বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮

অশোক তাঁতী



না-লেখা উপন্যাস  


উপন্যাসটা মাথায় কিলবিল করছে। কি-প্যাডের সামনে বসে পড়ার অপেক্ষা।

রাত নিঝুম হয়ে আসছে। একটা প্যাঁচা আমার আঠেরোতলা ফ্ল্যাটের কাচের জানালায় ডেকে উঠল। ডাকটা মনে হল উপন্যাসের আকুতি। সিঙ্গল মল্টের শেষ চুমুকটা আয়েস করে মারলাম। সিগারেট যেদিন থেকে ছেড়েছি কেমন অস্বস্তি হয়। লেখার সময় ঠোঁট শুকনো লাগতো। দ্বিতীয় পেগ সিঙ্গল মল্টের মৌতাত সেটা ভুলিয়ে দেয়।

বাইরের অন্ধকারের মধ্যে তারার মতো কম্পুটার স্ক্রিনে আলো ফোটার অপেক্ষায়। আঙ্গুলগুলো রেডি হয়ে কি-প্যাডে অপেক্ষা করে। স্ক্রিন আলো হয় না। উপন্যাসটা  এখনি শুরু না করলে হারিয়ে যাবে। পাগলের মতো পাওয়ারের জ্যাক টানাটানি করি। সুইচটাকে দুবার ঠুকে দিই। পাওয়ার বাটন বারকয়েক চাপাচাপি করি। অসহ্য। কাজ করছে না। কম্পুটার সারানোর ছেলেটাকে ফোন করি। একটা কুচো রিং হবার পর নট রিচেবেল। এরা ইচ্ছে করে এমন করে রাখে। দিনের বেলা ফোন করো বলবে, টাওয়ার থাকে না। বাড়িতে থাকলে এই এক সমস্যা স্যার। কাল ঠিক করে দেব।

সেই কাল কোন কাল হবে জানা নেই। চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। না জন্মানো উপন্যাসটা ভ্রূণ অবস্থায় মারা যাবে? মোবাইলটা বের করে টাইপ করতে শুরু করি। অসম্ভব। মোবাইলের স্ক্রিনে চ্যাট করা যায়, দুষ্টুমিষ্টি ছবি দেখা যায়, কষ্ট করে অণুগল্প ধরানো যায়। উপন্যাস ধরে না। প্যাঁচাটা ঘাড় বাঁকিয়ে দুবার মুণ্ডু গোল্লা করে ঘুরিয়ে নেয়। উপহাস! চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে প্যাঁচাটা উড়ে যায়।

খাতা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। প্রশ্ন হল খাতা কোথায়? বইয়ের র‍্যাক তছনছ করে ফেলি। অনেকদিন না দেখতে পাওয়া রবীন্দ্রনাথ, বিভূতিভূষণ, জীবনানন্দ মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন একটা না লেখা উপন্যাসের শোকে। খাতা নেই। কোত্থাও নেই। লফটে উঠে পাগলের মতো সব ছড়িয়ে ফেলি। প্রাচীন ঘরকন্না, ভাঙা স্লেট, চীনে মাটির পুতুল। আর শেষ পর্যন্ত একটা ব্রাউন পেপারে মলাট দেওয়া ছোট্ট খাতা। খাতাটা আমাকে পেয়ে যেন উড়তে উড়তে লেখার টেবিলে চলে আসে। পেছন পেছন হাঁফাতে হাঁফাতে আমি। তারপর...

মেয়ের ছোট্টবেলার না লেখা খাতাটা নিজেই লিখতে শুরু করে। না, উপন্যাস নয়, আমাকে...         

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন