বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭

রিমি দে

অসুখ   


সিঁড়ির দিকে চোখ গেলেই আজকাল শ্রী ভীষণ বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একবার
নাইটির খুঁট পায়ের আঙুলে  বেঁধে সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে পড়েছিল। গোড়ালি ভেঙে একেবারে যা তা কান্ড। চরম ভোগান্তি ভুগেছিলছ’মাস ছুটি নিয়ে থাকতে হয়েছিল। এখনো পূর্ণিমা অমাবস্যায় চিনচিন ব্যথা হয়। তখন রিভু ছোটরিভু যখন পেটে, তখনই সোমনাথের সাথে ডিভোর্স হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার আর ও পথ মাড়ায়নি।
চাকরিসূত্রে রিভু টোকিওতে। সেখানে কিছুদিন এক চায়নিজ মেয়ের সাথে লিভ ইনে ছিল। তারপর জবরদস্ত ব্রেকাপ।  অবশেষে সিঙ্গলমাঝখানে কিছুদিনের জন্য শ্রীকে দেখে গেছে। মায়ের জন্য রিভুর মন কাঁদে। আর মায়ের কোনো হেলদোল নেই। এ নিয়ে রিভুর প্রচুর বেদনাও রয়েছে।  

শ্রী কলেজ থেকে অবসর নিয়েছে। বছর দুয়েক হলোরিভু ফোন করলে বলে, ফোকরিস না। শ্রী বরাবরই ছাড়াছাড়া। তবে রিভুর ক্ষেত্রে ততটা ছিল না। দিনদিন বেড়েছে।  লোকজনের সাথে মেশা প্রায় নেই। কাজের মেয়েটি দুবেলা আসে।
দুতিন দিন বাদে বাদে বাজার  যায়। ফল দুধ বিস্কিট সবুজ চা কিনতে। রান্নাবান্নার বালাই নেই। রিভু আসতে চাইলে আসতে না করে।

শ্রীর দুনিয়ায় অন্য কোনো চরিত্র নেই। ছোট্ট বারান্দায় বসে থেকে দৃষ্টিহীন দৃষ্টি দুনিয়ায় মেলে দেয়। তাতে শ্রীর যেমন কিছু এসে যায় না, দুনিয়ারও কিচ্ছুটি এসে যায় না। ফুলের ফুটে ওঠা, মশার গুনগুন, পাখির উড়ে যাওয়া, কাকের ভিজে একশা হওয়া ইত্যাদিতে সে অবিচল।
দুপুর থেকে বিকেল গড়িয়ে যাওয়া অব্দি অপেক্ষা করে গালে হাত দিয়ে। সন্ধে আসে। অন্ধকার গভীর হয়। ওর দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘতর হয়। বিষাদ প্রশ্বাসে ভরে যায় সিঁড়ির অন্ধকার।

মন খারাপ করা সিঁড়ি বেয়ে শ্রী  উঠে যেতে থাকে অন্তহীন সিড়ির দিকে।    

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন