রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৯

বিদ্যুৎলেখা ঘোষ




ভোগের পুকুর ও রূপসী মাছের কথা


এসেছি এখানে গতকাল রাতে। বর্তমানে এ আমার উড়োখুড়ো অকাজেরও গোবিন্দপুর। আমার শৈশবের খেলাঘর আমার শৈশবের বিচরণভূমি। ইদানীং ভোরে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে আপনাআপনি বেশ। আলো ফুটতেই আজ বেরিয়ে পড়েছি পাড়ার রাস্তায় হাঁটতে। অনেকদিন পর শিশিরের মুক্ত জড়োয়া মাঝারি সাইজের একটা মাকড়সার জাল মাঝখানে জড়সড় নকুলদানা মতো একটা মাকড়সা। ঘন ঘন আসা হয় না বলে বহুদিন এখানে সকাল দেখাও হয় না। হাঁটতে হাঁটতে আশেপাশে উপরে তাকিয়ে দেখি শীত ডাকা নীল আকাশের অনেকটাই সবুজ পাতায় সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে আছে। কচুপাতায় ঘাসে লাল সাদা শালুকে শিশিরের রূপটান। পরিপাটি অপেক্ষা যেন কার। পায়ের পাতা ভিজিয়ে দিচ্ছে ভালোবেসে। এখানে সূর্য এত ঝলমল করে কেন কুয়াশার সর ভেঙে আশ্চর্য হয়ে ভাবি তাই। আহা! লাফিয়ে উঠতে ইচ্ছে করে ছোটবেলার মতো। ভোগের পুকুরে শরীরে ঢেউ খেলিয়ে পাড়ের কাছে এসে কুশল শুধোলো রূপসী রূপচাঁদা মাছ। 

জল ছুঁয়ে হেলে পড়া নারকেল গাছের বাঁকের গায়ে বসে পড়লাম পায়ের পাতা জলে ডুবিয়ে। ও রূপসী মাছ তুই গল্প বল, এই পুকুরে ঠাকুরের অর্ঘ্য নিবেদনের জন্য সুদানের মা কিংবা ওজু করার জন্য মৌলবি কাকা কি জল নিতে আসে আজও? দেখা হলে হেসে একে অপরের পরিবারের সদস্যদের কথা জিজ্ঞেস করে বাগানের ফুল দিয়ে যায় পরস্পরকে? ও রূপসী মাছ ঐ যুবকের লাশ ডুবেছিল যতক্ষণ ভেসে ওঠার আগে... সে কি গুঙিয়ে কেঁদেছে কোনো বুক ভাঙা, দেশ  ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া প্রেমিকের কান্না? 

দীর্ঘদিন না পাওয়ার পর হঠাৎ করে পেয়ে যাওয়া প্রেমাস্পদের কোলের মতো ভোর এলো যেন। মায়ের কোলের মতো নয়। এ তুলনা চলে না কারণ এই কোলে স্বস্তি কিংবা কিছুটা সুখ আছে বটে তবে ফুটো পাত্রের তৃষ্ণা অফুরান। ঘুম জড়ানো আবছায়া তবু পলক ফেলতে অবকাশ নেই। ‌ও রূপসী মাছ! যদি হারিয়ে যায় এই সুখ পরের ভোরে ডিটেনশন ক্যাম্পে? তবুও ভোর হয় রোজ। ঋতুও বদলায়। তাই এই সব জুড়ানো সুর নরম করে ফোটে। হলদে রোদের ওম সারা শরীর জড়িয়ে ধরে। গুনে রেখো অনিকেত মাশুল...


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন