সূর্যাস্ত
এক নিয়মমাফিক সিঁদুরখেলা। সুমঙ্গলা নারীটির সিঁদুরে বিলাসও বলতে পারো। অবক্ষয়ের
জামা গায়ে এই যে জীবনযাপন সেখানে যেকটা আয়না থাকে সবেতেই সূর্যাস্ত বাজতে থাকে আপন
রঙে আপন ঢঙে। আমরা শুধু স্থান কাল পাত্র বদলে বদলে পরখ করে দেখি কতটা নরম বা
সুস্বাদু হবে মাংসের বিপনি থেকে কেনা ভুল রতিসুখ। তোমাদের অবিরল মিছিলে আমি কোনো
প্রতিবাদী মুখ দেখিনা, যতটা মুখর হলে গোধূলির লিরিক উচ্ছ্বাস থেকে তুলে রাখা যায়
আলোকণাগুলো। ভ্রষ্ট পুরুষের বিষাক্ত বীর্যে সস্তা লিপস্টিক ধুয়ে গেলে আঙুলে বাজে
না কোনো মূক সূর্যাস্ত। শুধু পারদের কারচুপিমাখা আয়নায় বেজে ওঠে মুখর
সূর্যাস্ত।
সূর্যাস্ত খুব পরিচিত এক দৃশ্য। ১৫০ মিলিয়ান
কিলোমিটার দূরের একটি নক্ষত্র। সেই
জন্মলগ্ন থেকেই নিত্যদিন ঝাঁক ঝাঁক ফোটন কণার স্রোত দিয়ে অব্যাহত রেখেছে এই
পৃথিবীর প্রাণের স্পন্দন। সেই সূর্যের আপাত চলন, যেখানে ভূগোলের বিস্তার আমাদের
চোখের সীমানা নিয়ে ছেলেখেলা করে। বেঁধে রাখা দৃষ্টিতন্ত্রের সেই অভ্যস্ত পথে তার
যাতায়াত। উদয়াস্ত। এখন প্রশ্ন হল যেটা কেবল দৃশ্য ছিল কীভাবে সে বেজে ওঠে? কোথায়ই
বা বাজল? শ্রবণতন্ত্রের কোন সীমানায়? তবে কি আমাদের কনসাশনেসই তার কলকাঠি নাড়ল?
ম্যাজিশিয়ানের যাদুদণ্ডটি যেখানেই ছোঁয়ানো যাক না কেন, যেমন ম্যাজিকের ঘোর লাগে,
ঠিক তেমনি কবির চেতনাও একটি দৃশ্যকে স্পর্শ করলে তাতে সঙ্গীতের মূর্ছনা বেজে উঠছে।
এখানেই কবি ধীমান চক্রবর্তী অনন্যসাধারণ। তাই তাঁর প্রবন্ধ সংকলনের নাম রাখেন “বেজে ওঠা সূর্যাস্ত”। বস্তুপুঞ্জের প্রচলিত ছক ছাড়িয়ে ভিন্নতর অনুভবে বেজে উঠতে
পারেন ধীমান। তা পারেন। বেজে উঠতেই পারেন। কিন্তু তাই বলে পাঠক কেন বাজবে? দৃশ্যকে
বাজিয়ে তুললেই সে যে সবার কর্ণগোচর হবে এমন বাধ্যবাধকতা কোথায়? আসুন উত্তরটা
ধীমানের ভাষাতেই শুনে নিই –
যিনি কবিতা নির্মাণ করেন এবং যিনি পড়েন – তাঁরা কোনও এক বিন্দুতে এসে মিলিত হন নিশ্চিত। না হলে
কবিতা লেখা এবং পড়া হতো না। সম্ভবতঃ এই মিলন বিন্দুটিতে থাকে “অনুভব ও বোধ” নামক
শব্দদুটি, যা কবি ও পাঠককে মেলায়, মিলতে সাহায্য করে। বুতে পারা নয়, জন্ম হয় এক
ভালোলাগার (কবিতায় নিজস্ব নির্মাণ ও
অন্তরাল, পৃষ্ঠা-৮৬) জন্ম হয় এক ভালোবাসার। বাংলাভাষাকে ভালোবেসেই একদিন শুরু
হয়েছিল নতুন কবিতা আন্দোলন। তাকে ভালোবেসেই একদল কবি তার শরীর থেকে ঝরিয়ে ফেলতে
চেয়েছিলেন পুরনো রূপ; গল্প বর্ণনা অলঙ্কার রূপক প্রতীক উপমা চিত্ররূপ নিটোল
ইমেজারি সমস্ত ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আসলে প্রতি যুগেই থাকে পূর্ববর্তীকে
নস্যাৎ করার স্বপ্ন। কিন্তু শুধুমাত্র ভাঙন আর বিনির্মাণের কোল পেতে দিলে দিগ্বালিকা
নিশ্চিন্ত পা রাখেনা। ধূসর
দিগন্তহীনতায় হাঁপ ধরে আসে। তাই নতুন কবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা বিনির্মিত টুকরোগুলো
আদরে তুলে নিয়ে গাঁথেন নতুন বাক্যমালা। প্রতিদিনের চলতিপথের ঘাত অভিঘাত কুড়িয়ে কিছু স্পন্দন; কোনো এক মুহূর্তের
অভিজ্ঞতা ক্রিয়া ও বিক্রিয়া মুছে কিছু অনুরণন; সমস্তই কবি জড়ো করেন মাথার মধ্যে।
জারিত হতে হতে বাস্তব মুহূর্ত হারাতে থাকে তার সত্য ও বাস্তবতা। অবিরাম জলযুক্তির
মধ্যে দিয়ে আবিষ্কারের সম্ভাবনায় কবি বুঁদ হতে থাকেন। আর এই প্রসেস চলাকালীন কবি
যে কল্পনার রাজ্যে ডানা মেলেন সেই অনুভবের শব্দসজ্জাই কবিতা। ধীমান বলেন, যা আছে
তাই আমাদের অভিজ্ঞতায় জারিত হয়ে প্রকাশ মাধ্যমের সহায়তায় পাঠকের সামনে উপস্থিত হয়
কবিতা বা শিল্প হিসেবে। ‘যা আছে’ তার বাইরে যাওয়ার কথা বলা যায় না। ফলে, শিল্পী বা কবি
সচেতনভাবে হোক আর না হোক, যা উপস্থাপিত করেন তা আমাদের অভিজ্ঞতা প্রসূত –সেখানে কাল্পনিক অভিজ্ঞতার হয়ত কোনো স্থান নেই। একথা স্বীকার্য যে শিল্পের বা
লেখার দুটো স্তর আছে – একটা খাতায় কলমে লেখার
আগে পর্যন্ত যা তাঁর মননে চিন্তায় অভিজ্ঞতায় কাজ করে চলে এবং সেই অবস্থা থেকে
দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি নীত হন যখন তাঁর চিন্তা ভাবনা অভিজ্ঞতা একটি অবয়ব লাভ করে।
এই অবয়ব নির্মাণও সবসময় নির্দিষ্ট নয়। কেননা আমরা দেখি বা জানি যে ওই গঠিত অবয়ব বা
মূর্তির ওপর কবি বা শিল্পী তৃতীয়বার দ্বিধাহীন কাঁটাছেঁড়া করতে পিছপা হন না।
সেক্ষেত্রে তাঁর মনন ও চিন্তার অন্যরকম পুনরায় প্রকাশ ভঙ্গিমা কবির সাথে সাথে
আমরাও মেনে নিতে বাধ্য হই। সুতরাং স্থির নির্দিষ্ট কোনো কাল্পনিক অভিজ্ঞতার
অবতারণা না করাই শ্রেয়। কেননা একজন কবি বা শিল্পীর অনুভাবনার কেলাসিত রূপের
প্রতিচ্ছবি আমরা পাই তাঁর সৃষ্টিতে। এবং এই কেলাসন হয়ত ‘যা আছে’ শুধুমাত্র তার ভিত্তিতে। (কবিতার ভাষা,
পৃষ্ঠা-১৩)
কবিতার ভাষা নিয়ে ধীমানের ভাবনাগুলি রূপ পেয়েছে এই
প্রবন্ধটিতে। কবিতার ভাষা পাল্টে যায় কারণ সময় থেকে সময়ে কবিতাকে ধারণ করে যে ভাষা
তার গঠনতন্ত্র বদলে যায়। আর গঠনের সেই শিল্পযজ্ঞে শব্দই তো সমিধ। শব্দের
শরীরীভাষায় যে অস্থিরতা থির থির করে কাঁপতে থাকে, সেখান থেকেই এক গভীর আহ্বান
ধ্বনিত হতে থাকে কবির নির্মাণ প্রসেসের অন্তরমহলে। রহস্যময় বিস্ময়কর উজ্জ্বল বা
সাঙ্কেতিক গূঢ়তায় তীক্ষ্ণ কবিতাটিকে কবি যখন পাঠকের দরবারে পেশ করতে যান, অতি
ব্যবহারে ক্লিশে ভোঁতা অনুজ্জ্বল শব্দমালা ও ক্রিয়াপদে এসে থমকে যান কবি। পাঠকের
সাথে যোগাযোগের যে সেতু সেই ভাষাই হয়ে উঠে তাঁর প্রধান বাধা। কবি হাতড়ে ফেরেন
শব্দের উৎস, আনকোরা শব্দব্রহ্ম। প্রবেশ করেন শব্দের অন্দরমহলে। শব্দের আলো আঁধারি রূপকথারা মূর্ত হয়ে ওঠে। পূর্বের
পরিচিত শব্দার্থ ছেড়ে সে যেন আরো কিছু বলতে চায়। একটা সেতু বা সংযোগ তৈরি করতে চায় কবির চেতনায় ভাবনায়। এভাবেই শুরু হয় নতুন ভাষার সন্ধান। ভাবতে হয়
প্রতিশব্দ জোড়শব্দ কল্পশব্দ। প্রয়োজনে
বিদেশী শব্দ। প্রাকৃত চলতি শব্দও বাদ পড়ে না। শব্দের এই প্রয়োগ পদ্ধতির পরিবর্তনই
ভাষায় আনে যুগান্তর। গড়ে উঠতে থাকে নতুন কবিতার আবহ ও পরিমণ্ডল। কবি দৃশ্য গাঁথেন,
চলমান দৃশ্য। আর সেই দৃশ্যগুলি গাঁথার জন্য শব্দ তার আভিধানিক অর্থ অতিক্রম করে
কবির অভিপ্রেত অন্য এক গূঢ় অর্থ যোগ করে অন্তর্হিত হয়ে যায়। নির্মিত শব্দটি কবিতার
হৃদয়ে রেখে যায় অস্পষ্ট ছাপ। সেখান থেকেই কবি গড়ে তোলেন ভাবনাপ্রধান গমন ও
প্রতিগমনের নিজস্ব শব্দভান্ডার।
শব্দের ছুঁৎমার্গীতায় বিশ্বাস করেন না ধীমান। ভূগোল ও
ইতিহাসের পরিভাষা, নৃতত্ত্ব ও বিজ্ঞানের পরিভাষা একটি বিশেষ শাখার শব্দ হয়েও নতুন
কবির হাতে অক্লেশে হয়ে উঠছে কবিতার ভাষা। ট্রায়াল এন্ড এরর পদ্ধতিতে নিজেকে ভাঙতে
ভাঙতে এগিয়ে চলার কথা বলেন ধীমান। কবিতার এই নতুন পথে নির্মোহ ভঙ্গিতেই নির্মাণ
হবে নতুনতর কমিউনিকেশন। আর পাঠক পেতে থাকবেন সুদূরপ্রসারী বিচ্ছুরিত আলো, ভিন্ন
চেতন পৃথিবী। বাংলাভাষার মাত্র আঠাশটা ক্রিয়াপদ; ব্যয় হতে হতে ব্যয় হতে হতে আজ
তোতলামির পর্যায়ে। তাই দীর্ঘ ক্রিয়াপদ ভেঙে ফেলে অর্ধসমাপ্ত
ক্রিয়াপদ অথবা ক্রিয়াপদ বর্জিত কবিতাভাষা গড়ে তোলার প্রয়াসী তিনি।
একজন কবির কাছে প্রায়শই উঠে আসে তার সামাজিক দায়বদ্ধতার
প্রশ্ন। বিপ্লব, বন্দুক, নিশান, সাম্য এসব শব্দের আমদানি করে কিছু কবি তৃপ্তি পেতে
পারেন। কিন্তু কবি তো সমাজবিপ্লবের অস্ত্র নয়; কিংবা সাম্যবাদের যন্ত্রও নয়। তাই তার কবিতারও সমাজসংস্কারের দায় নেই। কবিতায়
পাঠকের অনুভূতি জাগ্রত হবে, একই সূত্রে বাঁধা পড়বেন দুই ভিন্ন ব্যক্তিত্ব, একই
বোধির দরবারে উজ্জ্বল আলোর নিচে খুঁজে পাবেন নিজেকে - এটুকুই শুধু কবিতার দায়। কবি
শুধু দায়বদ্ধ তার চেতনার কাছে, অনুভবের সৎ প্রতিফলনের কাছে। দ্বিতীয় জীবনে কবি
হলেও প্রথম জীবনে তিনি সমাজবদ্ধ মানুষ। তাই তার চেতনে মননে সমাজ সচেতনতা গড়ে ওঠে
স্বাভাবিকভাবেই। তাহলে কি সামাজিক ঘটনাবলীর প্রতিক্রিয়াই কবিতা? নিজের সৎ
উপলব্ধিকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রকাশ করেছেন ধীমান –
সমাজে থাকতে গেলে মানুষের কিছু না কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। এবং
কোনো একজন তো প্রথমে মানুষ তারপর কবি। সমাজে থাকবো, সামাজিক দায়বদ্ধতা স্বীকার করব
না – এ তো পিছন ফিরে দৌড় দেওয়া বলা যায়। ...শুধুমাত্র
সামাজিক ঘটনাবলীর প্রতিক্রিয়া টুকে রাখার জন্য কবিতা লিখতে বসার প্রশ্নই নেই। যে
কোন ঘটনাই সরাসরি উঠে আসতে পারে কবিতায়, যদি সে লেখা শেষপর্যন্ত কবিতা হয়ে ওঠে।
(কবিতার দিকগুলি, পৃষ্ঠা-৯)
কবিতার ট্রেকিং। বন্ধঘর কবিতা
ওয়ার্কশপকে একধরনের পূর্ণতা দিতে চাওয়ার নাম
কবিতা ট্রেকিং।
অর্থাৎ কবিতাকে নিয়ে বাইরে বেরোনো, হাঁটাযোগে বিষাদবিয়োগ। তবু কবি ভিন্ন হলে ভাবনা ভিন্ন। যেমন কবি স্বপন রায়
বলেন কবিতার ট্রেকিং, যেখানে কবিতাই একমাত্র ধ্বনি, মণি বা হৃৎস্পন্দন। চলার ছন্দই
উড়িয়ে নিয়ে যায় কবিতার ছান্দিক চলন। নিয়মের বেড়াজাল ছিঁড়ে পাকদন্ডীর পাকে পাকে
অপেক্ষমাণ সম্ভাবনারা ডানা মেলে সম্প্রসারিত চেতনায়। আর ধীমান চক্রবর্তী বলেন,
ভ্রমণ বা কবিতা পাঠের আসরের সঙ্গে কবিতা নির্মাণের বিশেষ যোগ আছে বলে মনে হয়না।
যেখানে যেভাবেই থাকা যাক, পর্যবেক্ষণের সঙ্গে কবিতার কিছু সংযোগ আছে। ভ্রমণ বা
ক্যামেরা কোনও কবিতা নয়। ঐ সময়ের কিছু অনুভব চেতনার সঙ্গে মিলেমিশে দ্বান্দ্বিকতার
জন্ম দিতে দিতে কবিতায়। (ভ্রমণ বা ক্যামেরা কোনো কবিতা নয়, পৃষ্ঠা-১৯)
হঠাৎ ঝলকে দুই কবির ভাবনা আলাদা মনে হলেও অন্তর্লীন স্রোতটি
কিন্তু বয়ে চলেছে একটি মোহনার দিকেই – তার
নাম অনুভব। যে নামেই ডাকো যে ভঙ্গিতেই প্রকাশ করো বোধির পাঠশালায় তার চরণধ্বনি
বাজবেই। শুধু শ্রবণতন্ত্রে এক টুকরো মাত্রাযোগ, দর্শনের কোনারকে কিছুটা চলমান
চক্রবোধ। হঠাৎ আলোর ঝলকানি লেগে বাজবেই সে যে বাজবেই।
যদি বিগব্যাংকেই সময়ের শুরু বলে ধরা যায়, তবে প্রায় 13.7
বিলিয়ান বছর বয়স হল সময়ের অথচ এই বয়স্ক বিষয়টাকে নসাৎ করে ধীমান বলেন, সময় বলে
কিছু হয় না। এক সম্পূর্ণ আলোড়নকে অতীত বর্তমান ভবিষ্যত নামে ডাকা হয়, ভাগ করা হয়।
সময় হচ্ছে একটি ধারণা, আমাদের কার্যক্রমের একক মাত্র। (তা তা থৈ থৈ... পৃষ্ঠা-১১০)
মহাকাল যেন এক প্রবাহের মত। অনাদি অনন্ত বিস্তার। আমাদের
ছোটো ছোটো হাতে সেই অনন্তকে বস্তুর বাস্তববাদজাত ঘড়ির বাঁধনে বাঁধতে গেলেই গুবলেট
হয়ে পড়ে ফোর্থ ডাইমেনশানের সীমানা। অতীত বর্তমান ভবিষ্যত তার সমস্ত আলোড়ন নিয়ে
ইউনিফায়েড হয়ে আসে সময়ের নাভিতে। সেই নাভি থেকে উৎসারিত তৃতীয় পদচিহ্নে নতজানু কবি
ঘড়ি শব্দটাকেই গুরুত্বহীন করে তোলেন; খুঁজে ফেরেন নিজেকে। সময়ের আদিগন্ত দাগ
পেরিয়ে অস্থির পেন্ডুলামের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় ধীমান তাকে ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো করে
মিশিয়ে দেন কবিতা ধুলোয়।
কবিতার গন্তব্যের প্রশ্ন উঠলে ধীমান নাকচ করেন সরাসরি।
গন্তব্য মানেই তো পৌঁছে যাওয়া। আর পৌঁছনো মানে দাঁড়িয়ে যাওয়া; যেখানে কবিতা নেই।
পৌঁছনো মানে একটা নিয়ম বা সিস্টেমের হাতলে নিজেকে পুরে দেওয়া; যেখানে কবিতা নেই।
পৌঁছনো মানে একটি প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য; যেখানে কবিতা নেই। কবিতা সতত চলমান। “তা তা থৈ থৈ / কোথাও থেমো না সই” ।
যাঁর বেজে
ওঠা সূর্যাস্ত থেকে আমার এই সূর্য পরিক্রমা তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
আশির দশক থেকে বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কবি ধীমান চক্রবর্তী। জন্ম ও বেড়ে ওঠা: কলকাতা। প্রতিষ্ঠানবিরোধী কবি বাংলাভাষা ও শব্দের পুরোনো ঐতিহ্য ভেঙে, তার নান্দনিকতা
অতিক্রম করে ধ্বনিসচেতন এক নতুন ভাষার সন্ধান করেছেন। প্রথম সম্পাদিত পত্রিকা 'আলাপ'। প্রথম কবিতার বই ১৯৮৭ সালে আপনাদের স্মরণে। তারপর প্রকাশিত হয় বহু কবিতাগ্রন্থ: আগুনের আরামকেদারা (আগামী, ১৯৮৯),
Dream Sequence and Snake Ladder (১৯৯৮), ধূসরজিপসি বৃষ্টিরিক্সা (কবিতা পাক্ষিক, ১৯৯৯), বয়স-সন্ধিতে কয়েক মাইল নিষিদ্ধ পায়রা (আলাপ, ২০০০), সাদা আশ্রয় (নান্দীমুখ সংসদ, ২০০৫), ফুল তোলা কুয়াশা (নান্দীমুখ সংসদ, ২০০৬), মোরামে ফাল্গুনে (নতুন কবিতা, ২০০৮), ধীমানের চরাচর (সংকলন, কৌরব, ২০০৮), জেব্রা পারাপার থেকে (নতুন কবিতা, ২০১১), ছায়াদের ভালোটুকু (ভিন্নমুখ, ২০১৫), দ্বিতীয়
পৃথিবী
(আকাশ, ২০১৭) ইত্যাদি। প্রকাশিত প্রবন্ধের বই: বেজে ওঠা সূর্যাস্ত (নতুন কবিতা, ২০০৯)। তিনি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে 'ভিন্নমুখ’ পত্রিকার সম্পাদক। ধীমান চক্রবর্তী বিভিন্ন বইয়ের জন্য বহু পুরস্কার পান। বিষ্ণু দে পুরস্কার (১৯৯০), কৌস্তভ
পুরস্কার (১৯৯৭), কবিতা পাক্ষিক সম্মাননা পুরস্কার (১৯৯৮), সেই সন্দীপন সম্মাননা
পুরস্কার (২০০১), মঞ্জুষ দাশগুপ্ত সম্মাননা পুরস্কার (২০০৩), সাহিত্য রংবেরং
পুরস্কার (২০০৭), ‘আমি’-পত্রিকা সম্মাননা পুরস্কার (২০১০), ‘কালকথা’-পত্রিকা
সম্মাননা পুরস্কার (২০১৬)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন