একান্ত
বহুদিন দেখা না হওয়ার কিছু গুণ আছে। অভিমান পুড়ে গিয়ে, ব্যথাটুকু আগুন পেরিয়ে সোনা হয়ে যায়। আর একলার বাদরিয়াজলে, ভেজা শার্সিজুড়ে আঙ্গুল বুলিয়ে আমি তখন মিথ্যের ঈশ্বর সৃষ্টি করি। যতটা ধূসরতা তোমাকে ঈশ্বর দিয়েছে... সবটুকু মুছতে মুছতে ঝড়ের মধ্যে একজন নিজস্ব ঈশ্বর এঁকে চলেছি। এভাবেই এঁকেবেঁকে কবিতার আঁচলে, আখরের মাটিতে, বিশ্বাসের আলপনা কোজাগরী চাতালে ঘুমিয়ে
পড়ে। এরপর আমার বিছানায়
ভোর জেগে উঠলে রিংটোনে আলেয়া বেজে উঠবে... "কাল সারারাত ঘুমোতে পারিনি... তোমাকে স্বপ্নে দেখছিলাম..."
বহুদিন দেখা না হলে আমি তোমার আরও কাছাকাছি চলে যাই... একদম সমান্তরালে।
সংসার
এই যে,বুকের ভিতরে রাত জেগে
উঠছে... ইচ্ছে করছে তুমি তাকিয়ে থাকো আগের মতই... অপলক আদরে...
এই যে রাতের ভিতরে চাঁদ জেগে উঠছে... তুমি যাবতীয় দরকারী কথার মালা সাজিয়ে রাখছ ক্লান্তিকর শেষ বাসের হলুদ আলোর
নিচে। আর আমি জানলার
কাচে এলিয়ে পড়তে পড়তে ভাবছি... পথে নেমে বাজার করতে হবে... কী রাঁধি আজ? দুজনেই জানি... রাত
পার হয়ে এলো... অচেনা হওয়ার সময় এগিয়ে এলো। তবুও দুজনেই ভিড় বাঁচিয়ে গরম উনুন ভাবতে
বসি। আহারে জারিয়ে
ওঠে রাতের রোদ... সামান্য ডালভাত আর নুনজ্যোৎস্নায়।
এই যে চাঁদের ভিতরে আমি এলোচুল বেঁধে নিচ্ছি... আর তুমি জোছনায় পেতে বসেছ অগণিত ধারের ধারালো হিসেব। আচমকা আঙ্গুল তুলেছি মধ্যযামে। মেঘচাঁদে কেমন জোয়ার এসেছে দেখ! এই কালো, ওই আলো। চাঁদের বুকে চিরুনি চালায় কলঙ্ক... অন্ধকারকে বলছি, যাবতীয় প্রশ্নই একসময় উত্তর দিশায় যায়... দেখার চোখ বদলাও।
এরপর, তুমি উত্তরমুখি মুখ
তুলে চাঁদের আগলে চোখ রাখবে... আর আমরা একটা যৌথখামার জন্মাতে
দেখব। একটা চিরঅস্বীকৃতির
স্বপ্নের যৌথস্রোত। তোমরা তাকে
জোয়ার জলের ভুলস্বর্গ বলো... আমরা বলি... জ্যোৎস্নাসম... অপাপবিদ্ধ…
প্রার্থনা
রাত তিনটের আকাশ ঝনঝন করে ভাঙা কাচ হয়ে জানলার জাফরিতে
টুকরো হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুত... শরীর জুড়ে একশো তিনের উত্তাপ নিয়ে নিঃস্পৃহ
শূন্যতায়, আগুনের আলপনা দেখছি আকালের আকাশজুড়ে। আজ তোমার বহুযুগের স্বপ্ন সফল। আমার
যাবতীয় প্রার্থনার উৎসমুখে এটুকুই তো ছিল চিরকাল। তোমার হাসিমুখ।
শুধু, এই রাত তিনটের বজ্রপাতে
পুড়ে যাওয়া ভিক্টোরিয়ার পরিটাই জানছে... অন্তর থেকে বিদ্যুত শুষে
নিতে নিতে কখন যেন ভিতরটা পোড়াকাঠ হয়ে গেছে আচমকাই। তোমাদের সবটুকু সুখের মাঝখান বরাবর স্বহস্তে
মুছে ফেলছি ‘আমি’ নামক কর্কটক্রান্তি রেখা। পাকা খুনির মত কেটে নিচ্ছি নিজস্ব হৃদপিণ্ড। বোবা ব্যথায় নিজেকে মুছে নেওয়ার মধ্যে
যেটুকু ভালোবাসা লেগে থাকে... সেটুকুই হয়ত দেওয়া বাকি ছিল তোমাকে। ভেজা হাওয়ায় ভাসিয়েছি অনন্ত... ‘সুখী হও’
বহুকাল পরে অবশিষ্ট প্রার্থনা নামিয়ে রাখলাম থার্মোমিটারের
কাছে... এবার পারদের তরলতা এগিয়ে যাক নির্ভয়ে... একশো চার... পাঁচ... ছয় পেরিয়ে দিকশূন্যপুরের দিকে... নির্ভুল দ্রুততায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন