্ণনা করে দিচ্ছে। আর এই দুনিয়ায় নারীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন উপায়ে সংস্থা তার পণ্যটিকে আকর্ষণীয় করে তুলছে।
তথ্যসূত্র - অন্তর্জাল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন