‘টান’
চলচ্চিত্রের নাম ‘টান’। ২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছে।
চলচ্চিত্রটি মুকুল রায়চৌধুরীর পরিচালনায় জল-জঙ্গল ও জলবেশ্যাদের জীবন
নিয়ে নির্মিত হয়েছে। কাহিনী শুরু হয়েছে
সুন্দরবনের ভিতর প্রত্যন্ত এক গ্রামে। যেখানে একদল ব্যবসায়ী জীবনের কঠিন বাস্তবে এনে দাঁড় করায়
কিছু নারীকে। এখানে প্রতিরাতে নারীরা ধর্ষিত হয় স্নো,পাউডার, লিপস্টিকের আড়ালে। রাত বাড়লেই মেয়েরা দাঁড়িয়ে থাকে নদীর পাড়ে। খাড়ির
কিনারে। কিছু পয়সার বিনিময়ে জলবেশ্যারা
বিলিয়ে দেয় নিজেদের ইজ্জত। একদল পুরুষরূপী
হায়না ছিঁড়ে খায় নরম তুলতুলে শরীর।
এখানে কোনো পরব নেই। এক বসন্ত আসে, আবার
চলেও যায়। কেউ তার খবর রাখে না। আছে অভাব, অনটন। দারিদ্রসীমার নীচে থাকা
মানুষগুলোর খাওয়ার পয়সা না থাকলেও শারীরিক চাহিদা মেটানোর পয়সা ঠিকই জুটে যায়।
তেমনই এক মেয়ের গল্প বলা হয়েছে এখানে সুন্দরীর
চরিত্রে। তার রূপ, শরীরের গঠন সম্পত্তি হয়ে ওঠে এক
সর্দারের। সর্দারের শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্য
যেন সুন্দরীকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। আর এই সুন্দরীর মত বেশ্যাদের পরিচালনা করার জন্য মাসি নামক এক শ্রেণী থেকেই
যায়। এরা ঠিক করে দেয়, কোন বেশ্যা কোন
নৌকায় রাত কাটাবে। নৌকায় কত
রাত অবধি লণ্ঠন জ্বলবে।
এই বেশ্যানারীরা কোনদিন খুঁজে পায় না তাদের মনের
মানুষ। কেননা, বাবুরা শুধুমাত্র ফূর্তির
তাগিদে উপস্থিত হয় তাদের কাছে। জলবেশ্যারা রূপ, যৌবনের
খাতিরে একে অন্যকে হিংসা করে। যেমন সুন্দরীকে হিংসা করে গ্রামের মেয়েরা।
কিন্তু যে সর্দারের
সম্পত্তি ছিল সুন্দরী, সেই সর্দারও মুখ ফিরিয়ে নেয় তার থেকে একদিন। আর ঠিক এমনই
এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে সুন্দরী খুঁজে পায় তার মনের মানুষ। সাজুকে। পেশায় ফোটোগ্রাফার। জল জঙ্গলের ছবি
তোলে সে। তারপর নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এসে
দাঁড়ায় তাদের সম্পর্ক। সুন্দরীর সাথে ঘর
বাঁধে সাজু নির্জন এক খাড়িতে গিয়ে। নদী, জল, জঙ্গল
নিয়ে এমনই এক দারুণ চলচ্চিত্র মুকুল রায়চৌধুরী পরিচালিত ‘টান’।
এই ছবিতে জীবনের যে টানাপড়েন দেখানো হয়েছে, তা বড়ই করুণ। সমাজের অবহেলিত,
নিপীড়িত মানুষদের জীবনের খণ্ডচিত্র ধরা হয়েছে এই চলচ্চিত্রে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন