দুপুর
হাওড়া স্টেশনে নেমে
দূর থেকে বুবাইকে লক্ষ্য করছিল পিকু। দাঁড়িয়ে
আছে। ছ’ফুটের বুবাইকে হলুদ কুর্তি আর রোদচশমায় অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছিল। আলাদা করে চোখে পড়ছিল এত ভিড়ের মধ্যেও। পিকুর মনে হচ্ছিল সময় থমকে গেছে। ওর দু’চোখে তৈরি হচ্ছিল অদ্ভুত একটা মায়া। অন্যমনস্ক বুবাইকে
যেন আরো বেশি আকর্ষণীয় লাগছিল, ইচ্ছে করছিল দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘চল পালিয়ে যাই! চলে যাই পৃথিবীর
কোনো অনাবিষ্কৃত কোণে। যেখানে সবুজ-নীল সমুদ্র আর পাতার ছাউনি। সৃষ্টির প্রথম পুরুষ আর নারী হয়ে থাকব আমরা...’। চোখ ফেরাতে পারছিল না পিকু। হঠাৎ ওর মনে হলো ওকে কি দেখতে পাচ্ছে না বুবাই? পাশ কাটিয়ে চলে গেলেও হয়তো টেরই পাবে না! কোন শূন্যে চোখ রেখেছে বুবাই? পিকুকে চিনতে
পারবে তো? অথচ একসাথে দুপুরটা কাটাবে বলেই সব ফেলে দুজনে ছুটে এসেছে দুজনের কাছে। কী হবে যদি বুবাই এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে আর মানুষের
চলমান স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায় পিকুকে অনেক দূরে? দুপুরটার কী হবে যেখানে অজস্র ভালোবাসা
তার স্বজন নিয়ে অপেক্ষা করছে দুজনের জন্য? নাহ, ওই তো বুবাই এগিয়ে আসছে। দেখতে পেয়েছে পিকুকে। হাত নাড়ছে। এই প্রথম ওরা
একসাথে সময় কাটাবে নিভৃতে। সবচেয়ে কাছাকাছি। শুনবে কীভাবে একজনের হৃদয় ধ্বনিত হয়
অন্যজনের হৃদয়স্পর্শে। মাত্র কয়েক মাসেই
বুবাই-পিকু চিনে নিয়েছে পরস্পরকে। নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। পিকু হলফ করে বলতে পারে, বুবাই ওর জীবনে সেই পুরুষ যাকে ও
মনে মনে কামনা করেছে এতদিন। খুঁজে বেরিয়েছে। আজ তার বুকেই পিকুর আশ্রয়। কত কিছুই
না ভেবে এসেছে ও। আর বুবাই? সেও কি পিকুকে বুকে নিতে নিতে ভাবছিল না, এই সেই মেয়ে যাকে বুকে নিলে পৃথিবীতে গানের জন্ম
হয়? পিকুর জন্য বুবাইও কি অপেক্ষা করে থাকেনি? শুরুর কথা বলার দিনগুলোতে বুবাইয়ের মনে হয়েছিল, এই মেয়েটা একটা গা্ আর ও তার কাছে আশ্রয় চেয়েছিল। কখনো
কোনো কারণে কথা না হলে দুজনেই
অপেক্ষা করেছে। বুবাইয়ের পাঠানো
গান আর ছবিগুলো সঙ্গী হয়েছে পিকুর। বুবাই পাকদণ্ডী
পথে মেঘেদের দূত করে পাঠিয়েছে প্রেমিকার ঠিকানায়। বিনিময়ে পিকু কবিতায় প্রেম পাঠিয়েছে
বৃষ্টির মাধুর্যে। গান, কবিতা,
ভালোবাসাবাসির একটা
নিটোল দুপুর ফুরিয়ে যাওয়ার মুখে পিকু বুবাইকে আটকে
রাখতে চেয়েছিল। চেয়েছিল এই সুন্দর মনের যুবক আজীবন তার হয়ে থাক। বুবাইয়ের গালে আলতো আঙুল রেখে বলেছিল রাতটাও একসাথে থেকে
যেতে। তোলপাড় করে উঠেছিল বুবাইয়ের বুক। অথচ ফিরে যেতে হয় যার যার নিজের আশ্রয়ে। একটা অদৃশ্য কাঁটাতার একটু একটু করে
গ্রাস করে নিচ্ছিল দুপুরটাকে। টুপটুপ রক্ত ঝরার শব্দ নিয়ে দুপুরটা মিশে যাচ্ছিল
পাশের গলিটার ভিতর। যেখান থেকে ইচ্ছে করলেও তাকে আর ছুঁতে পারবে ওদের কেউ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন