রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

সিদ্ধার্থ সিংহ




কী করে বলি

হাইকম্যান্ডকে কী করে বলি!
ও রকম দু'-চারটে খুন সবাই করতে পারে
কিন্তু এক কোপে কারও মাথা নামিয়ে
সেই মুণ্ডু নিয়ে কখনও কি ফুটবল খেলেছেন প্রকাশ্য রাস্তায়? 
তবে?
ও রকম দশ-বিশটা ধর্ষণ সবাই করতে পারে
কিন্তু আপনার নাম শুনলেই
মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে যাবে মেয়েদের স্কুল, পাপড়ি গুটিয়ে নেবে ফুল
সে রকম বিভীষিকা কি ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন চারিদিকে? 
তবে?
আপনাকে আসতে দেখলে
আশপাশের বাজার, চৌরাস্তার মোড়
কিংবা অফিসপাড়া
খরগোশ হয়ে যেতেই পারে
কিন্তু ওদের ভিতরের বাঘটাও যে মাথা নুইয়ে কোণে গিয়ে লুকোবে
সে রকম কুচকুচে কালো মেঘে কি ঢেকে দিতে পেরেছেন গোটা আকাশ? 
তবে?
হাইকম্যান্ডকে আমি কী করে বলি
এ বার অন্তত ভোটে দাঁড়ানোর জন্য আপনাকে একটা টিকিট দিক! 

চারাগুলো কখন

একটু ঝোড়ো হাওয়াতেও কখনও-সখনও উড়ে যেত ছাউনি
ঘর ধুলোয় ধুলোময় হয়ে উঠত
ক্যালেন্ডার অনবরত আছাড় খেত দেয়ালে
বালতির জলে ভাসত সর
বৃষ্টিতে ভিজে একশা হত সব
বাচ্চাদের নিয়ে তক্তাপোশের তলায় মাথা গুঁজত রতি
জলের তোড়ে ভেসে যেত দু'-একটা সদ্যপোঁতা চারা
আমি ঘন ঘন আকাশের দিকে তাকাতাম
ভাবতাম, রাহুলটা যদি বড় হত!
শুধু রাহুল নয়, ওরা সব ক'টা ভাই-বোনই এখন বড় হয়ে গেছে
এত বড় যে এ ঘরে আর ধরেনি
যে যার মতো দূরে গিয়ে, গেড়েছে শিকড়।
এখনও ঝোড়ো হাওয়া ছুটোছুটি করে, ঝাপটা মারে তুফান
আমরা দুই বুড়োবুড়ি খাটে '' হয়ে বসে থাকি আশঙ্কায়, 
ছাউনি তেমনই থাকে, উড়ে যায় না কোনও খড়কুটোও।
ভিটের সীমানা জুড়ে রাহুলরা বুঝে বুক পেতে হয়েছে প্রহরী? 
দাওয়ায় বেরিয়ে দেখি, চারাগুলো কখন গাছ হয়ে গেছে! 

আমার ছেলে যেন

আমার ছেলে যেন কোনও দিন ফার্স্ট না হয়
হলে থার্ড হোক
খুব বেশি হলে সেকেন্ড।
পড়াশোনায় আমি মোটেও ভাল ছিলাম না
টায়ে-টুয়ে টেনে-হিঁচড়ে কোনও মতে ক্লাসে উঠতাম।
বন্ধুরা আমার দিকে তির্যক দৃষ্টিতে তাকাত
কাছে গেলে নিজেদের মধ্যে গল্পে মশগুল হত ওরা।
আমি ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে বসতাম
ফার্স্ট বয় বসত প্রথম বেঞ্চে। 
টিফিনের সময় সবাই হইহই করে বেরিয়ে যেত
খাঁ খাঁ ক্লাসে তখন আমি একা
আর ধীরে ধীরে বইয়ের ব্যাগ গোছাত
প্রথম বেঞ্চের সেই ফার্স্ট বয়। 
ওকে দেখে আমার মনে হত
আমার চেয়েও ও কত একা, কত নিঃসঙ্দ।
আমার ছেলে যেন কোনও দিন ফার্স্ট না হয়
হলে থার্ড হোক
খুব বেশি হলে সেকেন্ড। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন