কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৭ |
করোনাকালে আমন্ত্রণ
এই মহামারীর কালচে-নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতির সাহচর্য অনুভব করতে থাকে চন্দ্রিমা। ভাবনার উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে চারদিকে। সারা জগৎ ছেঁচে সাদাপাতাকে কিছুটা অলংকৃত করার চেষ্টা করে সে। যুক্তির বাইরেও যে পৃথিবী আছে তার সৌন্দর্যকে সে অনুভব করে। বহুরৈখিক বিষয়গুলি কবিতায় প্রাধান্য পায় তার। সর্বোপরি মানবিকতার পক্ষে বক্তব্য ফুটে ওঠাই প্রধান ব্যাপার, সে মনে করে।
মোবাইল রিং হচ্ছে।
‘নমস্তে, স্যার’
ওপার থেকে উইংকম্যান্ডার এ. কে. ত্রিপাঠীজী-র স্নেহময় কণ্ঠস্বর, ‘নমস্তে চন্দ্রিমা। আজ এহ করোনাকালমে এক কবিসম্মেলন আয়োজিত কিয়া গ্যায়া। সব নিয়ম মান কর হী হোগা। আপ জরুর আনা।’
বিকেল পাঁচটায় পৌঁছে গেল চন্দ্রিমা তার বাড়ির কাছেই ত্রিপাঠীজীর বাসভবনে। গেটের দুপাশে কেয়ারী করে লাগানো রজনীগন্ধা ফুটে আছে। তার সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। গেটে হাত স্যানিটাইজ করে ভেতরের দরজায় এগিয়ে যায় সে। বিরাট সুসজ্জিত হলঘর। আজ মাত্র ১০জন কবি এসেছেন। অন্তত ৪০/৫০জন আমন্ত্রিত হন। সেখানে হিন্দিভাষী কবিদের মাঝে চন্দ্রিমাই একমাত্র বাংলাভাষার আমন্ত্রিত কবি। এই করোনাকালে প্রত্যেকে পরস্পর থেকে একমিটার দূরত্ব বজায় রেখেই বসেছেন। সভা শুরু হল। কয়েকজন হিন্দিকবির কবিতা পাঠ বেশ আনন্দ ছড়িয়ে দিল।
‘চন্দ্রিমা, পহেলে বাংলা মে কবিতায়ে পাঠ কিজিয়ে। উসকে বাদ, হিন্দি মে অনুবাদ পঢ়িয়ে’ ত্রিপাঠীজী নির্দেশ দিলেন।
চন্দ্রিমা সেদিন অনেকগুলি কবিতা পাঠ করেছিল। সেই কবিতাগুলির একটি হল - ‘নির্মাণ’
অ্যাক্রিলিক তেলরং কিছু সংশয়...
সাতরঙা কল্পনায় সানাই-এর সুর।
ঘোড়াগাড়ি থেকে ‘কার’যুগ
হাতে হাত – জীবন ছড়িয়ে যাচ্ছে
এপার-ওপার।
সপ্তরংগী কল্পনায়োঁমেঁ শাহনায়িকী
গুঁঞ্জ ভরপুর জোশ সে পরিপূর্ণ হোনে
লগে। ঘোড়াগাড়িসে
‘কার’যুগ তক
এহ সফর। হাথোঁমেঁ হাথ...
জিন্দেগী দিলচস্প কহানী কী ওর
ফ্যালতী জা রহী হ্যায়...
গ্রিক শব্দ ‘ডায়াস্পোরা’ মানে ‘ছড়িয়ে পড়া’- মেনে নিয়ে চন্দ্রিমা ভাবতে থাকে – মানুষ গ্রাম থেকে শহর, তারপর হয়ত রাজধানী ছাড়িয়ে কোনো বিদেশে ঠাঁই নিল। কিন্তু তার অরিজিনাল কালচার, কখনও তার সঙ্গ ছাড়ে না।...
দিল্লির রাস্তায় শ্রাবণের বৃষ্টিধারায় চন্দ্রিমা দ্রুত হাঁটতে শুরু করল।
পড়ে ভালো লাগলো দিদি। খুব সুন্দর লেখা।
উত্তরমুছুন