মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

শুভলক্ষ্মী ঘোষ




রোজগেরে


কী রেকদ্দুর? আসব?” ফোনের ওপার থেকে হিসহিসে গলায় নাংকু জিজ্ঞেস করল
নাহ, খবর নেই কোনো…”
যাহ্শালা, খবর নেই মানে? তুই যে বললি দুপুর থেকে হেঁচকি উঠছে, এখনও মরেনি?… রাত হতে চলল তো! সকাল হয়ে গেলে কিন্তু পারব না মামা, পরিষ্কার জানিয়ে রাখলাম, তখনআর আমাকে বলতে এস না…”
আরে, না মরলে কী করব, আমার হাতে নাকি!… কাট, কাট, ফোনটা কাট,  খবর হলে জানাচ্ছিফটিক মোবাইলটা অফ করে ঝুপড়ির সিঁড়িতে বসে একখানা বিড়ি ধরাল বস্তির এদিকটায় ঘরদোর বিশেষ নেই, ক’পা এগোলে পুরনো একটা বিস্কুটের কারখানা, জায়গাটা নির্জন, বড় একটা কেউ এদিকে আসে না তার মধ্যে রাস্তায় আজ লোকজন কম... দমকা হাওয়া, একটানা বৃষ্টি... বিড়িতে ফুঁ দিতে দিতে ঘরের ভিতর থেকে আসা হাপরের মতো নিশ্বাস পড়ার আওয়াজটা ফটিক স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিল দুপুর থেকে যায়  যায় অবস্থা গতিক সুবিধের না দেখে ফটিক সেই কখন নাংকুকে খবর দিয়ে রেখেছে কিন্তু সে হলে হবে কী, বিকেল গড়িয়ে রাত্তির য়ে গেল, এ মালের এদিকে মরার নাম নেই!          

রাত তিনটে-সাড়ে তিনটে হবে, পায়ের উপর দিয়ে কী একটা চলে যেতে  ফটিক ধড়ফড় করে উঠে বসল, “দেখেছ, উফফফ... কত্ত রাত হয়ে গেল মাইরি!” চোখ ডলতে ডলতে ফটিক সিঁড়ি থেকে উঠে ঘরের মধ্যে উঁকি দিতেই বুকের মধ্যে ধড়াস করে উঠল - “হাপরের মতো আওয়াজটা কই আর শোনা যাচ্ছে না তো!... তবে কি?” ভালো করে নাড়ির জায়গাটা কয়েকবার টিপেটুপে দেখে ফটিক ফোনটা কানে নিল ওদিক থেকে ঘুম জড়ানো হিসহিসে গলা, “হুউউ... বল! অ্যাঁ?... কিইইই? মরেছে?... ওফফ, গেল তো গেল, তাও এই মাঝরাতে! আর কী... নাও... এখন দৌড়ও...”       

নাংকু আর ফটিক ধরাধরি করে মরা শরীরটা বস্তায় চেপেচুপে পুরে ভ্যানে তুলল যখন, তখন রাত প্রায় শেষ “নেহ... যেমন বলেছিলাম, এই যে... হাজার ... কী? খুশ? এসব কাজে আবার রিস্ক, জানিস তো... ডিমান্ড খুব, তবে হেব্বি হ্যাপা! ফেরেস থাকতে থাকতে ডেডবডি থেকে লিভার, হার্ট, কিডনি, সব কেটেকুটে বার কর, ওষুধে চোবাও, বোতলে পোরো... হাড়গোড় সাফসুতরো করে কম পয়সায় হাসপাতাল, হবু ডাক্তারদের কাছে অর্ডার মতো পৌঁছে দাও পুলিশের ঝামেলা সামলে প্রচুর চাপ, বুঝলি না! চল, আমি কাটি... তুই পুকুরে ডুব দিয়ে একটু আগুন-ফাগুন ছুঁয়ে ঘরে ঢুকিস বিয়ে করা বউ না হোক, বউয়ের মতো তো টে... তাও আবার রোজগেরে! কি বলিস?... হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা...”      
ফটিকের হাড়জিরজিরে, রোগে ভোগা, ভাড়া খাটানো, বাঁধা-মেয়েমানুষটাকে নিয়ে নাংকুর ভ্যানরিক্সাটা আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল...     






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন