বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৯

জ্যোতির্ময় মুখার্জি




ইনস্ এন্ড আউটস্
                  
যা কিছু গভীর, তাকে কবিতা ভাবতে ভাবতে
জলের কাছে স্থির হয়ে আছে অভ‍্যাস

মৃদু হয়ে আসছে আলো
তোমাকে বিষন্নতা ভেবে, ঘুমিয়ে পড়েছে চোখ

ঘুমের ভিতর ভিতর হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি

ঘিলুর চারপাশে কারা যেন জেগে উঠেছে
ওদের হাত নেই, পা নেই, মাথাও নেই
শুধু থলথলে কিছু ঘিলু, পোকাদের মতো

বমি বমি পাচ্ছে এবং একটা ভয়

তাড়াতাড়ি ঘুমন্ত মাথাটাকে ঘুমের ভিতর
তুলে নিয়ে এসে, জলে চুবিয়ে চুবিয়ে দেখি

জলের ভিতর ভিতর ঘুমিয়ে পড়েনি তো জল?


শব্দরা

এখন আর কিছু লেখা হয়ে ওঠে না। মানে, লেখা হয় কিন্তু শব্দগুলোকে নিয়ে কাটাকুটি খেলতে খেলতে কখন যেন তারা সুরুৎ করে ব্লাঙ্কেটের নীচে

ব্লাঙ্কেটের নীচটা বেশ গরম। আমার নিশ্বাস আর বউয়ের নিশ্বাসের যোগফলে ব্লাঙ্কেটটাও নিশ্চিন্তে দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে থাকে

শব্দরা জুবুথুবু হয়ে কিছুক্ষণ, কাছেই কিন্তু একটু দূরে। ধরতে যাই, আর ওরা ডিগবাজি মারতে মারতে কখনো পায়ের দিকে, কখনো পিঠ

আর ঠিক তখনই শব্দরা লাফাতে লাফাতে ফিরে এসে, ‘উফ্ এতো লাফাচ্ছো কেন? ঢাকাটা খুলে যাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছো না?’

ন্না, মানে আমি কবিতা লিখছি


একটা দীর্ঘ কবিতা, জীবনভর

মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় পৃথিবীর কানটা মুলে চুপ করিয়ে দিই। একদম চুপ। মিউট্। কোনো শব্দ নেই অথচ শব্দরা কিলকিব করছে আমার চারপাশে

সেখান থেকে একটা একটা করে শব্দ তুলব। ঠ‍্যাঙ্ তুলে প্রথমেই, মেদী না মদা। তারপর কানটা কষে মুলে বা ল‍্যাজটা মুচড়ে মুচড়ে দেখে নেব হালুম করছে না ঘেউ

যদি পছন্দসই হয়, তখন নিজের পালস্-এ আঙুল রেখে, কান চেপে ধরব শব্দের বুকে। মন দিয়ে, ওর ধুকপুক ধুকপুক। পৃথিবী মিউট্, তাই শব্দে শব্দ মিশে যাওয়ার কোনো ভয় নেই আর

আমার হার্টবিটের ফ্রিকোয়েন্সির সাথে ম‍্যাচ্ করেব যে সমস্ত ধুকপুক, সেই শব্দগুলো রাখব বামপাশে। (যদিও আমি বামপন্থী নই, ডানপন্থীও। পিউর সুবিধাপন্থী বলা যেতে পারে) আর যেগুলো ম‍্যাচ্ করবে না সেগুলো ডানপাশে

এবার ডানহাত দিয়ে একটা বাম শব্দ, আর বামহাত দিয়ে একটা ডান। ক্রস্। ছানাপোনা। আবার দুটো। তারপর আবার আবার। এন্ডলেস্

শব্দরা এখন খেলছে, ছুটছে, ডিগবাজি মারছে। মা শব্দ, বাবা শব্দ, দাদু শব্দ, দাদা কাকা মামা চাচা চাচি মামি দিদি নানি শব্দ শব্দ শব্দ‌। ক্রমশ ভরে ভরে আমার চারপাশ। এতো শব্দ। এতো এতো শব্দ অথচ কী আশ্চর্য কোনো গোলোযোগ নেই। প্রত‍্যেকের ফ্রিকোয়েন্সি এক, আমার লাব্ ডুবা ডুবের তালে তালে

যাক, এবার নিশ্চিন্ত হয়ে কবিতা লেখা যেতে পারে। একটা দীর্ঘ কবিতা, জীবনভর


বিউটিস্পট

কিছু কিছু সুন্দরীর চিবুকে তিল থাকে, বা বলা ভালো চিবুকে তিল থাকলেই মেয়েরা সুন্দরী হয়ে ওঠে। যেমন ছিল পিয়ালীর, আছে। মন্দিরার ছিল কি? মনে পড়ে না। অথচ একসময় কী ভীষণ ভালো লাগতো ওকে

যাইহোক, মূল কথা হল চিবুকে তিল থাকলেই মেয়েরা কেন সুন্দর হয়ে ওঠে বা সুন্দরী মেয়েদেরই কেন চিবুকে তিল থাকে? না, সুন্দরী না হলে তিল চোখে পড়ে না? জানি না, এই বিষয়ে কোনো গবেষণা হয়েছে বলেও মনে হয় না, ভবিষ্যতে হবে এমন আশাও রাখি না

কিন্তু আমার প্রশ্ন, একটা তিল কেন তাদের সুন্দর করে তুলবে? অকারণ। কবিতার মতো। যেভাবে একটা শব্দ বা বাক্য কোনো কোনো কবিতাকে ছুড়ে ফেলে স্বর্গের ঝাড়ে


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন