বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৮

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত




আচ্ছন্ন সকাল


ভোরের কুয়াশা থেকে যে বালিকা
হেঁটে যায় ফুলের আস্তরণে,
তার জন্য সূর্যালোক সঞ্চিত করেনি কেউ,
কেউ ভাবেনি কোনোদিন সে হারিয়ে যাবে
এত মাধুর্যে!
কোথায় যে ডুবে যায় অগ্নিরথ গভীর সমুদ্রজলে,
কেউ জানে না-
জল ধরে রাখে তার আকুতি বেদনা যত,
আকাশ ঘোষণা করে,
ছুঁড়ে দেয় সে বেদনা তারার মিছিলে।
আমরা ছাড়তে পারি না দৈনন্দিন,
মুষ্টিবদ্ধ করি নিষ্ফল আক্রোশ
কাহিনী জারি থাকে,
অন্ধকারে দেখা যায় না উত্তপ্ত পাথরমালা।


আসবাবে


একলা থাকলে স্তব্ধতাই ছবি-
মনে হয় ডাকছে আসলে কেউ নয়,
যাবোই বা কি করে,
পা আটকে গেছে আসবাবে।

অন্ধকারে দেয়ালে ফাটল নেই,
ঘরের সঙ্গে বাইরের মিল নেই- 
চাঁদের আলোয় দেখা যায় নদী-
ছায়া নড়ে উঠল দূরে-
জানি তুমি নও
মরীচিকা শুধু।
এই সময়ে একটা দ্বীপ হয়ে যাই
আমাকে ঢাকে রাত্রিকাল।

আকুল ছিলাম তাই ব্যথা পেলাম,
ছবি আঁকলাম, রাত্রি এসে ভাসিয়ে নিলো,
সকাল বেলায় ঝলসে যাবো রোদ্দুরে।

কোথায় যাবো!
পা আটকে আছে আসবাবে।


আয়না


নিজেকে খুঁজতে গিয়ে আয়না দেখে যাচ্ছি,
পাচ্ছি না, তোমরা বলছ সোজা হয়ে দাঁড়াও,
বলছ বিচ্যুতি প্রয়োজন, পরস্পর বিরোধী এমন সব!
মনে নেই জীবনের প্রথম আয়নায় নিজের সঠিক ছাপ
ছিল কিনা।

আমি আজকাল আর আকাশ গাছপালা ফুল দেখি না,
তাকাই সমস্ত সম্ভাব্য প্রতিফলকে,
গাড়ির কাচ, দরজার পালিশ, দোকানের কাচ,
আর জমে থাকা বৃষ্টি জলে;
কিন্তু কেউ সত্যি বলে না।

নিজেকে বড় ঝাপসা দেখি আপাদমস্তক ফুটিফাটা।
পৃথিবীর সমস্ত আয়নারা খারাপ হয়ে গেছে,
কিন্তু আমি জমি ছাড়ি নি,
দাঁড়িয়ে আছি যতক্ষণ না খুঁজে পাবো ঘাটতি,
আসলে আয়না তো নিজে কিছু করে না,
অথবা তার নিজের কাজটাই করে,
দেখায় আমাকে তোমাকে।


তুমি


এক হাজার স্বপ্নের বাগান পেরিয়ে এলো শীত,
সব ধূধূ! শুকনো গাছের ডালে কেবল বরফের জমে থাকা-
বসন্ত সে সব বাগান ছুঁয়ে নেমেছে খাদে
হলুদ ফুলে হাসছে উপত্যকা,
কাকে ভালোবাসো তুমি রিক্ত যে করে তাকে,
নাকি হাসি ফোটানোর মহান ঋতুকে?

তোমাদের বোঝা দায় বড় দায় রক্তাক্ত হবে তবু
বড়ই ভিখিরি প্রেম!
একি মহানুভবতা না অন্য কিছু!
তুমি কি চাও বলো উন্মাদের জন্য ঢালো কলসি কলসি অশ্রুজল!

আর যে ঋতু ভালোবাসছে ফোটাচ্ছে ফুল তার জন্য এক ফোঁটা
কান্না নেই চোখে আশ্চর্য মানুষ তুমি। 


গ্রন্থনায় মেতেছে সময়


এই ভালোবাসা বাসি আমার নিজের হাতে প্রতিষ্ঠিত মোমবাতি - জ্বলে আর নেভে,
স্থাপনের সময় থেকেই তার এ হেন অনিশ্চয়তা। তাই ইদানীং অন্য কিছু ভাবি।

সূর্য যদি ঘরে ঢোকে, অনিচ্ছায় প্রস্তুত আছি কারণ আমার অন্ধত্ব চড়া আলো
প্রতিরোধে সহায়তাকারী; আর এই যে অর্ধমৃত জীবন মন্দ নয় কারণ শ্বাস
যাতায়াত করে। থেমে যায় ফিরে আসে। মৃত্যুভয়ে ভীত নই তত।

এই যে শীতার্ত বসে আছি আগুনের পাশে, তোমার হাতের পাশা মৃদু শব্দ করে,
ঘষা খায় ছুঁড়ে ফেলার আগে। এই শব্দটাই ভাল, কারণ একবার দান চেলে দিলে
ভাগ্য বড় প্রকাশিত হয়, এই যে আগামীকাল আসে- আসতে দেরি হওয়া ভালো
কারণ আজকের দিন ভালোমন্দ বুঝে গেছি, না জানি আগামীতে কী।

তোমাকে দেখেও আর আগের মতো এলোমেলো হয়ে যাই না,
এমনই গ্রন্থনায় মেতেছে সময়।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন