রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

মেঘ অদিতি

টিলো এক্সপ্রেস

আড়াল করার চেষ্টা প্রথম। ধীরে ধীরে একদিন তা অভ্যেস। অবস্থানের পরিবর্তন তেমন হলো না। নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য রান্নাঘর বা কিচেন স্টোরটাই তো সবচেয়ে নিরাপদ।

টুকিইইই! এই আমি লুকিয়ে পড়ছি। আমায় কেউ খুঁজে পাবে না... উহুঁ খেলাটা শেষ  অবধি খুঁজে পাবার নয়, বরং না পাবার।

পেত না খুব। সেনাপ্রধান আর বাড়ির অন্য সব সদস্য, কেউ তাকে খুঁজতে আগ্রহী বা কই! কেবল সময় মতো রান্নাগুলো টেবিলে চাই। নিজের জন্য পোড়া ভাত কি আলুসেদ্ধ, সেই অনেক। শুধু মাঝে মাঝে সুপ্তি। ওর বায়না সে অর্থে খুব সবলও নয়,  তুমি না এলে আমি স্কুল ইউনিফর্ম ছাড়ব না! সুপ্তি সোনা, এই দেখ হাতের রান্নাটা সেরে আমি আসছি, তুমি বদলে ফেল। সুপ্তি ঠিক এই কথার পরই শান্ত হয়ে যেত। খুব ছোট্টবেলাতে সুপ্তিকে তবু পেত খানিক, সেটা ওকে খাওয়াবার সময়। ত ছোট শিশুর তো মায়ের দুধটুকু চাই, তাই খাবার সময় হলে ওরা তাকে কোলে তুলে দিত।  সে সময়টুকুই স্বর্গীয়। সুপ্তি আবার ফিরে যেত অন্যদের মাঝে। সে ঢুকে পড়ত আলু আর কুমড়োর খোসা দিয়ে নতুন কিছু খাবার তৈরি করতে। মাঝরাতটা তার ঘরে  ঢোকার সময়। তখন আর লুকিয়ে থাকা নয়। নিজের ঘরে একা বিছানায় সামান্য ঘুমিয়ে নেওয়া। কোনো কোনো মাঝরাত্তির, তবে তার জন্য ভয়েরও কারণ ছিল।  ভয়ই তো! যার জন্য এ বাড়িতে সে আছে, সে বেশির ভাগ সময় শহরের বাইরেই। ছ’মাসে ন’মাসে ফিরলে সেই মাঝরাতগুলো ভয়ের বটেই। কখনও বীভৎসতারও। দরজার কোণে জড়সড় হয়ে পড়ে থাকার। বন্ধ চোখে তখন প্রতীক্ষা তার ভোরের আলো ফোটার। একবার সাহস করে বলেছিল, তোমাকে অভিশাপ দিলাম। শুনে ভ্রূ ওপরে তুলে হাতের গ্লাসটা...  

কপালের কাটা দাগটা জ্বলজ্বলে। খুঁত কই, বরং সৌন্দর্য আরো খুলেছে। আয়নায়  দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে শুনল ফোন। এত রাতে ফোন কার? এক পা  দু পা ...বালিশের পাশে রাখা ফোনটা বাজতে বাজতে থেমে গেল। ফিরল আবার  আয়নায়। কৌশিক গত রাতে ওকে সাইকো বলেছে। নিজের যোগ্যতার চাইতে অনেক ওপরের বলে সে নাকি নিজেকে ভাবে, কৌশিকের অভিযোগ। কেটে কেটে বলা শব্দগুলো অস্বস্তিকর খুব, তবু মন থেকে তো সরানো যায়, ফলে সেগুলো একটু  পরপর তাকে অভিযুক্ত করতে থাকে, আঙুল শাসায়, বলে তুমি কে? কে তোমাকে হাঁটতে শেখালো! আমি ছাড়া তোমার মূল্য কী?
 
নার্সিসিস্টিক পারসোনালিটি ডিজওর্ডার আত্মকেন্দ্রিক মানসিক অস্থিরতার শিকারসাইকো।
  
আয়নায় চোখ। একটা দুর্ঘটনা যার জোর ধাক্কা তাকে আজও ঠেলতে থাকে খাদেরই দিকে। সেদিন স্বজনহীন শহর তো তাকে গিলতে চাইছে। কেউ কোত্থাও নেই। দাঁতে দাঁত চেপে সে লড়াই; আশ্রয়, না ভোলেনি। এই কৌশিকই তখন তাকে আশ্রয়  দিয়েছিল। ভোলা যায় না। অকৃতজ্ঞ সে কোনোদিনই নয়। আত্মকেন্দ্রিক যদি হবে তাহলে সে সমস্তটা দিয়ে আজ কৌশিককে... সাইকো? আয়নায় চোখ। সুপ্তি বোধহয়  অনেকটা বড় হলো... মা।‘কে ওর কি মনে পড়ে? ডিভোর্স লেটার কত হাত ঘুরে  যখন ওর হাতে এলো, তখন সে দাঁড়াচ্ছে আবার। সই করেছিল দ্বিধাহীন।

যতক্ষণ বাঁচা ততক্ষণ চেষ্টা, আজীবন সে এমনটাই ভেবেছে।
  
সাইকো?
ফোন বাজছে।
আত্মকেন্দ্রিক!
ফোন বাজছে।
একবার। দু’বার। তিনবার। কৌশিক কলিং...
আয়নায় চোখ রাখে সে...
খেলাটা মন্দ না। টিলো এক্সপ্রেস।
টিলো এক্সপ্রেস... টুকিইইইই...


1 টি মন্তব্য:

  1. বিবাহিত জীবন থেকে ছিটকে আসাটা খুব কষ্টদায়ক! তবু এই সম্পর্ক যখন অসম্পর্কের পথে এসে যায় তখন ছেড়ে দেয়াটাই শান্তির। গল্পটা মোটামুটি বলা যায়। তবে আপনার কাছ থেকে কিছু নতুন আশাই করা যায়...

    উত্তরমুছুন