কথা
যাঃ!
ভোরেই যাকে স্বপ্ন দেখলাম, সক্কালেই
নড়বড় করতে করতে হাজির। এক্কেবারে যেমন দেখেছি, তেমনিই। নাক
দিয়ে জল ঝরছে, ফ্যাকাশে ঝুরিপড়া মুখে আর হাসিও
বেরোয় না।
ঘোলাটে ঝাপসা মরা মাছের চোখ। ধরে বসাতে হলো। ‘উব্স, হুঁ হুঁ হুঁ, দু’গজ রাস্তা তাও আধ ঘণ্টা লাগল। পাশের বাড়ি, তাও রাস্তা ভুলেছি। কাউকে জিজ্ঞেস করতে যাব, দূর ছাই, তোমার
নামটাও ভুলে গেছি। বাড়িতেও বলে আসিনি। ফোন করব বলছ? বাড়ির কারো ফোন নম্বর মনে নেই। উঃ কি জ্বালা! নোটবুকটাও আবার কি জানি অন্য জামার বুকপকেটে হয়তো। আর ওটা এতো ভারি চলতে
গেলে ঝুঁকে যাই। সব ক্যাডার কমরেডদের ফোন নম্বর আছে তো? তাদের কেউ সংসারী আর কেউ মরা হারা। কে কার খবর রাখে? দুনিয়াটাই পাল্টে গেছে। দূর ভাল্লাগে না। কি গো? কি বলছো? কি বলে তোমার বউ?’
কানের
কাছে মুখ এনে বলতে হলো, নোটবুক
তো আপনার পকেটে। তিনি ভারি মোটা নোটবুকটা বের করে আমার হাতে দিলেন। খুলে দেখি পাতাগুলো জীর্ণ সাদা। এটা কি নিয়ে এসেছেন? এটা তো ফাঁকা? ‘হুঁ হুঁ হুঁ, কেউ আর কারোর জন্যে নয় গো।
সব ফাঁকা। কর্ম ফাঁকা বুলি ফাঁকা মিছিল ফাঁকা সভা ফাঁকা। কেউ আজকাল আমাকে বলে না, আমি শোষিত নির্যাতিত নিপীড়িত। কিংবা চলো আমরা হাতে হাত ধরে
একজুট হয়ে লড়াই লড়ি। এ লড়াই বাঁচার লড়াই। এখন বাঁচা কি আর মরা কি। সব সমান। সব
ফাঁকা। দূর ছাই। দেখো
দু’চারটে নিশ্চয় আছে। যারা আমার বার্ষিকী মানাবে। চুরানব্বুই বছরে পা দিলুম। চল্লিশ বছর আগে লেবারদের হয়ে
হুংকার দিতাম। কারখানার
মালিকদের ম্যানেজারের চেম্বারে। বন্ধ কর শোষণ। মুভমেণ্টে কত পুলিশের গুলি চলেছে হাতে পায়ে গায়ে কত যে চিহ্ন। সব শেষ গো। যত্ন
করে বহুদিন বালিশের তলায় রেডবুক রাখতাম। এখন সব বেকার। মরার পর ওটাকে ওরা চিতাতেও
দেবে না।
জ্বালিয়েও দেবে না। ফেলে
দেবে গাটারে। হুঁ
হুঁ হুঁ। কি গো? কি বলে তোমার বউ?’
আপনার
শরীর ভালো নেই। আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে বলছে ও। ‘হুঁ
হুঁ হুঁ। আজ আমার চুরানব্বুইতম জন্মদিন। দেখ দেখ! আমার কপালে চন্দনের লেপ। কানে
তুলসীপাতা গোঁজা। দেখছো না? হুঁ
হুঁ হুঁ। যাবো তো বটেই। এখানে কে থাকতে আসে! এ রঙ্গমঞ্চ। এখন মঞ্চে বড় ভীড়। কমে যাবে
কমে যাবে। তখন আসবে সাম্যবাদ। আর আজ দেখ আমার জীবনের প্রথম ভোটের দিন।
আঙুলে কালি মেখে এসেছি, হুঁ হুঁ হুঁ’। কিন্তু ভোট তো আগামী
পরশুদিন?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন