ধ্বংসে নেই
অনুস্বর
প্রবালে ও শৈবালের
দ্বন্দ্বে শৈবাল জিতে যাচ্ছে। শৈবাল কলোনির লোকেদের প্রকৃত জলজ শক্তি দেখে আমিষাশী
প্রবালরা হারছে কি করে, এ এক রহস্য। আমাদের নাভিজমিনে জন্মাচ্ছে নগ ব্যাড দি ব্যাডের
মণ্ডূকলতা অনুলতা... মৌরলা নামটি পুরুষ ও স্ত্রী মাছেরা নিজেদের একচেটিয়া করে
নেওয়ায় শুধুমাত্র মেয়েদের নাম হিসেবে ওটা
গ্রাহ্য হবে না। আমার চোখে কোনো পকেট নেই। তাই মৌরলা মাছের কেজি পাঁচশ হলো কিনা বা
ওরা বিপন্ন প্রজাতি হলো কিনা বা মৌরলা নিজস্ব অবস্থান সচেতন কিনা, কিছুই বোঝা গেল না, কারণ
আজকাল কুঁদঘাট বাজারের মাথার ওপর নব্বই
ডিগ্রি কোণে একটা ঘূর্ণিঝড় ঘুড়ির মতো লাট খায়।
মধুলেখা দেখছিল ট্রেনের
কামরায় এক ভদ্রলোককে, মানে ঠিক ভদ্রলোক বলতে যা বোঝায় তা সে নয়। একটু কম মার্জিত, শিক্ষিত
মানুষদের মার্জিন ঘেঁষেও হয়তো বেরবে না, সাজপোশাক কথাবার্তা তাই বলে। প্যাকেটভর্তি
মৌরলা মাছ হাতে দাঁড়িয়ে গল্প করছে আরেকজনের সঙ্গে। মৌরলার রুপোলি আলো মাঝে মাঝে
চোখে পড়ছে।
মধুলেখা জানে, আজকাল
বাস্তব আর স্বপ্নের মধ্যে পার্থক্য থাকার কোনও দরকার নেই। হ্যাঁ, ঘর, নিজের
ঘর তবু অচেনা একমাত্র মৃতদের চারণভূমি। এত খাট এলো কী করে, ও জানে না। একটা ঘরে
তিনটে ডাবল বেড একে অন্যের পথ রুখে শুয়ে আছে।
শুধু ছাদটাই বড় হয়ে গেছে। আর বইয়ের র্যাকটা সরু ও লম্বা হয়ে মেঝে থেকে ছাদ
ছুঁয়েছে। কে যে থাকে এখানে... ভাবতে ভাবতে যে বয়স্কা ভদ্রমহিলা ঘরে প্রবেশ করল, সে
তো পাশের ফ্ল্যাটে এসেছে মাস কয়েক হলো। তার হাত পা ব্যাঁকা একটু খুড়িয়ে চলে জন্ম থেকেই। হঠাৎ করে সে যেন শাশুড়ি
হয়ে গেল মধুলেখার। সে বলল, ‘বৌমা বাসি কাপড় ছেড়েছ?’ মধুলেখার গোটা জীবনটাই তো বাসি। কর্মের খাতিরে
রাত তিনটে চারটের সময়েও সে বাড়ি ফেরে। সাইটে কাজ থাকলেও তো থেকে যেতে হয় অফিসের
গেস্টহাউসে। কিন্তু এখন সে অযথা খাটগুলো ধরে টানাটানি করতে লাগলো। এত বালিশ চাদর ছড়িয়ে
চারদিকে তার দমবন্ধ হয়ে আসছে। সে চাদর পেতে যাচ্ছে তো যাচ্ছে... কে যেন বলল, শ্বশুরকে
খেতে দিতে হবে জলখাবার। উনি পাশের ঘর থেকে চেঁচিয়ে কোনও একটা খবর কাগজ চাইলেন। ও
দেখল পত্রিকা ভরা সুন্দর সুন্দর সরোবরের ছবি। এই তো তাম্রবর্ণা মৃত্তিকার ছবি আর
ঝুরো খয়েরি রঙের বালি! তার একজন স্থায়ী প্রেমিক থাকা সত্বেও সে কোনও এক প্রিয় মানুষের সন্ধানে ছুটছে। বাথটাব ভরা
সাদা চকচকে মাছ... বাসের সেই লোকটি লুঙ্গি পরে মাছ বিক্রি করছে বালিরেতের ওপর।
কিন্তু লুঙ্গি এক্সিকিউটিভ অফিসার মানুষ কী
করে যে পরে... এই লোকটির জন্যই কি সে সৈকতরেখা ধরে ছুটছে? ও জানে না জানে না... না
জানার কী যে কষ্ট! মধুলেখা বালির যেখানে পা রাখছে সেখানেই মৃত মৌরলা মাছ ফুটে উঠছে। মৌরলা
মাছেরা প্রথম যৌবনে একবার বেড়াতে আসে এই খয়েরি বালিতে। তখন কানামাছিদেরকে চক্ষুদান
পর্ব শেষে নোনতা হাওয়ার পুরোহিত ফিরে যায়। বাতাসে ভাজা মাছের গন্ধ... কাঁচা শুঁটকি
মাছের গন্ধ... তাদের কথোপকথন... জানা বানান ভুল করে লেখার পরই ঠিক বানান মনে পড়ে
যায়। তখনই তো মৃত্যুভূমি দেখতে ফিরে আসে মৌরলার ঝাঁক... ঘুম তো আসলে মেঘ একটু ঘন
হলেই কান্না ঝরাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন