পুজাবার্ষিকী
মিহি রোদ হেলান দিয়েছে আমার এই অভিমানী জানলায়। তাজা গন্ধে দুলে উঠছে
শার্সি
সময়।
তোমাকে একথা জানাতেই বলে উঠলে-
এত উচ্ছ্বাসের নেই কিছুই,
এখন আকাশ পূজাবার্ষিকী।
আনমনা মেঘ এসে কখন যে তোমার-
চোখ ঢেকে দেবে, হরিণ বাতাস তোমার খোলা চুলের পেঁজা ঘ্রাণ লুটে নেবে,
রিনরিনে বৃষ্টিজল তোমায় ছুঁয়ে এক্কাদোক্কা খেলতে খেলতে বলবে — ভালোবাসি খুব
ভালোবাসি!
পারবে তুমি অকপটে তা অস্বীকার করতে!
পারবে তা উপেক্ষা করে গভীর গোপন গহ্বরে উপুড় হয়ে খিল দিতে!
তোমার জড়িয়ে থাকা দানবীয় নাগপাশ ছিঁড়ে ফেলে পারবে নীল লোহিতে গা পোড়াতে!
এই যে এত আয়োজন আকাশের পুরুষ শরীরে — পারবে এ সব তছনছ করে ললিত ছন্দে
আপন দোলায় গা ভাসাতে!
তারচেয়ে একান্নবর্তী হও এই পার্বণী আকাশে
রোদ ও বৃষ্টি মেখে, চোখ ও মন রাখো যুগপৎ,
আসলে সব ভালোবাসাই তো দোসর খোঁজে।
পুর্নজন্ম
এই মাটি জন্ম সার্থক হবে যদি তোর এই ছিন্ন মূল শেকড়ে প্রাণ ফিরে আসে
প্রতিদিন এক মুঠো আলো নিয়ে,
হাওয়ার সাথে মিলে, এক আঁজলা জল দি।
হরিণীর গ্রীবার মতো বা ময়ূরের পেখমের মতো চঞ্চলতা আর নেই জানি এই দু'হাতে
তবু, ভালোবাসায় ছুঁয়ে দি - শুশ্রূষা দি,
শুধু ফিরে পেতে চাই সেই হারানো সবুজ।
ওই যে বলি "সব ভালোবাসা শুধু দোসর খোঁজে"!
আজকাল আর ঈর্ষা করি না চোখের নাগালে থাকা
গ্রীন রুফটপ,
শুধু সিল্ক রুট বেয়ে পৌঁছতে চাই সেই
হরিৎ আলোয় -
যেখান থেকে দেখা যায় লাল নীল কাঁচপোকাদের দামাল ওড়াউড়ি,
গঙ্গা ফড়িংয়ের ঘুম জড়ানো ঈষৎ নড়াচড়া!
আর যেদিন পৃথিবীর বুক চিড়ে নেমে আসবে গাঢ় বর্ষা সেদিন তোর মাটি জারিত শরীর
থেকে উঠে আসবে সোঁদা গন্ধ,
জোনাকির ভিজে পাখা দিয়ে ঝরে পড়া টুপটাপ আলো ও আলেয়া দেখে আমরা ভুলে যাবো
জীর্ণ - রুক্ষতার দুঃখ!
আর তাই,
এক রত্তি ম্লান চোখে চেয়ে থাকি আকাশের দিকে
তোর পুনর্জন্মের অপেক্ষা করে ...
মেঘমেদুর
বরষায়
আমার গেরোস্থালিতে কোন
কাঠচাঁপা বা কনকলতা গাছ নেই,
বা নেই ঝুমকোলতার ঝাড়!
নেই কোন সবুজ চিনে ঘাসের কার্পেটে মোড়া বাগান, তাই নেই সেখানে চড়াই বা
বাবুইপাখির যত্নশীল খড়কূটোর বাসা!
আমার বিশ্বস্ততার ঘেরাটোপে নেই কোন উই ডিপি বা কেঁচোর সংসার, পিঁপড়ের
ছোটাছুটি-কন্দোল।
আমার চার দেওয়ালের সংযোগে নেই কোন প্রকান্ড খোলা জানলা, যেখান থেকে দ্যাখা
যায় সিঁদুর আর হলুদে ভেজা সপসপে আকাশ, লাজুকলতা চাঁদ, সোহাগের তারা!
আমার কাছে আছে শুধু ময়ূররঙা দুচোখের আয়না
যার স্বচ্ছতোয়া জলে সারাদিন টলমল করে উঠে -
মেঘেদের ছায়ানট, লুটোপুটি কেকা রব
আর পেখমে ছড়ানো তিরতিরে হাওয়া,
এমন মেঘমেদুর বরষা’য়!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন