অ্যাটাচির অন্দরমহল
স্বাধীনতার
মানে কী! আবার মেয়েদের স্বাধীনতা বলতে ঠিক কী বোঝায়! মাঝে মাঝে ভাবি, সব মানুষের স্বাধীনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই
আসা উচিত এবং এর জন্য কোনোরকম লড়াইয়ের দরকার নেই। আসলে এটা শুধু ভাবনার জায়গায়
থেকে যায়। বাস্তবে তার গল্পটা অন্যভাবেই শুরু হয়।
বৃষ্টির
ঝরঝর শ্রাবণ। আমরা যে সমস্ত শব্দ শুনি, ভাবি বা বলি, সমস্তটাই আমাদের শরীর এবং
মনের উপর প্রভাব ফেলে। নেগেটিভ এনার্জি দ্রুত শেষ করে দেয় শরীর ও মনের অন্দরমহল।
রাগ লোভ হিংসা ভয় উদ্বিগ্নতা ঘৃণা ঔদ্ধত্য – একটি
রোগের থেকেও ভয়ংকর প্রভাব ফেলে।
একটি
সম্পর্কও কখনও কখনও ‘টক্সিক’ হতে পারে। আমিই চম্পাকলি মাঝে মাঝে এরকম নানান ভাবনায়
জারিত হতে থাকি। ডোরবেল বাজছে। দরজা খুলে দেখি যে একজন হিন্দিভাষী অবাঙালি যুবক
অ্যাটাচি হাতে দাঁড়িয়ে।
‘ওঃ!
আপনি! এসে গেছেন!’
‘নমস্কার,
বৌদি। দাদা কোথায়?’
‘উনি
তো নেই। অফিসে।’
‘উনি
ঠিক এই সময় সকাল এগারোটা-বারোটায় আসতে বলেছিলেন’।
‘জানি।
দাঁড়িয়ে কেন, আসুন, ঘরে বসুন। উনি বলে
গেছেন।’
বসার
ঘরে সোফায় বসলো সেই যুবক।
‘আপনি
কি আমার নাম জানেন, বৌদি?’
‘না,
না। তবে যখন দিল্লির সাকেত-এ ছিলাম, আপনার শপে কাপড় ড্রাইক্লিন করতে দিতাম আমরা।’
‘আমার
কাজ সম্বন্ধে আপনার কোনো আইডিয়া আছে, বৌদি?’
‘কাজ?
ড্রাইক্লিন করার কাজ, আবার কী!’ আমি আশ্চর্য হই।
‘দাদা
কি আপনার সঙ্গে এ ব্যাপারে কিছুই আলোচনা করেন নি?’
‘আলোচনা?
আচ্ছা শুনুন ভাই, উনি বলে গেছেন যে আপনাকে চা খাওয়াতে হবে। আমি জাস্ট এখনই আসছি।’
কিচেনে
গিয়ে তাড়াতাড়ি চা তৈরি করে নিয়ে আসি। চা বিস্কুট খেতে খেতে সেই যুবকটি হঠাৎই হাসতে
হাসতে বলে ফেলে, ‘আমাকে আপনার ভয় করছে না, বৌদি?’
‘না
তো! কেন?’
‘আমার
মনে হয়, পৃথিবীর কেউ আপনার মতো মানুষের ক্ষতি করতে পারবে না। হাজার চেষ্টা করেও
হেরে যাবে।’
‘আমার
হাসব্যান্ড এখন বাড়িতে থাকলে সত্যি খুব খুশি হতেন’। আমি হালকাভাবে কথাটা বলি।
‘এই
অ্যাটাচি ভর্তি কি আছে, জানেন?’
আমি
স্বাভাবিক কণ্ঠে বলি, ‘আমার জেনে কোনো লাভ নেই, ভাই।’
দিল্লির
নিউ ফ্রেন্ডস কলোনির একটি ভাড়াঘরে দরজার এপার-ওপার ভেদ করে কিছু উটকো ঝামেলা উৎপাত
করতে থাকে। সেসব অগ্রাহ্য করে বলে উঠি, ‘ঠিক আছে, ভাই। এখন আমাকেও একটু জরুরি কাজে
বাইরে বেরোতে হবে।’
অ্যাটাচি
হাতে যুবকটি উঠে দাঁড়ায়, ‘আর কোনোদিন হয়ত আসবো না, বৌদি। মাফ করবেন। তবে দাদার এ
ব্যাপারে আপনার সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।’
শ্রাবণের
মেঘ ধুয়ে দিচ্ছে চরাচর, শরীর ও মনের দারুণ টক্সিনগুলো। সাকেতের কথা খুব মনে পড়ে,
আর এখন নিউ ফ্রেন্ডস কলোনির সুন্দর ইমারত ও গাছপালায় এঁকে যাচ্ছি জীবনস্মৃতির
খন্ডপৃষ্ঠা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন