জেন্ডার
লোকটি টানা
হেঁটে চলেছে। কয়েক যুগতো হবেই। চলার ভঙিটা নুয়ে পড়া কিন্তু চলাটা থামছে না, পা ঘষ্টে
ঘষ্টে চলছে লোকটা কিছুটা শুকনো আর পাংশুটে অবয়ব। এই লোক নারী কিংবা পুরুষ বা অন্য
যে কেউ হতে পারে। জেন্ডারের প্রশ্ন এখানে অবান-র। কিন' অবান-র বললেই কি আর অবান-র
হয়ে যায়? যেমন তুমি যেভাবে চলেছিলে ভোরের পথ ধরে আমিও কি ঠিক সেভাবে সেভাবে মানে
পথে কি কোনো পাথর ছিল না, চড়াই-উৎড়াই? আর সবগুলো কি একই আকৃতির আর খুরআলা ছিল?
মসৃণতা কোথাও ছিল না? তোমার পথে বসানো ছিল কি কোনো এলিভেটর? শ্রেণী। হ্যাঁ শ্রেণীর
কথা তুমি তুলবে জানি আর পারিবারিক ইতিহাস, বেড়ে ওঠার ইতিহাস। না, তাতো কেউ
অস্বীকার করছে না। এগুলো সব ছিল তোমার পথে একরকম আমার পথে আরেকরকম, যার যার পথে
তার তার রকম। তবু সোসাইটি ভ্যালুজ কিছু আছে কি? এই ধরো নিরীহ একটা গানেই কেমন সব
কমপ্যাক্ট হয়ে আছে। কারণ কবি-তো কবিতা লিখতে গিয়ে জেন্ডার ফলায় না, যা মনে আসে
লিখে যায়। আর এই মনতো মনুষ্যসৃষ্ট। কোনো ওহি প্রাপ্ত হয়ে লেখা হয়নি ছয়ফুল মুলক
বদিউজ্জামান।
প্রেমটা
নিরীহ। প্রেমিক-প্রেমিকা নয়; তাদের চোখ কখন লাফিয়ে উঠবে, বাম কান নড়তে থাকবে, জিভ
শুকিয়ে আসবে চুমু খাওয়ার জন্য তা কেউ বলতে পারে না। কার সেক্স অর্গ্যান্ কখন
আত্ম-নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে আর তোমরা সব প্রতিবাদের ঝড় তুলে তাকে বহিষ্কার করতে
চাইবে দেয়াল ঘেরা ঘর থেকে। কিন' বাইরেটা অনেক বড়। সেখানে পত্রিকায় ছাপা হওয়া
ক্লিপিং এর কথা কেউ মনে রাখে না। বহিষ্কৃত ছাত্র একসময় দেশ-বরেণ্য ব্যক্তিত্বে
সম্মানিত হন, এমনকী তার মৃত্যুতে জাতীয় মর্যাদা দেয়া হয়। আর সবাই বলাবলি করতে থাকে
লোকটি সত্যি নেকি ছিলেন, কোনোদিন এক ওয়াক্ত নামাযও কাযা করেন নি, স্ত্রীকে মায়ের
স্থান দিয়ে গেছেন। একজন মানুষ কাউকে মাথায় উঠিয়ে নাচতে পারেন আবার আরেকজনকে পায়ে
দলে ফেলতে পারেন। এর কোনো ধরা-বাঁধা সূত্র নাই। তত্ত্ব কপচিয়ে বলা যায় অমুক
ফেমিনিস্ট তমুক নিহিলিস্ট কিন্তু বিহেভিয়ারের ক্ষেত্রে ফ্রয়েড, লাকা, কামিনী রায়,
বান কি মুন, কামু, ফুলন দেবী, করুণা ম্যাগদালেন সব লেপটে থাকে। এর মধ্যে কখনো কখনো
বিন লাদেনও ঢুকে পড়তে পারেন এবং ঢুকে পড়েন বৈকি। এতসব নিয়ে চলতে চলতে লোকটি পেরিয়ে
যায় রেললাইনের স্লিপার, টঙ্গি ডাইভারশন রোড। গাড়ি চলে যায় চিঁড়ে-চ্যাপটা করে বা
গাড়িকেও পিষে মারে সে বিপরীতক্রমে। এসব সব ভাবালুতা? ভাবালুতা ভাবলে
ভাবালুতা না
ভাবলে না, কিন' জেন্ডার সমস্যারতো সমাধান হল না। হবা আর আদম-কে কার পাঁজর থেকে
তৈরি হয়েছিল কখনো সে তর্ক চলেনি বরঞ্চ বলাই হল ইডেন গার্ডেনে হবার ছিনালিপনা আর
আদমের পদস্খলনের কথা। এই নিয়ে মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট, ভার্জিনিয়া উলফ কতজন যে লিখল
তার ইয়ত্তা নাই। তো লিখে সমাজ উদ্ধার হচ্ছে কিছু কিছু। সে ভরসায় অনেকে বসে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে
সাবজেক্ট বানিয়ে পড়াও শেষ। লোকটি তবু চলতে চলতে কোথাকার কোন কোথায় যেন এসে পড়ল।
এখন কি তার জেন্ডার পরিচয় বলার সময় হয়েছে; কে বলতে পারে? কোন সে যুধিষ্ঠির!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন