রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

পায়েল দেব




গান শোনার পর

নিমফুল ফুটেছে জানালার বাইরে
আধোঘুমে চাঁদ ধরে আছে বীজের গান
এইসব দ্বিবীজ গাছের দেশে ক্রমশ ফর্সা হয়ে উঠেছে পাচিল, তারপর মাচান, তারপর ভাতের হাঁড়ি 
পাশে পাতিলের মতো নিটোল সবুজ ডাবটি ঝুলে আছে অভিমানহীন
এইমাত্র ঝাঁপ দেবে
তার ডুব সাঁতার বা ডুবে যাওয়া সাঁতারে হাততালি দিতে জড়ো হয়েছে অনেক অন্ধলোক
কী দারুণ তাদের গানের গলা
হুবহু নিমবীজের মতো।
তারা আঁচল আর গামছায় গিঁট দিয়ে বেঁধে রেখেছে নদীর জল...


খরা

চারদিকে ঝিঁঝিঁ ডাক
পারাপারে ব্যস্ত নৌকো
নদীর দুই তীরে ভাটফুল 

নৌকোতে মুখোমুখি দু’জন-মানুষ আর কবি 
মানুষের দীর্ঘশ্বাসে নদী কাঁদে
কবিতায় নদী স্রোতে ভাসে

মাঝি তখন ঘুরে ঘুরে চারদিকে কু পাঠায় 
যেন পরব লেগেছে নদীর অন্তরে
বিষণ্ণ দুপুর
চাতকের তৃষ্ণা বাতাসে
নিঃশব্দে আততায়ী নেমে
জল কুলকুচি করে যায় খাঁ খাঁ সূর্যের দিকে।


বধ

আবছা জুলাইয়ের পথে নেমেছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি 
এমন সময় তোমরা কোথায়?
কোথায় গেলে?
ভালোবাসার ভেতর ইঁদুরের বিষ ঢেলে?

শেষপর্যন্ত বাড়ি ফিরেছি, গায়ে জ্বরের আঁধার
তাতে কাটাকুটি খেলা ফেলে গেছে কিশোরের দল
মাঝে মাঝে মহিষাসুরের অট্টহাসি,
ধূপের ঘ্রাণ 

ব্যাগে হাত দিই...
দেখি চারিদিকে নিরব শারদোৎসব
নতুন কাপড়ে ইঁদুরের হানাহানির ছাপ 
আনাচে কানাচে ঢিবি ঢিবি দাঁত।


প্রতিবাদ

সূর্য গভীর যৌনতা নিয়ে বাঁচে
সঙ্গম পুনরাবৃত্তি ত মানুষের কাজ
আদিম গুহা থেকে রাতে গান আসে
আমি, কবিদের ওম নিয়ে প্রতিদিন মাঠে যাই
তুমি, নীল গ্রামের নিমাই লাঙল চালাও
পুনর্নির্মাণ কর রাতের পর রাত
প্রাচীন অসুখ খুলে বের করো নিয়মিত জ্বর
আমি এসবের খুব পুরাতন দর্শক 
গতজন্মের থেকে আনা নির্জনতার দায় 
শূন্যে উবে যাওয়া উড়াল-নেশা
যাওয়ার পথে দেখা অজস্র নগ্ন মিছিল
শরীক হতে পারার  বুক চাপা ব্যথা
আরও মৃত সভ্যতা পার হলে
মিছিল থামবে চৌরাস্তার মোড়ে
যুদ্ধের বিরুদ্ধে তুমি বটগাছ মেলেছ বাতাসে
তবুও হানাহানি থামেনি
কেবল পাতাদের চিৎকার আর অট্টহাসি নিয়ে
কেউ স্মরণ সভা করছে দিনরাত।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন