অবৈবাহিক
বৃন্দার
আপত্তি আছে। ঘোরতর আপত্তি। এই সম্পর্ক সে কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না। মেনে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বৃন্দা
সরাসরি তার মা বাবাকে জানিয়ে দিল, তোমরা প্রস্তাব নাকচ করে দাও। আমি হিন্দোলকে বিয়ে
করতে পারব না। কিছুতেই না।
মা
বাবা বোঝাতে লাগলেন, এটা কোনো প্রস্তাব নয়, বরং প্রতিশ্রুতি। তোর আর হিন্দোলের জন্ম একই বছরে একই মাসে হয়েছিল। তোদের
দুজনের বয়সের তফাৎ মাত্র চোদ্দদিনের। আর তুই তো জানিস, আমরা দুজনেই হিন্দোলের মা বাবার
নিতান্ত ছেলেবেলার বন্ধু। একই সঙ্গে বড় হয়ে উঠেছি। একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়েছি। আমাদের
বিয়েও হয়েছিল একই বছরে। তোরাও কোলে এলি পরের বছরেই। আর তখনই আমাদের মধ্যে কথা হয়েছিল,
বড় হলে হিন্দোলের সঙ্গে তোর বিয়ে দেব।
বৃন্দা
পালটা প্রশ্ন করল, তোমাদের মধ্যে কথা হয়েছিল, তার জন্য আমি বা হিন্দোল দায়ী নই। তোমরা
তো আমাদের কোনো সম্মতি নাও নি?
মা
হাসলেন, তোরা তো তখন সবেমাত্র জন্মেছিস। তোদের সম্মতি নেব কী করে!
আমরা
বড় হবার পরেও তো কিছু বলনি! হিন্দোলও কিছুই জানে না। সেদিন আমি হিন্দোলকে জিজ্ঞেস করেছিলাম।
হিন্দোল তো আকাশ থেকে পড়ল। ও এসব কিছুই জানে না।
বাবা
বললেন, হ্যাঁ, সেকথা ঠিকই। তোকে ও হিন্দোলকে আমরা আগে কিছু জানাব না ঠিক করেছিলাম।
আসলে আমরা দেখতে চেয়েছিলাম, তোর সঙ্গে হিন্দোলের সম্পর্কটা কেমন গড়ে ওঠে। আমাদের মতোই
তোরা দুজনেই দুজনকে জন্মের পর থেকেই চিনিস। একসঙ্গে খেলাধুলো পড়াশোনা করেছিস। এটাও
আমরা লক্ষ্য করেছি যে, হিন্দোলের সঙ্গে তোর বন্ধুত্বও খুব ঘনিষ্ঠ। কলেজ ও ইউনিভার্সিটির
এডুকেশন্যাল ট্যুরে তোরা একসঙ্গে কতবার গেছিস। এমনিও বন্ধুরা দলবেঁধে বেড়াতে গেছিস।
তোরা তো এভাবে দুজন দুজনকে কাছ থেকে দেখেছিস,
চিনেছিস! কোনোদিন তোদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য হতেও দেখিনি। তাই আমি আর তোর মা নিশ্চিন্ত ছিলাম যে, আমরা
আমাদের প্রতিশ্রতি এবার রাখতে পারব। হিন্দোলের মা বাবাও এভাবেই ব্যাপারটা ভেবেছিল।
আজ তোরা দুজনেই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছিস, চাকরি করছিস। আর তাই আমি ও তোর মা এবং হিন্দোলের
মা বাবা ঠিক করেছি, এবার আমরা তোদের বিয়ে দিতে পারি।
বৃন্দা
কখনও ভাবতেও পারেনি, তাকে আর হিন্দোলকে জড়িয়ে এরকম একটা ভাবনা তাদের মা বাবার মাথায়
আছে। কিন্তু এখন কী করবে বৃন্দা! হিন্দোলই বা কী করবে! বৃন্দা আবার দেখা করল হিন্দোলের
সঙ্গে।
তুই
একটা কিছু কর হিন্দোল! আমি তো কিছু ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছি না! বিয়ে তো আমরা করতে পারি
না! হিন্দোল বিরস গলায় বলল, আমিও তো কিছু ভেবে পাচ্ছি না! আমাদের মা বাবারা যে তলে
তলে এমন ষড়যন্ত্র পাকিয়ে রেখেছে, তা তো জানা ছিল না! বৃন্দ বেপরোয়া সুরে বলল, তাহলে
চল, আমরা আমাদের মা বাবাকে জানিয়ে দিই, আমরা বিয়ে করব না। হিন্দোল বলল, সেই ভালো। আমরা
যতদিন খুশি লিভ ইন করব, কিন্তু বিয়ে কখনই নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন