একুশ বছর বোধহয়
(একটা মোটামুটি কলকাতা দেখা যায়, এই যা! এছাড়া এই দেড় বছরে এমন কিছু খুব একটা কিছু খুঁজে পাইনি। তবে আজকের দিনটা অন্যরকম। বাইরেটা ধূসর হয়ে আছে। আকাশ ফুঁড়ে নামল বলে। বেশ হবে। অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল, এইরকম কোনো একটা জায়গা থেকে, চুইঁয়ে চুইঁয়ে ভিজে কলকাতা দেখব। দেখছিও
বটে। আর গলার আই-কার্ড টা বারবার জানান দিচ্ছে আমার ঝাঁ চকচকে ছদ্মনামের। মধুমন্তী মুখার্জ্জী। প্রোগাম অ্যানালিস্ট।)
Excuse me...
- হা...ই!
(এ বৃষ্টি আবহাওয়া দপ্তরের ডিকশেনারিতে ছিল না। আমার কাছেও না।)
- চিনতে পারছিস?
(বাইরে ততক্ষণে ঝেঁপে বৃষ্টি পড়লেও, ধান মেপে দেওয়ার কোনো অবকাশ ছিল না। এরকমটাও
হয় তাহলে? আমার একটা সময়ের অভ্যেস
সদর্পে দাঁড়িয়ে আছে সামনে। এই চার দেওয়ালে তো শুধু এরর চেকিং হতে দেখেছি, কিন্তু এখানে তো...)
- By the way, তুই এদিকে?
-আমার তো এই বিল্ডিঙয়েই অফিস!
-ওহহ...
তো বস না, মানে if you want... আর এখন তো বোধহয় ব্রেক টাইমও,
তাই না?
(আজকের চেয়ারটা মলডিংএর, গদি দেওয়া। পুরনোবেলার কফি হাউসের মত প্লাস্টিকের চেয়ার নয়। আজ আমি
টেবিল ম্যানারসও জানি। শুধু জানি না...)
- বল, কী খাবি?
- কফি।
-ব্যাস?
-হ্যাঁ, জাস্ট লাঞ্চ করলাম।
-ফাইন।
তোর সঙ্গে যে এইভাবে দেখা হবে... I never thought, actually...
-হুম!
-but, না হলেই পারত!
- Sorry.
- কেমন আছো?
- যাক্... আমি তো ভাবছিলাম, আজ বোধহয়
আমিই খালি বকবক করে যাব।
(আজ-কাল-পরশু-তরশু বলে আর কোনো কথা হয় না। গতকাল-আগামীকালের নিরিখে, এইসবের এক্পেয়ারিডেট খতম। পড়ে আছে শুধু নিঃশব্দ রাংতা।)
- To be a good
speaker, be a good listener, first
- হুম! কিন্তু এটা একটু কেতাবি হয়ে গেল না?
(ফিরল না তবে বুমেরাং হয়ে। হুট করে কানে গিয়ে লাগল
না? অথচ ডিসক্লেমারে এই শব্দগুলোই এককালে বড় বড় করে লেখা থাকত।)
-তুই কফিতে চিনি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিস নাকি? আগে তো...
(আই রিপিট Mr. Bose, আগে-পড়ে বলে কোনো কথা হয় না আর)
- ছাড়িনি বোধহয়, আবার হয়তো ছেড়েও দিয়েছি,
may be tried to resist
-Health conscious?
-না,
mind conscious...
(আমাদের মধ্যের এই সাইলেন্সটাকেই বোধহয় চিরকাল গলাটিপে এসেছি। কিন্তু
আজ, এই নিঃশব্দতা শুনিয়ে যাচ্ছে
ক্যাফেটেরিয়ার টুংটাং। এ জায়গা থেকে মধ্যবিত্ততাকে খুব একটা বোঝা
যায় না। তবু বাইরের দিকটা তাকালেই কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে যায় সব। এ বৃষ্টি
ততটাই মনখারাপের, যতটা ভালোবাসার। অকাল ভেজা...)
- হাইড্রোলিকস্এর একটা বই দেখতে দেখতে, এসেছিল নামটা, ‘unbroken bridge’। ব্রিজ শুনে বোধহয়, ইঞ্জিনিয়ারিংএর কোনো বই ভেবেছিল ফ্লিপকার্ট। But, I was shocked! Seriously... By the
way congratulations! Best seller of the year!
- Thank you, but সেরকম কিছুও না।
- সেরকম কিছু না মানে?
আমার তখন একুশ বছর ছিল বুঝি!
এত কিছু তো আমি নিজের ব্যাপারে কোনোদিনই
খেয়াল করিনি!
বড় হ... আরও বড়...
(সমস্ত কিছু যেন ধরা পড়ে যাচ্ছে। নিঃস্তব্দতাটা
এবার ন্যাড়া ছাদের মত। ঠেকনা দেওয়ার ভয়ে বৃষ্টিটাও ধীরে ধীরে মুখ লুকোচ্ছে।)
-যাকগে, উঠি রে! বৃষ্টিটাও ধরছে এবার...
- শোভন দা!
(এই তো অনভ্যাস! এই ফিরে তাকানো আমার অভ্যেসে নেই।
তার মানে, সব ঠিক আছে... সব ঠিক চলছ...)
তুমি কি তাকেও ‘তুই’ বলে ডাকো?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন