রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৫

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত

মিলিয়ে যায় ভ্যালেন্টাইন

নেহা ভিকিকে ইদানীং সহ্য করতে পারছে না। ভিকির কোনো দোষ নেই তেমন।  কিন্তু বড় বেশি সিগারেট খায়। বিয়ের আগে ভিকির ঐ সিগারেট খাওয়া দেখেই প্রেমে পড়েছিল নেহা। নীল জিনের প্যান্ট। আজকাল ছেলেদের যা থাকে না, মোটা জুলফি, একমাথা কোঁকড়া চুল। সাদা সার্ট। মোটর সাইকেলটায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতকলেজের সামনে। ছুটির পর পৌঁছে দিত ডোভার লেন পর্যন্ত। নেহার বাপের বাড়ি। রাধেশ্যামবাবুর বড়বাজারে সলিসিটর ফার্ম। একদিন দেখে ফেললেন। রাসবিহারী অ্যাভেন্যুর ওপরে দাঁড়িয়ে ভিকিকে সি অফ করছিলশীতের বিকেলে শান্ত বাতাসে ভিকি একটা সিগারেটের ধোঁয়ার রিং ছুঁড়ে দিল। ঠিক বসে গেল নেহার গলায়।

উও কওন হ্যায় বেটি?
কওন পিতাজী?
উও লড়কা?
উও তো ভিকি হ্যায় বাবা।
ঠিক হ্যায়, লেকিন তুম দোনো কোই ভি হেলমেট কিঁউ নেহি পহনা?
ঠিক হ্যায় পিতাজী। বোল দুঙ্গি ফির অ্যায়সা নেহি হোগা।
পরের শীতেই নেহার সঙ্গে ভিকির বিয়ে হয়ে গেল
ভিকি কিন্তু বাঙালি। বিধবা মা আপত্তি করলেন না। ছেলের পছন্দ। মেয়ে ইউপির ব্রাহ্মণ। নিরামিষ খায়। ভিকিরা বারেন্দ্র। পাঁঠার মাংস ভিকির পছন্দ।

কিন্তু নেহা ভিকিকে ইদানীং সহ্য করতে পারছে না। ভিকির কোনো দোষ নেই  তেমন। কিন্তু বড় বেশি সিগারেট খায়। যদিও বিয়ের আগে ভিকির ঐ সিগারেট খাওয়া দেখেই প্রেমে পড়েছিল নেহা। কিন্তু দিনকে দিন শীর্ণ হয়ে যাচ্ছে ভিকিচুলে পাক  ধরেছে। মোটর সাইকেলটা নিচে রেখে সিঁড়ি দিয়ে যখন উঠে আসে গা থেকে ভক ভক করে বেরোতে থাকে সিগারেটের দুর্গন্ধ।
দুজনে কোথাও একসঙ্গে গেলেও সিগারেট ধরানো চাইই চাই। বড় বড় সিগারেটের দুটো প্যাকেটেও কুলোয় না। সন্ধেবেলাতেই ফুরিয়ে যায়। তখন আরও দুটো প্যাকেট কিনে আনে মোড়ের দোকানটা থেকে। আপত্তি করলেও শোনে না।


আসলে নেহা সিগারেটের প্যাকেটের ওপর লাংসের ছবি দেখে। কালো হয়ে যাওয়া লাংস। তামাকের আলকাতরা জমে রয়েছে সেখানে। মাঝে মাঝে কাশির দমকে ভিকির কথা বন্ধ হয়ে যায়। নেহা সহ্য করতে পারে না। ভিকির কি অকাল বার্ধক্য আসছে! চুলগুলোতে পাক ধরছে। চেহারাটাও বুড়ো বেতো ঘোড়ার মতো  হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন।
একদম সহ্য করতে পারছে না নেহা। সে বিধবা হতে চায় না।
ভিকির বদলে সে একটা কঙ্কালকে দেখে আজকাল।

ডিভোর্স চাই।
অনেকটাই জীবন পড়ে আছে নেহার।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন