স্পেস-কম্পোজিশন
সাদা কাগজে আলো ফুটে উঠছে, বস্তুর অন্তর্নিহিত সত্তার রঙ। চাপ চাপ উজ্জ্বল রঙ মোটা বুরুষের সাপটা টানে ফিগারের জ্যামিতিক রূপ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কখনও রঙ সীমারেখা ছেড়ে মিশে যাচ্ছে, কখনও হারিয়ে যাচ্ছে জীবনগাথার বুনন-গুণে।
ধীরে ধীরে চিত্র অঙ্কন অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হয়ে গেল। রেখার জ্যামিতিক নকশা, আলোর খেলায় রঙিন ছোট বড় জমি ছবির ভারসাম্য ও
অখন্ডতা জ্ঞাপন করে। দিনরাত এক করে স্বচ্ছন্দ কম্পোজিশন-ভাবনায় জারিত হয়ে, রঙের
ভাষায় নিজেকে মিশিয়ে দিই। মাতিস, রেণোয়ার থেকে রবীন্দ্রনাথের ছবির পর ছবি দেখে আকুল হয়ে উঠি। ইওরোপীয় চিত্রে ‘ম্যাস কম্পোজিশন’ নিয়ে ভাবনার দিকগুলি বেশ ভাবায়। মানে ছবিতে ঘনবস্তুর সংস্থানের কথা। ঘরের চারদিকে
ছবি আর ছবি। আধুনিক চিত্রকলায়, অপেক্ষাকৃত অপ্রাকৃত Abstract ডিজাইনই মুখ্য হয়ে ওঠে। এই ভালো লাগা থেকে আরও বেশি
উৎসাহ বোধ করি। চিত্রে নির্মাণগত রূপে আপনা আপনি চিত্রবহির্ভূত অন্য রস এসে যায়।
মানবিক মূল্যে যোগাযোগ স্থাপন হয়। একটা আন্তরিক বোধ ও অনুভূতি
আমাকে সারাক্ষণ তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়।
ভাবতে থাকি, রাফায়েলের ছবিতে রঙের চেয়ে
কম্পোজিশন-বোধ অনেক বেশি মনকে নাড়া দেয়। রঙও রচনার অভিন্নতার খোঁজ
করি। রঙ ক্রমে ছন্দের ক্রমিকতা সৃষ্টি করতে থাকে, এই ঘূর্ণির আবর্তে ডিজাইনের মূল
সুর গতিশীল হয়।
একটি প্রাণবন্ত প্রতীতিময় ক্যানভাস জীবন্ত হয়ে
উঠছে। স্টুডিও ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। গাছ লতাপাতায় বেষ্টিত হরিণ আর ঝলমলে মেয়ে
সুনয়নার সম্বন্ধ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমার জীবনে। সুনয়না কেন আত্মহত্যা করল প্রশ্নচিহ্ন-বিদ্ধ হয়ে আঁকলাম তাকে। এই ছবির মধ্যবর্তী ফিগারগুলি ও পেছনের পশ্চাৎপট তার বিস্ময়বিহ্বল বেঁচে থাকার ক্ষণিক আভাস স্পষ্ট করতে চাইলাম।
‘শিল্পী, তোমার তুলির টানে আমাকে বাঁচিয়ে রাখলে’
‘তোমার রহস্য, প্রেম, রোমান্স আমার ল্যান্ডস্কেপের দিগন্তরেখায় তোমাকে জাগিয়ে
রাখবে চিরকাল, সুনয়না’
রাত শেষ হয়ে গেল। ভোরের আলোয় সূর্যের
আশ্চর্যরকম নতুন স্পেস-কম্পোজিশন নিক্ষেপ-প্রতিনিক্ষেপ হতে থাকল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন