ঝুরোগল্প |
কোনও একদিন
দেবজিত নেমে এল বাস থেকে। অফিস যাবে না। অনেকদিন ধরেই সে ভেবেছে সপ্তাহের
মাঝে একদিন কামাই করবে। তারপর সারাটাদিন শুধু তার নিজের। বাসে বসে থাকতে থাকতে এই স্বিদ্ধান্ত নিল, আজই
হোক সেই প্রত্যাশিত
দিন। নয়না মেয়েকে
নিয়ে বাপের বাড়ি গেছে সকালে। আগামীকাল ফিরবে।
রবিবার তার অফিস থাকে না। কিন্তু সংসারের বিবিধ কাজও তো
থাকে! সব মিলিয়ে সেই সত্যিকারের ছুটি সে
পায় না। বাস থেকে নেমে সে হাঁটতে লাগাল দক্ষিণ দিকে। ওদিকে একটা খেলার মাঠ আছে।
কিন্তু মাঠের সামনে গিয়ে সে চমকে যায়। ভারী গ্রিলের ব্যারিকেড বসেছে চারদিকে। গেটে ঝুলছে একটা মস্ত বড় তালা। আপাতত
প্রবেশ নিষেধ।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে রোদও চড়ছে। দেবজিত মনে মনে তার সেই
পুরনো চেনা শহরটা খুঁজতে থাকে, যা আধুনিক জীবনের গতির কাছে হেরে গিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। কিছু সব্জিওয়ালা এখনও
বসে আছে শেষ বেলার কিছু বিক্রির অপেক্ষায়। অবিক্রিত থেকে যাওয়া
আলু, টমেটো, পেঁয়াজ, পটল, কাঁচালংকা এখন সস্তায় বিকোবে। আগে এদিকটায় ফাস্টফুডের
রমরমা বাজার ছিল না। এখন এরকম অসংখ্য
দোকান গজিয়ে উঠেছে অলিগলিতে। সব্জিগুলো হয়তো এখন ওইসব দোকানেই যাবে।
চক্কর মারল দেবজিত
এদিক-ওদিক। শহরটা সত্যিই খুব দ্রুত পাল্টাচ্ছে। এরপর
চলে গেল কাছের রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে। এখানে কত ধরনের মানুষ যে চোখে পড়ে! ম্যাগাজিনের স্টলে দু’একটা বই আর
খবরের কাগজে চোখ বোলালো সে। হেডলাইন প্রায় সব কাগজেরই এক – প্রধানমন্ত্রী বলেছেন
দারিদ্র্য দূরীকরণে তার সরকার আগামী দিনে
যুগান্তকারী সাফল্যের মুখ দেখবে।
প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চে বসেই টিফিন খেল দেবজিত। এরই মাঝে কখন যেন দুটো
বাচ্চা মেয়ে তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে গানবাজনা শুরু করে দিয়েছে। ভোজপুরী ভাষায় অপরিণত
কণ্ঠের গান। গান শেষে হাত পাতল তার কাছে। দেবজিত দেখল তার নিজের মেয়ের বয়সীই হবে এই বাচ্চাদুটো।
সে বলল – দাঁড়া! হাতটা ধুয়ে আসি।
পকেটে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট ছিল। টাকাটা পেয়ে মেয়েটি অবাক। খুচরো পয়সা আর হাসি মস্করার বাইরে নোটটা
ওর কাছে আশাতীত!
দেবজিত বলল – যা, পালা এবার!
হাসিমুখ নিয়ে ওরা ছুটে গেল সামনে। জোরালো হর্ন
বাজিয়ে ট্রেন এল প্ল্যাটফর্মে। দেবজিত উঠে পড়ল ট্রেনে। রোদের তাপ আরও অসহ্য হয়ে
উঠছে। এবার বাড়ি ফিরতে হবে।
ঘরে ফিরতে ফিরতে বেলা গড়ালো অনেকটাই। বাড়ি নিস্তব্ধ। অনেক
সাংসারিক জিনিস ডাইনিং হলে এলোমেলো ছড়ানো।
নয়না একদমই গুছিয়ে রাখতে জানে না। এজন্য দেবজিতের সাথে লেগেও যায় তার কখনওসখনও।
কিন্তু দেবজিতের মনে হল – হ্যাঁ, এটাই তো
চলমান সংসার! এলোমেলো জামাকাপড়, মেয়ে
অনন্যার বইখাতা যেন সেই প্রবহমান সংসারেরই প্রতীক। ওদের অনুপস্থিতিতে ডাইনিং হলটার
আয়তন বেশি বলে মনে হল দেবজিতের। সব গুছিয়ে রাখলে যদি হলটা আরও বেশি বড় বলে মনে হয়
তাই সে একটু থমকে গেল। ভাবল – ক্ষতি কি?
যেখানে যেমন আছে সেখানে তেমনটাই থাক না!
ভালো লেখা। মনে অনুরণন তোলে। আরও ভালো গল্পের প্রত্যাশায় রইলাম।
উত্তরমুছুনঅগোছালো জীবনই ভালো ।
উত্তরমুছুনভালো লাগলো । 🙏