কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৭ |
বদ্ধ
সেই লাইব্রেরীর পুরনো বইয়ের গন্ধ। মোহিত হয়ে যাই। মনে হয় এই জ্ঞানের পৃথিবীটা আমার চিরন্তন, জন্মজন্মান্তর। এটা আমার একার। লকডাউন ওপেন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু লাইব্রেরীতে ক’জন বা আসে? বড় গোলটেবিলটাতে বাসী নিউজপেপারগুলো ছড়ানো। বইয়ের তাকের মাঝে অন্ধ গলি। এই সাত সকালেও ভিতরটা আঁধার। লাইব্রেরিয়ানকে দেখছি না। ভেতরে একজনকে অন্ধকারে বসে নিচের তাকে উবু হয়ে বসে বই হাতড়াতে দেখলাম। আমার মাস্ক চশমা গ্লাভস। ওর কিছুই নেই। আমি একটু দূরেই রইলাম। কম বয়েসী রোগা। হাতে দুটো বই। কাছে আসতে বুঝলাম ওটা মেয়ে। বুক পেট সমান। চুল ছেলেদের মতো ছাঁটা। ও এগিয়ে আসে। আমি ওর খোলা হাঁ মুখ দেখে পিছিয়ে যাই। ও দাঁত বের করে হাসে।
-ঘাবড়ে
যাচ্ছেন স্যার? চিন্তা করবেন না। ও আমার আগেই হয়ে গেছে।
-কী হয়ে গেছে তোমার?
-ওই, যে বিষ রোগে আপনার আতঙ্ক! আমি তো পষ্ট আপনার চোখ দেখে বুঝেছি। ওই রোগ তো আমাকে তিনমাস আগে ধরেছিল। আমার
শরীরে কি ওসব থাকতে পারে? আজ
অব্দি অমন কয়েকটাই তো ধরেছে আর সরসর করে নেমে গেছে। যেমন পুলিশের খাতায় দাগীর নাম। তেমনি
গবেষণাগারে আমার নাম। আমি তো গিনিপিগ গো! পরহিত তরে।
আমি
পিছিয়ে এলাম।
-আমার
এই কালো শুঁটকো গায়ের ভিতর ওই এন্টিবডি ছাড়াও বইছে আরো কিছু। যেটা ধবলী খুনকে লাল করে দেয়। রক্তচন্দন
বইছে দেহে। আমার হৃদয় যত ওটা ঘষবে ততই নিখার। ফ্লুরোসেন্ট।
সিন্টিলেটেড। চকমকে। কেন জানেন স্যার? পরহিত তরে। আমি নিডি মানুষের কাছে যাই, খলবল করে তার বিষ নেমে যায়।
আমার
খুব কাছে এসে দুটো বই দু’হাতে
তুলে নাচতে লাগলো। -ধবলী ধবলী সার / ধবলীকে ধরিলে বিষ নাহি আর / ছাড়ে মাংস ধবলী ঘাটে / ধবলী ধরিবো তাহে বিষ নাহি উঠে।
ছড়া
গাইতে গাইতে জিভ ছুঁচলো করে শিস দিতে লাগলো। দেখলাম হাতে ধরা বহু পুরনো জীর্ণ বইদুটো। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাতন্ত্র। আর অন্যটি কামাক্ষ্যা তন্ত্রসার। ও নাচতে নাচতে থামলো।
-আরশোলা। জানেন তো স্যার? কোটি
কোটি বছর ধরে লুকিয়ে ঘরকুনো ভীতু কোয়ারেণ্টাইন হয়ে থাকতে থাকতে নোংরা এই প্রাণীটার রক্ত সাদা
হয়ে গেছে। এখন কোনো রোগ একে স্পর্শ করে না। এমনকি ভয়ানক রেডিয়েশনে পৃথিবীর সব মানুষ মরে গেলেও এর কিছু হবে না। পৃথিবীর বুকে সর সর করে ঘুরে বেড়াবে,ফর ফর করে দাপিয়ে বেড়াবে। কারণ? ওই যে বললাম স্যার, ধবলী, ধবলী।
উত্তরমুছুন'ধবলী' শব্দটি ঠিক কি অর্থে লেখক ব্যবহার করেছেন? আমি অবশ্য আমার মতো করে একটা মানে করে নিয়েছি। যাই হোক, গল্পটা ভালো।
ধবলী শব্দটা রক্তহীনতা ও রক্তের বিষ দূষণ যা লোহিত কণা শেষ করে এই অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অন্তর্নিহিত অর্থে সেই মানুষদের কথা যাদের চরিত্রে দূষণ
মুছুনধন্যবাদ! ভালো !
উত্তরমুছুন