মাইনাসে মাইনাসে প্লাস
মান্নাদের বাগানে আমের ফলন কেমন হয়েছে দেখতে গিয়েছিলেন ঘনশ্যামবাবু। সেখানেই বুচকি ছুটে এসে খবর দিল – ‘শিগগির বাড়ি যাও দাদু! দিদা পড়ে গেছে। রক্ত ছুটছে’। ঘনশ্যাম দৌড়তে লাগলেন বুকপকেটে মোবাইল চেপে ধরে। লুঙ্গি গুটিয়ে। হাওয়াই চটিটা খুলে হাতে নেবেন কিনা ভাবছেন। ঝাঁঝালেন মনে মনে - মাগি মরলে বাঁচি!
শ্বশুরের করে দেয়া বাড়িতে ঘরজামাই মিথ ঘাড়ে করে বেঁচে আছেন তিনি। মায়াবতীর চোটপাটে কেঁচো হয়ে থাকেন। মায়াবতীর ছিল চটকদার চেহারা। তা নিয়ে উৎপাৎ মায়াবতীর পছন্দের। কিন্তু ঘনশ্যামবাবুর তো তা নয়! একবার মদের আসরে মাধবদা বলেই বসলেন – ‘ভালো কথা মায়াদি, তিনটে মেয়েই ঘনশ্যামদার তো? না অন্য কেউ সাহায্য করেছিল?’ আসলে পাঁচপেগ গেলার পরেও মায়াবতীর পা টলছিল না। জড়িয়ে যাচ্ছিল না কথা। অন্যদিকে ঘনশ্যামবাবুর হাসি বটগাছের ডগা ছুঁয়েছে। ঘনশ্যামবাবুর ‘এক কথায় প্রকাশ করো’তে মায়াবতী ‘ঢলানি মাগি’। মায়াবতী মহাভারত থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি উদাহরণ টেনে বলবে – ‘বলো তো মহাপুরুষরা সব জন্মেছিল কী করে - এই জানালা দিয়ে সূর্য, ঐ জানলা দিয়ে চন্দ্র ঢুকে পড়লেই মেয়েরা সব গভ্যোবতী হয়ে যায় কিনা!’ যত দিন গেছে কর্তা সরষের ঝাল মিলিয়েছেন সন্দেহে। তবে ধরা পড়লে মায়াবতী আরো হিংস্র বাঘিনী হয়ে যায়। আর ঘনশ্যা সার্জেন্টকে সার্জন বানিয়ে তোতলাতে থাকেন। অবশ্য ঝালাপালাগ্ৰস্ত হয়ে ওদের দূরত্ব বেড়েছে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে।
ঘনশ্যামের তাসপেটানো বন্ধুরা সবাই এখন বিপত্নীক। ক্যান্সার, টিবি, ডেঙ্গু কিসে না কিসে মরেছে তাদের স্ত্রীরা। পাঁচবন্ধু একমাথা হলেই বৌ না থাকার উপকারিতা ও অপকারিতা আলোচনা করে। মাধবদা অবশ্য আবার বিয়ে করেছেন। ঘনশ্যাবাবু বন্ধু সংসর্গে প্রায়ই বলেন - তোদের বৌ মৃত। আমারটি বেঁচে থেকেও মৃত। তার মনের অন্তর্লীন ইচ্ছেটাকে উস্কে দিয়ে মাধবদা বলেন – ‘তোর কিন্তু বিয়ের বয়স চলে যায় নি রে গনু!’ পঞ্চান্নোত্তর মায়াবতীর যৌনতা বাষ্পীভূত। এখন রসিকতা দাউ দাউ করে জ্বলে। বাত, আমাশা, বহুমূত্র আরো কত কিছু হয়েছে মায়াবতীর। বিবাহিতা মেয়েদের হাজারো ঝঞ্ঝাট সামলাতেই ব্যস্ত সে। রঙ্গিনীর বদলে এখন সে প্রেতিনী। নিজের পয়সায় খাই মদের গর্বিত জায়গায় থেকে ঘনশ্যামবাবু আবিষ্কার করেছেন যে, তারা পরস্পরের মৃত্যু কামনা করেই দিনাতিপাত করছেন।
কর্তা বাড়ির কাছে এসে জানলেন গিন্নিকে পাড়ার লোকেরা হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে নিয়ে গেছে। হঠাৎ ঘনশ্যাবাবু চক্কর লেগে কেমন যেন হাল্কা হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। পাড়ার লোকেরা আবার দ্রুতগতিতে ছোটাছুটি শুরু করল - যে গতিটা একমাত্র টাইমস্ ল্যাপে ফেলা যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন