কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৭ |
সকালের রোদে
শরীর মেখে বালিয়াড়িতে বসে আছে যে মেয়েটি তার কাছাকাছি কিছু পুরুষ। বয়োজ্যেষ্ঠ, কনিষ্ঠ,
যুবক বা তরুণ। ঘুরেফিরে তারা কাছাকাছিই থাকে। বুকের অস্থির ঢেউ সামলে আড়চোখে মেয়েটিকে
দেখে। ছড়ানো চুল, সমুদ্রলতার মতো নিটোল হাত। ঢেউ খেলানো দীর্ঘচুল আর হাত-পায়ের ভাঁজে
বুক ঢেকে গেছে। তাতে কী! সুগঠিত পায়ের ডিম দেখে বয়োজ্যেষ্ঠ, কনিষ্ঠ, যুবক বা তরুণেরা
বুকের সৌন্দর্য্ বেশ বুঝে নিতে পারে।
সমুদ্রের একেবারে
কিনারে গোড়ালি ডুবিয়ে বসে আছে মেয়ে। পায়ের কাছে সমুদ্রলতার কাছে ঝোপ। তাতে বেগুনি
বেগুনি ফুল। সেইসব বয়োজ্যেষ্ঠ, কনিষ্ঠ, যুবক বা তরুণের কাছে সুন্দরের উপমায় বনদেবী
হয়ে ওঠে সে। ফণাতোলা সাপের মতো ছুটে আসা ঢেউ থেকে কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষি জল লাফিয়ে উঠে
সুর্যের আলো ধার নিয়ে ঝকমক করে উঠলে একযোগে আহা-ধ্বনি ওঠে সুন্দরের অক্ষম প্রকাশে।
রূপালী ঢেউ এসে লুটিয়ে পড়ে তখন অপরূপ সেই পায়ে। যেন কুর্ণিশ করে। বয়োজ্যেষ্ঠ, কনিষ্ঠ,
যুবক বা তরুণের অক্ষম ফণাও লুটায় ব্যর্থতায় আর গোপনে তারা বুকের ঢেউ সামলায়। অথচ মেয়েটির কোন ভ্রুক্ষেপ
নেই, চোখে নেই কোন চাঞ্চল্য বা কাঁপন। নির্বিকার তাকিয়ে আছে দূর নীলিমায়।
বালিয়াড়িতে
লাল কাঁকড়াদের ঘর। যেন সযত্নে আলপনা এঁকেছে কেউ। প্রতিটি আলপনার মাঝে একটি ছিদ্র। প্রতিটি
নকশায় আলাদা ব্যক্তিগত চিহ্ন রেখে তারা গেছে নিজস্ব যাপনে। খুব সতর্ক এই কাঁকড়ার দল।
মেয়েটি এখান থেকে সরে না গেলে ফিরবে না হয়তো। হয়তো আবার একটি নতুন ঘর বানাবে। কিন্তু
জরুরি অনেক কিছুই থেকে যেতে পারে তোতাদের এই ঘরে? সংরক্ষিত খাদ্য, ডিম বা ছানা। মেয়েটি
কিছুই লক্ষ করছে না। গোড়ালি ডুবিয়ে বসে আছে নিশ্চুপ। যেন পাথর হয়েছে তার জীবনের জল।
সমুদ্রে সুর্যাস্ত
দেখা হলো। তবু ডেরায় ফেরে না ক্লান্ত মানুষেরা। আড়চোখে সতর্ক পাহাড়া দেয়। ফিসফাস চারদিকে।
কী দেখে এই মেয়ে দূরবর্তী জাহাজ বা ট্রলারে? প্রেম? বসে আছে সে প্রেমিকের ফেরার অপেক্ষায়?
নাকি ধর্ষক?
হননকালে তো প্রেমের চেয়ে হন্তারকের সংখ্যাই বেশি। পালিয়ে গেছে সে জাহাজ বা ট্রলারে?
আর মেয়েটি বসে আছে নিঃসীম হিম। নিথর পড়ে আছে জলের কিনারে অর্ধেক জীবিত বা অর্ধে কমৃত...
যেন সে জলের সাথে ভেসে আসা এক সমুদ্রকোড়াল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন