সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়

এখনও প্রেমিক

সূর্যের বিপরীতে কুয়াশার ওপর বা কখনও মেঘের ওপর আলোর যে বলয় তৈরি হয়, তা অনেক সময়েই চোখে পড়ে না। ইংরিজিতে একেই তো অ্যানথেলিয়ন বলে? চোখে না পড়াটিকে নয়, আলোর ঐ বলয়টিকে। সূর্য যদি আলোর একটি বহুজাতিক পুঁজি-প্রতিষ্ঠান হয়, তবে উলটো দিকের অ্যানথেলিয়নটিকে তার  কাউন্টার পলিটিক্স ভাবা যেতে পারে। এই বলয়ের অনেকটা নিচে যে ভূ-খণ্ডে  এখন বৃষ্টি পড়ছে, সেখান থেকে এখন আর ঐ বলয়টি দেখার উপায় নেই। আলোর সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানটিও দেখা যাবে না। সন্ধে হয়ে গেছে। সন্ধের আগে আজ এরকম কোনও বলয় তৈরি হয়েছিল কিনা — দেখা হয়নি তাও। বরং এই বৃষ্টিতে মনোনিবেশ করা যাক। প্রচণ্ড হাওয়াও বইছে বাইরে। এলোপাথারি হাওয়ার ফলে বৃষ্টির ফোঁটা টিনের চালের ওপর এমনভাবে পড়ছে — শব্দে মনে হচ্ছে কুলো থেকে ধান ছেটাচ্ছে কেউ। এবারে শিল পড়াও শুরু হলো-কে কি কাঁকর বলব?  এত মন কেমন নিয়ে এই শহরের জল ছোঁয়নি কখনও, আগে, অরুণেশ এত জল এত মেঘ এত শহরও এই শহরে সে দেখেনি আগে।

— ‘আমার বাসাটার একটা নাম রাখা হয়েছিল, অক্ষরবৃত্ত।’ অরুণেশ বলে। 
তারপর মাথা নেড়ে, নিজেই নিজের ভুল ঠিক করে।
— ‘না, বরং বলা ভালো, রাখা হবে এমনটাই ঠিক হয়েছিল।’
এবার সে সত্যের দ্বিতীয় ধাপে অবতীর্ণ হয়, বলে,
এখন সেখানে ছন্দ কম পড়েছে 
খানিক ভেবে, জীবনের এই খামতির বিপরীতে নতুন এক যুক্তির বলয় তৈরি করে সে মানুষ তো এই-ই করে, এদিকে মাটি কমলো তো ওদিকে বালি ফেলে আসে নইলে সে দাঁড়াত কোথায়! আঁকড়াত কী! তাই তাকেও বলতে হয়, কিন্তু আমরা  জানি, মাত্রা অক্ষর পর্বে নয়, ছন্দ সব থেকে বেশি বাস করে যতির বাসায়। যতিতে থাকে স্মৃতি।’
— ‘স্মৃতি কি? যতিতে কীভাবে থাকে?’ ওকে জিগ্যেস করি।  
— ‘হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে — কমা দুটো দ্যাখো। এটা পড়ার পর দুপুরের বিরাট মেঘময় আকাশে ডানা স্থির রেখে ভেসে যাওয়া একটাই চিল চোখে ভাসে। সেই একা চিলের জন্য দুঃখ হয়হায় চিলের পরে যে কমা, তা সেই দুঃখের স্মৃতিটাকে নিয়েই তো দাঁড়িয়ে আছে।’ 
একটু থেমে বলে, ‘তার পূর্বের সবটুকুর চলা ডুবে থাকে, মিশে থাকে যতির আনখশির


একটা বাসার নাম রাখা হয়েছিল অক্ষরবৃত্ত। এখন যতিতে এসে, সে বাসা, জ্বলজ্বল ও ছলছল করছে। বিজ্ঞানের নিয়ম মেনে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতেও কি থাকে না বন্যার জল মিশে?  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন