শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২০

অশোক তাঁতী


অংশু মারা গেছে


অংশু মারা গেছে।
এখন ঘরদোর পরিষ্কার করতে হবে। আবার এতোটা পরিশ্রম ভেবে খুব বিরক্ত লাগল।

গত কয়েক মাস অংশু ঘরে একাই ছিল। অংশুকে কারো কোনও প্রয়োজন হয় নি। অংশুর কাউকে প্রয়োজন হয়েছে কিনা সেটাও জানা নেই।
ঘরে ঢুকে দেখলাম অংশু বিছানার ওপর চিত শুয়ে। একবার তাকালেই যে কেউ বুঝবে মারা গেছে। ওর শরীরের কাছে বিছানাটা নীচে অল্প চেপে আছে। রোগা প্যাঁকাটির মতো হয়ে গেলেও অংশুর শরীরের কিছু ভার আছে। অথচ দেখতে এতটাই জীর্ণ যে মনে হচ্ছে অল্প হাওয়া দিলেই তার শরীর বিছানা থেকে উড়ে নীচে পড়ে যাবে। যদিও পড়ে নি। হয়তো ঘরের সব জানালা বন্ধ থাকার জন্য হাওয়াও ঢুকতে পাড়ে নি।  
মুখের কাছটা ভালো করে দেখলাম। মারা যাবার সময় মুখ থেকে রক্ত উঠে এসেছে কি? অংশুর মুখে আলাদা কোনো দাগ নেই। চিমসেমারা চামড়া। দাঁত বেরিয়ে আছে। দাঁতের কাছে কোনো চামড়া নেই। চোখ কোটরে ঢুকে গেছে।   

বাইরে শীত। এখন শেষের মুখে। গাছের পাতা ঝরে পড়ছে মাটির ওপর। অংশুর শরীরটা সাবধানে চাদরে মুড়ে বাড়ি থেকে দূরে নির্জন পুকুর পাড়ে একাকী তালগাছের নীচে রেখে আসি। বাথরুমে রাখা সাবানটার ওপর অনেক ধুলো জমে আছে। ওটা দিয়েই হাতটা ধুয়ে নিই। যদিও জলে এমনি ধুয়ে নিলেই চলে যেতো, বা প্যান্টের পেছনে দু’বার মুছে নিলে।   

ঘরে ঝাড়ু লাগাই। ধুলো পরিষ্কার করি। কিছু মাকড়সার জাল। সারা ঘরে শুধু অংশুর গন্ধ ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার জীবন তাকে ঘিরে এখানেই ছিল। শরীর থেকে কিছু ধুলো খসে হাওয়াতে ভেসে বেড়াচ্ছে এখনও। জীবনটা গেলেও ধুলোগুলো থেকে গেছে এখনও। ঘরে ফিনাইল ছিটিয়ে দিই। অংশুর গন্ধ ছেড়ে হাওয়াতে ফিনাইলের গন্ধ ম ম করে।

শরীর গেলেও বিছানার তোষকের ওপর অংশুর শরীরের বায়বীয় ছাপ থেকে গেছে। বিছানার চাদর পাল্টে নতুন ধবধবে একটা চাদর পাতলে সব নতুন। হাওয়ায়, ঘরে বা বিছানায় অংশু বলে কারো কোনো অস্ত্বিত্ব থাকে না।

বসন্ত আসছে।    

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন