কস্তুরী
আভার চাঁদ
মা বলেছিল- আজ যাস না। এত
জ্বর গায়ে, একটা ক্লাসটেস্ট না দিলেই বা কী! ও শোনেনি। বরং জ্বর গায়ে শাওয়ারের
তলায় দাঁড়িয়ে শরীরে সাবান ঘষতে ঘষতে গজগজ করছিল, বেশ করবে, ক্লাসে যাবে। স্নান করবে।
থাকুক জ্বর।
ডিসেম্বরের সকাল। তায় জ্বর। রিয়ার অবশ্য শরীর জ্বলছে। মা বাইরে থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে, রিয়া প্লিজ বেরো এবার। নিউমোনিয়া বাঁধাতে চাস?
চোখ ফেটে জল আসছে ওর।
স্কুল, কোচিং, বাড়ি, একঘেঁয়েমির জীবনে এক ‘ঐ’-ই তার আনন্দ। ঐ মানে ঐন্দ্রিলা। আর সেই কি না... রাগে চিড়বিড় করে মাথা। ঘটনাটা কিছুতেই ভুলতে পারে
না।
রি আর ঐ। ক্লাস থ্রি থেকে
টেন। ঝালমুড়ি, আইসক্রিম, গান, মুভি, বই পড়া সব ভাগাভাগি। এমনকি ছুটির দুপুরগুলোও একসাথে আঠার মত। রি ডাকাবুকো। ঐ নম্রভাষী। রিয়ার
স্বাস্থ্য ফেটে পড়ছে। ঐন্দ্রিলা ছোটখাটো। এত কম খায় ঐন্দ্রিলা, প্রায়ই প্রেসার লো হয়ে যায়। কাল হয়ত না খেয়েই টেস্টে বসেছিল। নইলে
মুখ থুবড়ে পড়ে জ্ঞান হারায়!
জ্ঞান হারানো না হাতি। সব
ভান। পুরুষ দেখলেই... উফফ্...
মা খেতে দিয়েছিল। খায়নি।
খাবে না।
-
রিয়া সোয়েটার গায়ে দে।
-
কই শীত মা! আমার তো গরম লাগে।
গরমই। আগুন গরম। ঐন্দ্রিলা কী করে পারলি? বন্ধুদের ডাকতে গেছি আর তুই অচেনা পুরুষের কোলে? পুরুষমাত্রই জঘন্য। আই হেইট
দেম... এতদিনের বন্ধুত্ব, ভালোবাসা এসবের কোনো মূল্য নেই ইডিয়ট! জীবনে আর কথা বলব না তোর সাথে
দেখিস!
বাড়ি ফিরেছিল একসাথেই। ঘরে এসে জড়িয়ে বারবার বলছিল রিয়া, প্লিজ!
রিয়া মুখ সরিয়ে নিয়েছে।
-
শরীরটা সত্যি খারাপ ছিল। সহজ সমীকরণটাও তো গুলিয়ে গেল। পারছিলাম না। কী হল জানি না, মাথা ঘুরে সব অন্ধকার।
রিয়া শুনছে না। চোখ
ভাসছে। এক্সাম পেপার হাতে ওর জন্যই অপেক্ষা করছিল। টিচিং এসিন্ট্যান্ট দুজনকেই তাড়া মারতেই রিয়া দেখল, ঐন্দ্রিলা ঢলে
পড়ছে। ঢলে পড়াটা রিয়ার মনে হওয়া, আসলে ও পড়েছিল হুড়মুড়িয়ে একেবারে ‘দ' হয়ে। রিয়া
একদৌড়ে ঐন্দ্রিলার কাছে। কিন্তু ঐন্দ্রিলাকে তুলতে পারছে না। টি.একে থাকতে বলে বন্ধুদের ডাকতে দৌড়াল ও। রিয়া যখন বন্ধুদের সাথে ফিরল তখন
টি.এ ঐন্দ্রিলাকে পাঁজাকোলা করে বেঞ্চে শুইয়ে দিচ্ছে। ঐন্দ্রিলা? টি.এ-র কোলে! জাস্ট ইম্পসিবল...
সাথেসাথেই রিয়ার মুখ লাল। শরীর কাঁপছে। মাথায় চিড়িক দিয়ে
উঠল রক্ত। এগিয়ে গিয়ে সপাট চড় টি.এ ছেলেটার মুখে।
বাড়ি ফিরে রিয়ার বেডরুমে
ঐন্দ্রিলা যখন রিয়াকে সরি বললো, ঠিক তখুনি আরেকটা চড় ঐন্দ্রিলার গালে।
-
তুই? আমাকে মারলি?
ঐন্দ্রিলা কাঁদতে কাঁদতে চলে যাচ্ছে।
হিসহিস করে রিয়া বলছে – গেট
লস্ট...
তিনদিন জ্বরের ঘোর। ভুল বকা। কান পাতলে কেবল ঐন্দ্রিলার নামটা বোঝা যায়।
তিনদিন পর চোখ মেললো রিয়া। মা নয়। মাথার কাছে ঐন্দ্রিলা বসে।
ঐন্দ্রিলা রিয়াকে জড়িয়ে
ধরতেই
রিয়ার অভিমানের বদলে অনুশোচনা।
ঐন্দ্রিলার হাত ধরে বলল, সরি রে! খুব ইল বিহেভ করেছি।
রিয়ার
ঠোঁটের কাছে ঠোঁট, ঐন্দ্রিলা বলছে, বেশ করেছিস...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন