ঝুরোগল্প |
মিউট
মিঃ দত্ত অনেকক্ষণ মেসেঞ্জারের দিকে তাকিয়ে রইলেন। এখানে কয়েকটি লাইন ভাসছিল
কিছুক্ষণ আগে। এখনও আছে। তিনি জানেন এই লাইনগুলো মিথ্যে। জীবনের অভিজ্ঞতা
তাই বলে। তিনি বহুদিন জীবন দেখেছেন। কত তিক্ত অভিজ্ঞতা ঝুলিতে ভরেছেন, কত
মলিন সময় গায়ে মেখে এসেছেন। মাঝে মাঝে চারপাশে যখন প্রকৃতির সেজে ওঠা
দেখেন,
তখন মনে হয় সব মানুষই কি তার মতো সব জেনে বসে আছে, তবে কীভাবে তারা
জীবনকে উপভোগ করেন, কীভাবে বেঁচে থাকেন! ঠিক এই মুহূর্তে যেমন ভীষণ মিথ্যে
এই
লাইনগুলোর জন্য তাঁর বেঁচে উঠতে ইচ্ছে করছে। তিনি কি এগোবেন! তিনি কি কথা
বলবেন আরো কিছু! জানতে চাইবেন তার ভালো মন্দ! যার কথা ভাবছেন তাকে ছবিতে
দেখেন ফেসবুকে। এডিট করা ছবি বলে তো মনে হয় না। এডিট হলেই বা কী! তিনি তো
স্পর্শ চান না। তিনি স্বর চান। সেই স্বর যদি নৈঃশব্দ্যের হয় তাতেও কোন
আপত্তি নেই।
সেও কি তাই চায় বার বার! তবে কেন আসে সে এই রূপহীন মধ্যববয়স্ক পুরুষের কাছে!
তারও বিশেষ কিছু চাওয়া নেই। অতি সাধারণ কথা সে বলে। তবে তা চাতক পাখির কাছে
বৃষ্টির মতো মনে হয়। মিঃ দত্ত এক স্পর্শে সমস্ত কথোপকথন ডিলিট করে দিলেন।
আর
নয়। এ এক নেশা। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যায় তো!
আবার ভাবেন, কারো সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগাটাও কি অন্যায়? ন্যায় অন্যায় বোধ
কি
এতোটাই খেলো হয়ে গেছে আজকাল?
জানলার সামনে এসে দাঁড়ালেন। কালবৈশাখী হবে মনে হয়। সমস্ত গাছপালা থম মেরে
আছে। তাঁর স্ত্রী বারান্দার তারে মেলে দেওয়া আধভেজা কাপড়গুলো দ্রুত তুলে
নিচ্ছে।
শ্যামলীর চুল খোলা। খয়েরি টিপ। একটু মেদ জমেছে শরীরে। লম্বার দিকে গড়ন ওর।
সুন্দর দেখতে। খুব ভালো গান গায়। ভালো রান্না করে। সংসারের প্রতি যত্ন আছে।
মিঃ দত্তের
প্রতি একান্ত আনুগত্য আছে। ভালোবাসার স্পর্শ আছে। পরিবারের সকলের জন্য
চিন্তা
আছে। তারপর একজন পুরুষের আর কিছু চাওয়ার থাকতে পারে না। তিনিও চান না।
একমাত্র ছেলেও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে। ঝড় উঠল বোধহয়। বাতাস বইছে দ্রুত।
মনে হল্ সব কথাবার্তা মুছে দিয়েছেন একটু আগেই মেসেঞ্জারে। আবার যে গিয়ে
কিছু
পাবেন সেখানে, সে আশা নেই। মেয়েটির বয়স অল্প। মিষ্টি একটি সংসার আছে। শুধু
সমস্যা
হলো সাধারণ কথাবার্তাগুলোর মধ্যে কিছু ভেজাল দেওয়া আছে, কীভাবে যেন ভাপ
বেরোয়, হলদে লাল হয়ে যায় চেনা পরিসর।
অন্যমনস্ক হয়ে আবার খুললেন মোবাইল। টুক করে নতুন মেসেজ। আপনাদের ওদিকে ঝড়
উঠেছে?
মিঃ দত্ত দ্রুত লিখলেন, হ্যাঁ হাওয়া বইছে। আমার স্ত্রী সমস্ত জানলা বন্ধ
করে দিচ্ছে, যাতে
ধুলো না ঢোকে ঘরে।
হাত কাঁপছে মিঃ দত্তের , তবু মন বলছে এই ভালো, এই বেশ!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন