সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

বিদ্যুৎলেখা ঘোষ



কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৫



অর্থাৎ 

একদিনে সংক্রামিতের সংখ্যা সারা দেশে ছ’হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তাড়া করছে গোষ্ঠী সংক্রমণের ভয়। তবু রথ চলে, মেলা বসে। তবু দলে দলে হাত পেতে প্রার্থনা থামে না। কে শুনবে? কান তো ওখানে নেই! কান খুঁজতে বেরিয়ে পড়লাম। শুধু কি আর কান থাকে, সঙ্গে মাথাটাকেও নিশ্চয়ই দেখতে পাবো! গান ভেসে এলো কানে। মেয়েটা গাইছে। ওর বন্ধুরা ঘুমোয়নি টানা তিনদিন। মেয়েটা নিজেও ঘুমোয়নি। একইসঙ্গে কাজ করে গেছে অবিশ্রান্ত। প্রচণ্ড একটা ট্রমা কাজ করছে সবার মধ্যে। পরিষেবা দিতে দিতে পিপিই'র অভাবে কর্মীরা নিজেরাই কেউ কেউ আক্রান্ত হয়ে গেলে কোয়ারেন্টাইনে চলে যেতে হচ্ছে তাদের। সুস্থ থাকতে তাই একটু ঘুমোতে হবে। এই ঘুমটুকু না হলে পরের শিফটের কোভিড 19 পজেটিভদের ডিউটি সামলাতে হিমসিম খেতে হবে সবাইকে। খিদে তৃষ্ণা প্রশ্বাসের মতোই মেয়েটার গান পায়। কিন্তু এই প্যানডেমিক যেন গলা টিপে ধরে নিঃশ্বাসের মতোই তার গান বন্ধ করে রেখেছে। অবসর এসেছে একটু দম নেওয়ার, একটু গেয়ে উঠবার।

সে গাইছে মাঠে মাঠে ভরা মৌসুমে একাকিনী ফসল কেটে গোলাঘর ভরে তোলার গান। কোমল মধুর করুণ সেই সুরে সাথী ক্লান্ত পরিশ্রান্ত সহকারী সহকারিণীরা ঘুমিয়ে পড়ছে একে অন্যের গা ঘেঁষে, হেলান দিয়ে, একে অন্যের কোলবালিশ হয়ে। বিছানার অভাবে খাবার সার্ভ করার বড় বড় ট্রলির উপর  চাদর বিছিয়ে। একটু তো নিশ্ছিদ্র ঘুম চাই। শরীরে শক্তি চাই নিজে বেঁচে থেকে মৃত্যুদূতের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবন ছিনিয়ে আনার জন্য।

 দৈনন্দিন নিউজ চ্যানেল কিংবা খবরের কাগজ জীবনের জন্য প্রাণপণে লড়াই করে চলার খবর বলে চলেছে।‌ আতঙ্কিত মানুষের কান বন্ধ হয়ে গেছে। কান বন্ধ করে আছে স্বার্থপর সুযোগসন্ধানীরাও। সুতরাং কান সেখানে মাথার দু’পাশে নিরর্থক, থেকেও না থাকার সামি। ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে হঠাৎ কান দেখতে পাচ্ছি। কান-পেতে আছে অধীর আগ্রহে। গান শুনছে সেই মেয়েটির করুণ মধুর  গান। জোড়া জোড়া কান কান-পেতে সারি সারি মাথা চোখ বুজে ঘুমিয়ে আছে ডিউটি শেষে ক্লান্ত হয়ে কিংবা শিফটের পর শিফট ডিউটি করে চলেছে। লকডাউনে বন্ধ ধর্মস্থানে সেবায়েতরাও নেই। ধোঁয়াশা ঘেরা দমবন্ধ পরিবেশ বদলে গিয়ে তকতকে আলো হাওয়া খেলে যাওয়া নীল আকাশের মতো যেন ধর্মস্থানগুলোও অন্ধকারে আজকাল কেমন বেশ এখন আলো আলো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন