ঝুমুর দুলাল
ঝুমু না বুঝেই বেড়ালের নাম রাখল, মাওবাদী কালু। গোল মাথা, মার্জারীয় চোখ। দু’হাতের থাবায় ঝুমুর গলা জড়িয়ে চুমু দেয়। এটা কালুর গল্প না, এটা ঝুমুর গল্পও না।
- মাও মাও! কালু বলে।
- কী হয়েছে সোনা? ঝুমু বলে।
- মাও মাও! কালু বলে।
- আচ্ছা খাও। ঝুমু বলে।
দুধের গন্ধ পেয়েছে। গলবস্ত্র হয়ে শিবলিঙ্গে একঘটি দুধ ঢালতে যাবার আগে কালুর সামনে ঢালল।
কালু চেটে চেটে খেল।
- মাও মাও! কালু বলল।
- আর নেই সোনা! ঝুমু বলল।
ঝুমু’র বর ওকে ছেড়ে গেছে। আট-দশ কিলোমিটার দূরে দ্বিতীয় সংসারে থাকে। ঝুমু যাদের গলগ্রহ, তারা সম্পর্কে তার ঠাকুমার মাসতুতো বোনের ছেলে আর বৌ। কিন্তু ঝুমু’র সঙ্গে ওরা তেমন খারাপ ব্যবহার করে না। খালি রাতদুপুরে কাকার গরম চড়লে, তাকে দেখাশোনা করতে হয়। কাকীরও সম্মতি আছে। আগে কাকা অন্য পাড়ায় যেত। এখন ঘরেই।
ঝুমু ছোটবেলায় মা’কে ছেড়ে রাত্তিরে কোথাও থাকতে পারত না, কাঁদত। দু’একবার চেষ্টা করেও ফিরে এসেছিল অনেক রাত্তিরে। কুড়ি বছর বয়সে বিয়ে হয়ে বরের বাড়ি যাবার সময়ে কেঁদেকেটে অচেতন হয়ে গিয়েছিল। ‘ঢঙ’ - শ্বশুরবাড়ির মানুষ বলেছিল। পরে বর বাড়ি না থাকলে সে একা শুয়ে তার জন্যে কাঁদত। বর চলে যাচ্ছিল জিনিসপত্তর সুটকেসে ভরে...
- আমি কোথায় থাকব? ঝুমু বলেছিল।
- আমি কী বলব? শঙ্কর বলেছিল।
- তাহলে কে বলবে? ঝুমু বলেছিল।
একা বসে সে দেখছিল, তার চাদ্দিকে আট বছরের সংসার ঝুলছে। সে একটা ইস্কুলে সেলাই শিখত। সুতো-টুতো, ছুঁচ-বোতাম, কাটা-কাপড় ভর্তি বাক্সটা কোলে নিয়ে রাত কাটাতে লাগল। বাপের বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি - গেল না কোথাও। সেই কাকার কাছেই থাকত। রাত্তিরে এসে শরীরের হিট কমালো।
- আমি কোথায় থাকব? ঝুমু বলেছিল।
- আমি কী বলব? শঙ্কর বলেছিল।
- তাহলে কে বলবে? ঝুমু বলেছিল।
একা বসে সে দেখছিল, তার চাদ্দিকে আট বছরের সংসার ঝুলছে। সে একটা ইস্কুলে সেলাই শিখত। সুতো-টুতো, ছুঁচ-বোতাম, কাটা-কাপড় ভর্তি বাক্সটা কোলে নিয়ে রাত কাটাতে লাগল। বাপের বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি - গেল না কোথাও। সেই কাকার কাছেই থাকত। রাত্তিরে এসে শরীরের হিট কমালো।
- চল ঝুমু আমার বাড়ি! কাকা বলল।
- ঝি খাটাবে? ঝুমু বলল।
- না না, অনেক কাজের লোক। তোর কাকী লোক ভালো। তবে মেয়ে দুটোর জন্ম-ইস্তক রোগাভোগা। কাজ করছে শুনলে তার বাপ আমায় গুণ্ডা দিয়ে ঠেঙাবে। তুই চল! কাকা বলল।
গেটের সামনে পৌঁছে দেখল, কাকী নড়া ধরে কালো বেড়ালবাচ্চাকে ছুঁড়ে ফেলছে।
- অমঙ্গল! অমঙ্গল! কালো কুচকুচে এটা... ঝাঃ ঝাঃ! কাকী বলল।
- মাও মাও! কালু বলল।
- আহা কী ছোট গো! ঝুমু বলল।
দৌড়ে এসে তার উথলানো বুকের ওম দিতে লাগল।
- অমঙ্গল! অমঙ্গল! কালো কুচকুচে এটা... ঝাঃ ঝাঃ! কাকী বলল।
- মাও মাও! কালু বলল।
- আহা কী ছোট গো! ঝুমু বলল।
দৌড়ে এসে তার উথলানো বুকের ওম দিতে লাগল।
সিঁড়ির তলায় অন্ধকার ঘর, একটা ঘুলঘুলি জানালা। ওটা ঝুমু’র একার। এমনিতে বাড়িটা নেহাত ছোট নয়। ঝুমু বরাদ্দের বাইরে যেতে পারে না। সব পরস্মৈপদী। পরের কথায়, পরের বাড়ির নিয়মে গা-গতর নিয়ে বেঁচে আছে ঝুমু। দুপুরে ভাতঘুমটা নিজস্ব, মাওবাদী কালুকে কোলে নিয়ে বসে। দোলায়, দোলায়, কদলীকাণ্ড। তার কখনো ফল-না-আসা কোলে কুণ্ডুলি পাকিয়ে ঘুমোয় কালু। ঝুমু’র চোখ বুজে আসে ভাতঘুমে। তবু পা দোলাতে থাকেঃ
- ওরে আমার মাণিক-রতন!
- ওরে আমার মাণিক-রতন!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন