ভিজিট টু দ্য ব্লাইন্ড স্কুল
ভেবেছিলাম শ্যাওলা-ধরা সিঁড়িগুলি ধরে দোতলায় উঠবেন যখন, আমি ঠিক
সামনেই থাকব আপনার। যেমন থাকে আমার হাতের লাঠি, আপনার
হঠাৎ পিছল লাগলে মুঠোয় চেপে ধরবেন আমার কাঁধের শার্ট। তখনই আমাকে ছুঁয়ে যাবে সেই
মৌসুমি গন্ধ চুল। ম্যাডাম। সিঁড়ি দিয়ে উঠেই বাঁদিকের
প্রথম ঘরটি আমার। বেখেয়ালে যদি পা রাখেন, জানালাগুলি
বৃষ্টি ছবি আঁকবে বেশ! –‘আরে! বিছানা ভিজে গেল যে’ বলে প্রবল মায়ায় সার্শি বন্ধ করতে গেলেন আপনি,
আর ভালোবাসার সোঁদাল গন্ধ উঠে এলো বাগান
থেকে। এ ভাবে
সত্যিই এলেন ধরুন আপনি! এই ঘর, আলনা, টুপটুপ জল
পড়া ভেজা বাথরুম - সবটুকু ঘুরে নিলেন অনায়াস জলতরঙ্গে, আর
আমি ভাবছিলাম, আজও কি তাঁর শাড়িটি কোনো অলৌকিক রঙ ধরেছে এবং
তাঁর শরীরের কোনো গোপন খাঁজে আঁকা রয়েছে কো্নো এক আশ্চর্য উল্কি! সেই সুরভিত উল্কিতেই হয়তো লুকিয়ে আছে আমার পাপের উল্লাস! জীবনে
অন্তত একটিবার সেই পাপ আমার অন্ধ চোখে আলো জ্বেলে
দেবে। অন্তত এক মুহূর্তে সাত সাতটি কুহক রং চিনতে পারব আমি!
আপনি সেদিন একটিও দীর্ঘশ্বাস খরচ করবেন না আমার জন্য। আমার সর্বজ্ঞ আঙুলের খাঁজে কী যেন লিখে জানতে চাইবেন, ‘বলো দেখি কী লিপি এটা?’
আমার তৈরি মোমবাতি আর বেতের ট্রে সেদিন ছুঁয়েও দেখবেন না আপনি। খেয়ালী স্বরে কী যেন গুনগুন করবেন - হঠাৎ ফিরে বলবেন, ‘তোমার মায়ের কথা বলো না, একটু শুনি!’ দারচিনি গন্ধে পৃথিবী ভরে উঠবে ঠিক সেই মুহূর্তে। সবাই চলে যাবে, শুধু আপনি বিকেলের অপেক্ষায় রাত অবধি বসে থাকবেন আমাকে ঘিরে। আমি বলব, আপনি এলে বৃষ্টি আসে। না হলে অফুরান শীত। আঙুলের রঙ নীল হয়ে যায় ম্যাডাম! ছাতের কোণ থেকে সব ক’টি ঋতুতে জল ঝরে, জানেন! শুধু আপনি এলে সেই ফাটল সমকোণিক আলোকস্তম্ভ তৈরি করে, আর আপনি সেটুকু দেখে, ‘ওমা! ম্যাজিক!’ বলে উন্মুখ হয়ে ওঠেন বেশ। আপনি এলে বৃষ্টি আসে, আবার রোদও। এমন কী করে যে হয় ম্যাডাম! আমি জিজ্ঞেস করলে মুচকি হেসে আপনি বলবেন, সে ও একটা ম্যাজিক!
আমার জমানো শব্দকটি আজ তীব্র অভিশাপ হয়ে ছুটে গেল আপনার দিকে। কিন্তু ছুঁতে পারলো না। কোনদিনই পারে না। আজও চারুকলা বিকাশ কেন্দ্রের একতলায় এলেন আপনি। মোমবাতি ও বেতের কাজের খুব তারিফ করলেন। একঝুড়ি আম এক তরফা করুণা হয়ে পড়ে রইলো টেবিলের কোণে।
তবুও ম্যাডাম! শব্দ জমাচ্ছি। পরের ভিজিটে যদি দোতলার অন্ধ আবাসটি দেখতে চান!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন