মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

শুক্লা মালাকার




পাতা কুড়ানো খেলা


সকাল বেলাটা অফিসের হুজ্জুতি। আজ আবার বৃন্দার স্কুল। নয়না হিমসিম খাচ্ছে। রজতাভ রেডি হয়ে গেছে। ও দৌড়োল বৃন্দার কাছে।
-      ড্রেস পরে ফেলেছ! গুড! এস চুলটা বেঁধে দি।
-      আমি ফিতে বাঁধবো না। মিমি তো স্কুলে ফিতে বেঁধে যায় না!
-      কি করব বল! স্কুল থেকে যা ড্রেসকোড দিয়েছে সেটা তো মানতেই হবে।  এখন আর ঝামেলা কোরো না প্লীজ।
মুখ গোমড়া হল বৃন্দার  ওদিকে ব্রেকফাস্টের জন্য চেঁচাচ্ছে। নয়না ছুটল।
বৃন্দাকে দেখে রজতাভ হাসিমুখে বলল
-      বাহ! বেশ মানিয়েছে তো! এস টাইটা বেঁধে দি। চটপট খেয়ে নাও। তোমাকে স্কুলে পৌঁছে অফিস যাব।
-      ফেরার সময় আমি গিয়ে নিয়ে আসবো। আজ হাফডে করবো বলে এসেছি। নয়নাও খেয়ে নিল।

নয়নাকে বাসস্টান্ডে ছেড়ে স্কুলে যাওয়া। গাড়ি যত এগোচ্ছে বুকের মধ্যে ঢাকের আওয়াজ। রজতাভ ঘুরে ঘুরে দেখছে বৃন্দাকে
-      আরে এত নার্ভাস হচ্ছ কেন? তোমার মতো ফাইটার এটুকুতেই
ঘাবড়ে যাচ্ছ! এটা আমার লজ্জা। দেখো, চেনা জানা থাকবে অনেকে।
এসির হাওয়ার সঙ্গে একটা তিরতিরে আনন্দ ছুঁয়ে গেল  কিছুদিন ধরে বাড়িতে সে স্পেশাল কেয়ার পাচ্ছে। স্কুলের গেট থেকে ভিতরের পথটকু রজতাভর হাত আঁকড়ে পেরোলদরজার সামনে হাসিমুখে দাঁড়ানো টিচারকে দেখে ভরসা  হল হাত ছেড়ে ভেতরে যেতেই চমক ঝকঝকে তকতকে কড়িডোর  ক্লাসরুমগুলো কী সুন্দর! আধুনিক বেঞ্চ, বিশাল প্লেরুম যত এগোচ্ছে বৃন্দা ততোই অবাক হচ্ছে  এটাই তার স্কুল! পিছনের দিকে পিভিসি সিটে ঢাকা ওপেন জায়গায় জমায়েত  দূর থেকে দেখতে পাচ্ছে অনিরুদ্ধ, শাকিলা, রুমা, রমেশ আরো অনেকে  হই হই করে জড়িয়ে ধরল সবাই দেখা সাক্ষাতের ধাক্কা সামলাতে সামলাতেই শুনলো মাইকে তাদের নাম ডাকা হচ্ছে  সারি দিয়ে দাঁড়িয়েছে সকলে  প্রিন্সিপাল তার ভাষণে  অনেকবার অনারশব্দটা ব্যবহার করলেন  কেউ কেউ কাঁদছে

তাদের জীবনের মতো স্কুলটাতেও খোলা জায়গা নেই মাঠ, নারকেল গাছের তলায় টিফিন খাওয়া, পেয়ারা গাছের ডাল ধরে ঝোলাঝুলি এসব ধূসর আজকের  গোটা দিনটা শুকনো পাতা কুড়ানোর খেলা  ১৯৬১ সালের আউটগোয়িং  ব্যাচের আজ রি-ইউনিয়ন  স্মৃতির ঝুলি থেকে বারোটা বছর এক লাফে সামনে চলে এসেছে           
  




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন