![]() |
কবিতার কালিমাটি ১০৩ |
জীবনগীত
মরণমিলন
মধুর মরণসম
কী বলিতে চাই?
অঙ্গে অঙ্গে
ভিক্ষাপাত্র, কালজ্ঞান নাই।
বৃক্ষমৃত্যু
চিন্তা যেন অমৃতসমান!
রাত্রিশশী প্রিয়দর্শী
ধন্য মুনিবান।
নীলাভ বাতির
দীপ মৃদুলয়ে সাজে,
অঙ্গ জুড়ে কৃষ্ণপ্রিয়
বাঁশরী বিরাজে,
হৃদিপদ্ম ধ্যানাসনে
ভ্রমরগুঞ্জন,
ছন্দবদ্ধ শ্রীচরণ-ধূলি
আহরণ!
মুগ্ধ করে তিয়াসের
শুষ্ক কণ্ঠনালী,
রোদনের পন্থাটুকু
প্রিয় বনমালী!
হিয়াশূন্য পিয়াশূন্য
বিরহমাথুর,
অঙ্গকান্না
কী যাতনা মরণ-আঁতুড়!
চন্ডীদাসী পাদপদ্ম
অনুক্ষণ শুনে
প্রিয়দর্শী
নাগবীণা গরজে যতনে–
বিরহক্রন্দন
শুষ্কতরু পীতচক্ষু
ব্রহ্মাণ্ড-অশোক,
নীলাচলে অস্তমিত
অধরার শোক!
খণ্ড খণ্ড প্রলয়ের
বারি বরিষণ,
অভাবী প্রভাবী
বায়ু বিরহমগন,
মরুবালু ঝঞ্ঝা
লয়ে তীব্র দিগম্বর,
ফুটিফাটা মৃৎবক্ষ
প্রবল ঊষর,
বর্ষাশূন্য
চাতকের করুণার্ত ক্ষুধা,
জৈষ্ঠ্যতপ্ত
চক্রাকার ভীষণ বসুধা
রেখেছে বিষণ্ণ
মাখা যত আবাহন–
বক্ষফাটা গাংচিল,
করুণ ক্রন্দন!
ঘূর্ণমান কর্ণগেহ
ত্রাহি ত্রাহি রবে
শ্রীরাধার চেতনাকে
অঙ্গে নাহি লবে,
বিমর্ষ বিরূপ
সদা নিত্যকার গ্লানি,
জন্ম নেয় তীব্র
ব্যথা, আর্ত অঙ্গহানি!
অমাবস্যা সন্ধ্যাকালে
প্রলয় তুফান!
মৃত্যুপথে ফেলে
রাখে বিরহ-বিতান।
গৈরিকবন্দন
অস্তমিত সূর্যগায়ে
গৈরিক চন্দন,
মধুভাণ্ডে স্থিরায়ত
ধ্যানের মগন,
নগ্ন পায়ে বাঁশরীর
মৃত্যু পদাবলী
বসুধা-কায়াকল্পে
এঁকেছে সকলই।
তুচ্ছ গীত পরানমিত
ক্ষুদ্র কামনা–
সাঙ্গ করেন
ভিক্ষাপাত্র, শূন্য বাসনা!
ধীরলয় অগ্রসর
পথ পরিসরে–
হাহাকার-ছিন্নমস্তা
গৈরিক চাদরে
অংশুমালী কৃষ্ণবাঁশির
স্তুতি-বন্দন,
হস্তজোড় নতশির
ইচ্ছা-সমাপন–
আঁকা হয় বসুধার
ললাটলিপিতে,
শান্তি শান্তি
চিরধ্বনি প্রিয় সুসঙ্গীতে।
নিদ্রা যায়
অহিকুল, কামেরও পরান।
চিরগৈরিক অগ্রসর,
চীরে অগ্নিবাণ।।
ধ্যানচক্ষু
স্বচ্ছতোয়ার অগ্নি-নির্বাপণ।
রেখেছে সাধনার
শান্তি হৃদে আমরণ।।
তপ্ত ক্ষুধায়
তৃপ্তিবারি যোগের সহিত।
ছিন্নবস্ত্র
গৈরবর্ণে বাজে জীবনগীত।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন