শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২০

হরিদাসী


মন কী বাত  


হরিদাসী কথা কহিতে শুরু করিলে আর থামিবার লক্ষণ দেখা যায় না। কেবলই  এক ঘ্যানর ঘ্যানর। কাঞ্চনমালা, বাল্মিকীর জয়, ভারত-সংস্কার, মেঘদূত, বর্তমান  শতাব্দীর বাংলাসাহিত্য, নূতন কথা গড়া, শঙ্করাচার্য্য কি ছিলেন? -- দ্রুত নিঃশ্বাসে  হরিদাসী কহিয়া যায়। শ্রোতা হাঁফাইয়া উঠে। তাদিগের ধৈর্য্যে কুলায় না। একশত  ত্রিশ বৎসর পূর্বে যাহারা কথকতা শুনিতেন, জীবনকালে তাহাদের সময় সুযোগ,  অর্থ ও কিঞ্চিৎ তীর্থভ্রমণের উপকারিতা ইত্যাদি থাকিলেও থাকিতে পারিত, কিন্তু  হরিদাসী কখনই থাকিত না, কারণ হরিদাসী কখনই বেণাবনে মুক্তা ছড়ায় নাই। কারণ এই নয় যে উহার নিকট মুক্তা ছিল না। মুক্তা ছিল, মাত্র একটিই যৎকিঞ্চিৎ  মুক্তা উহার ছিল। মুক্তা সুন্দর, উপরন্তু সযত্নরক্ষিত, কিন্তু সে মুক্তায় হরিদাসী  কখনই মালা গাঁথে নাই।

কেন গাঁথে নাই?

সাবধান! হরিদাসী কথা কহিতে শুরু করিলে আর থামিবে না। তবে বালিকা বয়সে  একবার সে উত্তম মালা প্রস্তুত করিয়াছিল। এক হস্তে সূচি ও সূত্র। অন্য হস্তে ফুল।  টুপটুপ করিয়া তুলিয়া লইতেছে ও পরাইতেছে। যেটির উপর যেটি বসিবে, যেটির  পর যেটি বসাইলে সুন্দর দেখাইবে, সেটি ঠিক সেই রূপই বসাইয়াছিল। বালিকা  বয়স হইতেই সে কৃতকর্মা। এজন্য ফুল তুলিয়া ফেলিয়া দিতে হয় নাই। একছড়া  মালা হইয়াছিল সরু যুঁই-এর। একছড়া মোটা মল্লিকার। অন্য আর একছড়া ছোট  কুঁদ ফুলের। লাল নীল নীলাভ হরিদ্রাভ ফুল কেয়ারীতে সাজানো হইল। কেয়ারীর  পার্শ্ব হইতে দুইটি ছোট ছোট মালার আগায় ভূমিচম্পক দুলিতেছে। যুবক যতবার  হাত নাড়িতেছে, ভূমিচম্পক ততবার তাহার অঙ্গুলি স্পর্শ হইয়া ত্বক শীতল করিয়া  দিতেছে। যুবকটি বালিকা হরিদাসীকে দেখিতে আসিয়াছে। এক্ষণে কন্যপছন্দ  সমাপ্ত।

এ তো গেল ভূমিকা। সম্পূর্ণ কাহিনী পুরাই বাকি। কিন্তু হরিদাসীর জীবনকথা  লইয়া কেহ যদি কোনো অখন্ড ধারাবাহিক ইতিহাস লিখিতে ইচ্ছা করেন, একটি  জীবনভঙ্গি, একটি মননভঙ্গি, কিংবা কিঞ্চিৎ বাকভঙ্গির বিশিষ্ট রূপ ধরিতে ইচ্ছা  প্রকাশ করেন, তবে উহাকে ভারতবর্ষের সাতহাজার বর্ষের ইতিহাস, ভারতীয়  জনজাতির আর্য্যের মাত্রা কতখানি ও দেশীয় মাত্রা কি পরিমান - ব্রাহ্মণ্য  উপাদান, বৌদ্ধ  উপাদান, ইসলাম উপাদান এবং আদি জনগোষ্ঠী উপাদান   ইত্যাদি সমূলে অনুসন্ধান করিতে হইবে এবং রচনার পরিসমাপ্তিতে যা কিছু  এখানে এসেছে কিছুই মূলের শুদ্ধতা বজায় রাখতে পারেনি বরং দেশ সমাজ  সংস্কৃতি জীবনপ্রণালী কখনই শাস্ত্রীয় নিরিখে...

বাস্! বাস্!... উহাকে এখনই থামাও। ভারতবর্ষে কে থাকিবে আর কারা থাকিবে  না, এ তর্কের মীমাংসা কাল হইবে। বরং এ সত্য অনুসন্ধান অধিক জরুরী,  হরিদাসীর কি হইয়াছিল? বিবাহ হইয়াছিল? কি হয় নাই?

সে কোথা হইতে আসিয়াছিল? কতদিন আসিয়াছে? এতদিন সে কি করিয়াছে?
প্রশ্নগুলি শুধানোর পর কি আশ্চর্য্য হরিদাসী মাত্র দুই এক কথায় উত্তর সারিয়া দিল - যাদের ভালোবাসার দম থাকে না, তারা নিয়মানুযায়ী সেক্স করে। যাদের তাও  জোটে না, তারা রেপ করে। সেকিস্টদের সহ্য করা যায়, তাই বলে রেপিস্টদের? অসহ্য!


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন