রবিবার, ২২ মার্চ, ২০২০

তমাল রায়



ঝুরোগল্প 



অ-সময়ের গল্পস্বল্প


(১)

উত্তরের সাগর থেকে কেবল নীল সবুজ বিষণ্ণতাই নয়,ভেসে আসতো ঝড়-ঝঞ্জা-আশঙ্কাও। এক নীলাভার  সাথে থাকতে শুরু করে আমার বাবা। দুপুর হলেই প্রতিদিন ডাকচিঠির অপেক্ষার সেই শুরু। ওদিকে মাঠের ধারে খড়-কুটো কারা যেন পুড়িয়ে দিচ্ছিলো। বাতাস ভারী। আসন্ন বিপদের পূর্বাভাসে তখন লাল সেজেছে আকাশ,বাবার ওড়ার সাধ হল। 
প্রতিটা ঝাঁপেই থাকে ঝুঁকি। সে সব জেনেই তবু রেসের ঘোড়া দৌড়য়। বাবা যেদিন পাহাড়ের ঢাল বেয়ে খাদে নেমে গেল,তখনও সন্ধ্যে রাগে সাজছে আকাশ।
সেটা শেষ নয়, শুরু। এরপর আমরা হেমিংওয়ে পড়তে শুরু করলাম। দ ওল্ড ম্যান এণ্ড দ সি। উত্তরের সাগর থেকে অনেকটাই দূরে আমাদের বেঁচে বর্তে থাকা।
 

(২)

তোমার ফেরার রাস্তাগুলো ম্যাপল পাতায় ভরা। ইকুয়েডর থেকে যতবার তুমি এন সালভাদোর রওয়ানা দিয়েছ, পথিমধ্যে ঈশ্বর হাত বাড়িয়ে দাঁড় করিয়েছে। থমকে যাওয়া
  দশচক্রে বিভাজন করে দেখ, অতিবেগুনী রশ্মির জাল সরালেই একটা মাকড়সা, কেবলই রবিবারগুলো চিনে নিতে চেয়েও পারছেনা। ছুটি থেকে ছুটির দিকে যে রাস্তা তার মাঝেই উপাসনা গৃহ! মাম্পি নামের ছোট্ট বেড়ালটা সেখানে একমনে তাকিয়ে, ঐশ্বর্য যেভাবে দেখে লোভী মানুষ!  প্রার্থনার মত ম্যাপল কুড়িয়ে তুমি সেই ফিরেই চলেছ, কেবল দিক বদলেছে। অলৌকিক জলযান বলছে, এবার 'তুমি'গুলো এনসালভাদোর থেকে ইকুয়েডর যাবে। রাণাদা যেভাবে শ্মশানে গেছিলো একা! একাই৷

(৩)

জীবাণু যুদ্ধের পর, সারা পৃথিবী তখন থম মেরেছে।
 একটানা বাহাত্তর ঘন্টা! তারপর ক্যানিং লোকাল আবার দৌড়ে চললো। শহর মাড়ায়, দালান, পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়ল সোজা হামিরুদ্দিনের একটেরে ভিটের চাতালে৷ আদর পরবর্তী আলপনায় তখন ভিটে নিকোচ্ছে আঁধার। শ্বাস ঘন হয়ে এসেছে। বিপ্লব এসময়েই জন্ম নেয়। ভ্লাদিমির ইলিচ ভদকার গ্লাস হাতে থিয়েটার বোঝান।
ফিচেল বাতাস অবশ্য ততক্ষণে চলে গেছে পাশের পাড়ায়। হামিরুদ্দিনের কামরাঙা বউ নাইতে নামলো পুকুরে। ভর বিকেল বেলা পোয়াতি নারীর এসব মানায়? শোনা যায়, বহু অপেক্ষার পরও যখন কেউ উঠলোনা, মসজিদে আবার নামাজ পড়ার ওয়াক্ত, ভিজে পায়ে হেঁটে এলো সময়ের আত্মা। গায়ে জংলা ডুরে শাড়ি। রক্তে মাখামাখি!
 এরপর প্রাকৃতিক কারণেই জঙ্গলে ঢোকা নিষেধ হল। কারণ সেটা প্রজনন ঋতু। নোয়ার নৌকো নিয়ে হাসতে হাসতে জল কেটে এগিয়ে আসছে ইব্রাহিম চাচা স্বয়ং। হামিরুদ্দিনের সে কি ঘুম!



1 টি মন্তব্য: