শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬

বিদ্যুৎলেখা ঘোষ

জ্যৈষ্ঠ শেষের বিকেলগুলো


দূর আকাশে ঐ সীমাহীন আশ্রয়হীনতাও বুঝি কখনো কখনো ভরে রাখে বিষণ্ণ নীল। জ্যৈষ্ঠ শেষের বিকেলগুলো মাঝে মাঝে মেটে সিঁদুর পরে আর কাজের ফাঁকে ঘুরে ফিরে  নজর করে সেই দিগন্তে। মেঘ মেখেছে কতটা? আরও কত সাজগোজ বাকি? ঝির ঝির শুরু হয়ে যায় যদি? গাঢ় সবুজ পাতায় মোড়া নাগকেশরেরও তখন মাথা ভরা সিঁদুর। একটু পরে যখন আধো অন্ধকারের ঘোমটা টেনে নেবে তখনই রোজকার চেনা পায়ের শব্দ কাছে আসতে থাকবে। আসতে আসতে একটু থেমে যাবে। ক্লিক ক্লাক গ্রিলের গেটটা খোলার পর বন্ধ হওয়ার আওয়াজতারপর শব্দটা আরেকটু কাছে এসে আবার একটু থেমে জুতোজোড়া বাইরে রাখবে। এরপর ঘরে ঢোকার দরজার উপর একটা ছায়া পড়বে। ব্যাস একদম মুখোমুখি এসে দাঁড়াবে সুমনার বরকিন্তু কখনঅপেক্ষা যেন আর ফুরোয় না। এত কীসের জন্য দেরি? কই, পার হয়ে যায়  নি তো এমন কিছু সময়! কাজকর্ম শেষ করে বসে থাকতে আর ভালোও লাগছে না।  ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। প্রায়ান্ধকার এই সময়টা একলা থাকতে ভয় করে সুমনার। যতক্ষণ না একলা সময়টা শেষ হয় ততক্ষণ স্বস্তি হয় না তার।

অপেক্ষাটা সেদিনও ছিল এরকমই। ভীষণভাবে উসখুস। বারবার বাইরের দিকে চেয়ে থাকাপ্রবল ঝড়ের তাণ্ডব থেকে বাঁচতে সুমনাদের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল অঞ্জন। ভদ্রতা করে ঘরে ভিতরে ডেকে নিয়ে বসিয়েছিল সুমনা। ক্রমশ বেড়েই চলেছিল ঝড়। অস্বস্তি! অভীক আসবে, আর এই সময়...! সমস্ত শরীর ছুঁয়ে আছে মিঠে ভালো লাগা অভীকও বোধহয় আটকে গেছে কোথাও। বাবা মা পাশের বাড়ি। দুটো বাড়ির পরেই। কিন্তু আসতে পারছে না। আড়ষ্ট লাগছে খুব। তবে অঞ্জন বেশ শান্ত নিরীহ ছেলে। 

মোমবাতিটার শিখা দুহাতে আড়াল করছে খুব করে, যাতে নিভে না যায়কিছু তেমন কথা বেরোচ্ছে না কারও মুখ থেকে। দূরে সোফায় বসে আছে  অঞ্জন। চুপচাপ কত আর থাকা যায়! সামান্য আলাপ পরিচয়ের মধ্যেই সামনে  সেন্টার টেবিলে রাখা মোমবাতির আলোয় আঙুলের ছায়া ফেলছে দেওয়ালে। শ্যাডো করে ময়ূর হরিণ মানুষের মাথা... এসব করে টাইম পাস করছিল তারা। খরগোশের  লাফানো দেখাতেই হাসিতে ফেটে পড়েছিল সুমনা। আর ঠিক এই সময় অভীক এসে ঘরে ঢুকে দুজনকে একবার দেখে বেরিয়ে গিয়েছিল শেষবারের মতো।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন