বিষবাষ্প
অনেকক্ষণ ধরেই উসখুস করছে ছেলেটা। অতি সাধারণ জামাকাপড়। উঠছে বসছে, পকেটে হাত ঢুকিয়ে দু’বার বাথরুমও ঘুরে এলো।
মাঝখানে উঁকি মেরে বিধানের বোর্ডিং পাসটা দেখে আলাপ জমানোর চেষ্টাও করেছিল।
- বাগডোগরা যাবেন বুঝি? আমিও।
- হ্যাঁ। সংক্ষিপ্ততম উত্তর।
কিছুক্ষণ পর-
- ওখানেই থাকেন? না বেড়াতে?
- ফিরছি। আচ্ছা জ্বালাতন তো!
- আমিও ওদিককার। ইসলামপুর।
হঠাৎই একটা গন্ধ নাকে ভেসে এলো বিধানের।
- নাম কি তোমার?
- মহম্মদ ইকবাল।
পার্টির মিটিং অ্যাটেন্ড করতেই এবার দিল্লি আসা বিধানের। রাজধানীতে এসেছিল, ফিরছে প্লেনে, প্রথমবারের মতো। জেলা সেক্রেটারি ও। পশ্চিমবঙ্গে কী করে বেস বাড়ানো যায়, অনেক আলোচনা পরামর্শ হলো।
অক্টোবর মাস। বর্ধমানকান্ডটা ও দিল্লিতে থাকতেই ঘটলো। আস্তে আস্তে রহস্য খুলছে। সত্যি! কী ভয়ঙ্কর আগ্নেয়গিরির ওপরই না বসে আছি আমরা!
কপাল ফেরে করোলবাগের যে হোটেলটাতে উঠেছিল, ১৮-২৫ সব বয়েসী স্টাফগুলোই বিশেষ একটি ধর্মের। যাকে বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করেছে, এক উত্তর - কিষানগঞ্জ। সমান স্বাচ্ছন্দে বাংলা বা হিন্দী বলে। অদ্ভুত লেগেছিল বিধানের। যেচেই অনেক কথা বলল একজনের সাথে, চিকেন পকোড়া সহযোগে গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে।
ঠিক ধরা পরে গেল। জামশেদ আর নাসির শুধু কিষানগঞ্জের, বাকিরা কেউ ইসলামপুর, মালদা কেউ বা শিলিগুড়ির কাছে নেপাল বর্ডার ঘেঁষা গলগলিয়া।
এখানেও কি ওদের গ্যাং ঘাটি গাড়ছে! কিচ্ছু বিশ্বাস নেই!
মাথার ভেতর থেকে সন্দেহটা হাজার চেষ্টায়ও যাচ্ছে না। এয়ারপোর্ট আসার পথে টাইট সিকিউরিটিও নজরে পরলো।
জোর পেয়েছে। প্রাকৃতিক কাজ সেরে পেছন ঘুরতেই... কী কান্ড! ইকবাল দাঁড়িয়ে।
- এখানে দরজা বন্ধ করা কোনো বাথরুম নেই? পকেটেই হাত।
-কেন? ...কোমরের কাছটা কি একটু উঁচু ঠেকছে!
- What happens? সাদা পোশাকের এয়ারপোর্ট অথরিটির একজনও তখুনি বাথরুমে এলো।
নিজের সন্দেহের কথাটা নিচুস্বরে ইংরেজিতে ভদ্রলোককে বলল বিধান - to be 100% sure, kindly check him once more.
চেয়ারে এসে বসল, নজর যদিও বাথরুমেই।
মিনিট দশেক। বেরোলো সাদা পোশাক। - No problem, just personal issue.
যাক বাঁচা গেল! বিশ্বাস নেই এদের!
ফিরে পাশে এসেই বসল ছেলেটি।
- আমার কথাই জিজ্ঞেস করছিল, না? ওই লোকটা!
- ওখানেও কত কি বলল। গায়ে হাত দিয়েও দেখলো।
নিজের দেশের লোক বিধানই বেশি আপন ওর কাছে।
- আসলে না, এটাই আমার প্রথম প্লেনে চড়া।
- আজকে সকালেই দাদা ফোন করে জানালো, স্ট্রোক হয়েছে বাবার। বাঁচার চান্স কম।
- জানেন, এখানে মুচির কাজ করি কারখানায়, ৫ বছর হলো। মালিকের কাছ থেকেই টাকা ধার করে টিকিট কাটলাম।
- কী দাম! ১০,০০০ টাকা লাগলো। বলেই চলেছে ছেলেটা।
একটা লজ্জ্বাবোধ, গ্লানি কি নামছিল! বিধানের গা বেয়ে বেয়ে, মাথার ভেতর থেকে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন