বাংলাদেশ
এবারে যে গল্পটা লিখছি, ভালো মানুষ খারাপ মানুষ যেমন সব
জায়গায় থাকে, এখানেও তেমনি সবাইকে দেখতে
পাওয়া যাবে। ‘চলো ভাই নীলু , এই তালবন দিয়ে পথ’ – রবীন্দ্রনাথের নীলু। ‘নীলু , অ্যাই নীলু!’ - সুনীল গাঙ্গুলীর নীলু। ওরা নীলুদের দেখতে পেয়েছিল,
আমার তেমন কেউ নেই। আমি টিভি দেখি। রাস্তার ধারে দেওয়ালে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দেখি। মেসেঞ্জারে
বন্ধুদের পাঠানো রোজ দু’বেলা ইনবক্স ফলো আপ করি। আমার আর আমার
প্রিয় বন্ধু বান্ধবের একটাই নেটওয়ার্ক। রবিবারে তাই সারাদিন সবাই অনলাইন থাকি। এই রবিবারের গল্পটা আগে
বলে নিই। রবিবার সকাল হলেই কত গ্রাম চিকেন আর কত গ্রাম মাটন কিনে আনা হবে তাই নিয়ে
বাড়িতে আলোচনা করি। আমি চিকেন খেতে খুব ভালোবাসি। আমার আম্মির
কিন্তু বরাবর মাটনই প্রিয়।
এই রবিবারে আম্মি জানাল, বাসায় আজ আরো দু’জন দুপুরে খাবার
খেতে আসবে। আজ
পুরোটাই মাটন রান্না।
নখ খুঁটতে খুঁটতে বললাম, আজ দুপুরে আমারও এক জায়গায়
নেমন্তন্ন।
কোথায়?
এক বন্ধুর বাসায়। ও জাপানে থাকে। ক’দিন হলো বাড়ি এসেছে।
আম্মি কথা না বাড়িয়ে নিজের শোয়ার ঘরে ঢুকে গেল। মিনিট চারেকের মাথায় টাকা
এনে আমার হাতে দিয়ে বলল, সঙ্গে একটু ধনেপাতাও আনিস। খাসির মাংসে দিলে টেস্ট হয়।
মাংসের গলিটা এপাড়া থেকে একটু দূর। গলি জুড়ে
মুর্গীর ছাল চামরা পালক মাছি আর কাঁচা রক্তের গন্ধ। প্যাকিং বাক্সর খোল,
কাগজকুচি, পচা কমলা। এই
গন্ধ আমার অনেক দিনের চেনা। নিঃশ্বাস নেবার সময় এখানে অক্সিজেন আছে বুঝতে পারি। নাটকীয়ভাবে কিছু জমাট বাঁধা
বিশাল শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস বায়ুস্তরের নিচের অংশে ঝুলতে থাকে। মাংসর দোকানে
আজ গ্রীন চিকের চিকেন বিক্রি চলছে। এই আইটেম রোজ থাকে না। আম্মির দেওয়া
পুরো টাকাটা দিয়ে দেড় কেজি চিকেন কিনে ভাবলাম এর সঙ্গে কিছু হাইব্রীড টমেটো নিয়ে
নিলে ব্যাপারটা জমে যাবে। সবজি
বাজারে ঢুকে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, টমেটো কত করে?
মুল্লী আশহী রুপেই কিলোহ্!
ট্মাটর! মুলোর দাম না!
নিজস্ব কিছু টাকা পকেটে থাকেই। এখন যা আছে
অনায়াসে তা দিয়ে মথুরাপুর অব্দি যাওয়া যাবে। নাটকীয়ভাবে আকাশে কড়াঙ্
বিদ্যুৎ চমকালো। বৃষ্টির
সময় পানিতে ভেজা কোনো মেয়ে রাস্তা দিয়ে দৌড়ে যাবে, তাড়া হুড়ায় তার হাতের ব্যাগ
ভর্তি জিনিষপত্র... এই রকম একবার সোমার হয়েছিল। সোমা আমার বন্ধু না। একদিন আমাদের
বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। তাছাড়া তখন বৃষ্টিও হয় নি। আম্মির কাছে
হাতুরি ছিল না। তাই হাতুরি কিনতে পাঠাচ্ছিল। ভরা দুপুরের শুকনো রোদ, রং বসা ময়লা ধরনের পোষাক পরে সোমা
ছুটছে। প্রত্যেকদিন ধুলো ময়লা পরিষ্কার করতে করতে যা পড়ে থাকে তাও
ধুলো। তাই সোমা পানিভেজা সেই মেয়ে নয়। মথুরাপুরে আমার চেনা কেউ থাকে না, তবে খড় আর অর্ধেক টালির
ছাউনি দেওয়া ছোট একটা গ্রাম্য ধরনের বাড়ি আমার খুব পছন্দের। আশপাশ একেবারে হু হু
দিগন্ত। মেঠো একটা পথ এঁকেবেঁকে ঐ বাড়িটার কাছে শেষ। পাতাঝাঁঝি ভরা
একটা মাঝারি পুকুর পাশেই। কেউ
ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল।
বিজ্ঞান সময়কে নানাভাবে দেখেছে। যেমন, থার্মোডায়ানামিক্সের সেকেন্ড
ল বলে, সময়ের সাথে সাথে বিশৃঙ্খলা বাড়ে।
এর মানে সময়ের নিশ্চয়ই কোনও শুরু আছে। আমি আম্মি সোমা নীলু কোথা থেকে সময় শুরু করেছিলাম, সেই কূট
ভাবনা আমার মগজে আসল না। মুলোওলা
ছোকরাকে চোখ পাকিয়ে বললাম, আন্ধা হ্যয় কেয়া? আধি কিলো টমাটর দে দেঁ! জলদি!
লড়াইয়ের কোনো শরিয়ত হয় না। বৃষ্টি নামার আগে সেটা
শেষ করে মাংসটা বাড়ি পৌছে দিয়ে আসতে হবে। চিকেন দেখে আম্মি রেগে বলল, সম্মুখ থেকে
দূর হয়ে যা!
হাসতে হাসতে আমি বাড়ি থেকে
বাইরে এলাম। আজ রবিবার। সব
বন্ধুরা আজ অনলাইন।
মথুরাপুর যাওয়ার আজই সব থেকে ভালো দিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন