কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৫ |
উড়ান
বিলাসিতা…
একদিন মনে মনে পণ করলাম, এই বিলাসিতার একখানা বেশ
জম্পেশ করে, একটা মূর্তি বানাবো।
একেবারে, চোখ মুখ নাক সমেত নাদুস-নুদুস একটা মূর্তি। খড়কুটোর
সন্ধানে বেরিয়ে, আকাশ পেলাম হাতে।
ইচ্ছে হলো বেশ। একদিন শখ করে এই খোলা আকাশের নীচে শোবো।
এক্কেবারে খোলা আকাশ। তারা চিক্ চিক্ করবে থেকে
থেকে। হাত পা ছড়িয়ে ধুলো মাখতে মাখতে বিলাসিতা যাপন করবো।
অথচ, অথচ এই খোলা আকাশটা কাদের যেন গিলতে আসে!
তারাগুলো ওদের কাছে পাথর বৃষ্টির মতন। টুপ করে পড়লেই
ওদের পোঁটলার ভেতর থেকে সুর তৈরী হয়।
গিলতে আসে ওদের সেই সুর, গিলে খায়ও।
আর সেই সুযোগে, কোথাও মন্তাজ ভরে ওঠে।
তা যেটা বলছিলাম, ওদের কথা…
না,
কেন বলবো ওদের কথা?
ওরা, তো আমার কেউ হয় না!
ওরা সত্যিই আমার কেউ হয় না। ওরা শুধুই
একটা শব্দবন্ধনী। সংবাদপত্রে জ্বলজ্বল করা শব্দবন্ধনী। চিনামাটির কাপে সুড়ুৎ করে
চা-এর সঙ্গে যার চূড়ান্ত সখ্যতা। এর বেশী কিছু না।
চা বলতে মনে পড়লো, শখ করে সেদিন জলখাবারে রুটি
বানিয়েছিলাম। আহা! বাবা-মায়ের সে কী আহ্লাদ!
অপরিণত হাতের আধো আধো বৃত্তাকার আকৃতি, তক্কে তক্কে ছিলাম, পাতে
তরকারি
পড়লেই, সেদ্ধ আলুর সাথে, সেদিনের সেই রেললাইনের পাথরগুলোকে কল্পনা করবো।
ভরপেটে ঢেঁকুর তুলতে তুলতে শিল্প হবে বেশ,
ভেঙে চুড়ে গুছিয়ে-গাছিয়ে পাতা ভরে উঠবে,
ক্রমশ ভরে উঠবে,
তবু ওদের কথা বলবো না…
আর মাছের ঝোলে ভাত মাখতে মাখতে, ভরসা রাখবো
শুধু শেয়ার বাটন্-এ।
যুক্তি-তর্ক, ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যার অন্দরে ঘোলাটে চোখগুলো আর ক্লান্ত
গোড়ালিগুলো হাঁপিয়ে উঠবে। দমবন্ধ খোলা আকাশ টপকে, ওরা চাইবে
চার দেওয়াল।
আর আমি...
ফ্যানা ওঠা কফির কাপে কখনও সখনও হয়তো ভুল করে পড়ে নিউজ
চ্যানেলের আড়াল।
ব্যাস ওতটুকুই বরাদ্দ, তারপর ফ্ল্যাশলাইটের
দাপটে আবার ফিরে যাবো নতুন কোনও হ্যাশট্যাগে।
স্যালাড কাটার সময়ের পিয়াঁজের ঝাঁঝ, যোগ্য সঙ্গত দেবে।
ফুলে ফেঁপে উঠে হাততালি কুড়োবে দৃশ্যকল্প।
সে এককালে ছবি বেরোতো বড় বড় করে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে
আসছে। ওদের কোনও দেশ নেই। ধর্ম আছে শুধু…
ধর্মের নাম উড়ান।
আর এদের কিন্তু দেশ আছে, ধর্মও আছে।
দেশের নাম...
দেশের নাম অস্তিত্ব।
আর ধর্মের নাম খিদে।
বাবু… তুই যতই
চাদর টানিস, তোর মা আর উঠবে না রে…
বরং তুইও রাজপুত্তুরের মত
মাথা গুঁজে শুয়ে পড়।
ঘুমিয়ে নিয়ে চোখ-মুখ ফুলে গেলে, রাক্ষস হতে হবে তো একদিন!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন