কবিতায় দুয়েন্দে, দুয়েন্দের কবিতা
কবিতা কখনো লেখা হয় না তা হয় নাজিল এবং তখন হয় নাজিল যখন সে
কবিতাও হয়। কান্ট বলেছেন, একটি কবিতা সুন্দর ও সুরুচির হয়েও হতে পারে প্রাণহীন। soulএর
ঘাটতি থাকতে পারে। সাধারণ চোখে সুন্দর আকর্ষণীয় বস্তুও এই আত্মার সংকটে ভুগতে পারে। এই প্রাণ বা দুয়েন্দে হলো নান্দনিকতা যা অনেকটা যৌক্তিকতার
অপর পাশে অবস্থান করে। কবিতা বা যে কোনো শিল্প মাধ্যম যখন নান্দনিকতা এবং
যৌক্তিকতা উভয়ের সমন্বয়ে তৈরি হয়, তা হয়ে উঠতে পারে আত্মার কথা।
‘আদিম পুস্তকে এইরূপে লেখা হয়েছিল’এর সূচনা হয়েছে অবিমিশ্র
প্রারম্ভিকতায় যেখানে আপন পিতার করোটিতে মদ্যপান
করে শুরু হয় বজ্র ও বৃষ্টি। সেই বজ্র-বৃষ্টি ভেদ করে বাসিমুখে তার আগমন। এখানে
কবিতা ও কবি অবিচ্ছিন্নভাবে উপস্থিত থাকেন প্রতিটি অক্ষরের স্ট্রাগলে, প্রতিটি
শব্দের ব্যাঞ্জনায়; খাড়া ঢাল বেয়ে মর্ত্যপুরে নেমে আসে যে পরিব্রাজক তার উপস্থিতি
ছায়া বা আলোর উপস্থিতির মতোই রহস্যহীন অথচ ঋজু। যখন থেকে পাঠ করা শুরু হলো, ঈশ্বর অথবা প্রকৃতি তখনই নাজিল হয়।
স্রষ্টা এবং সৃষ্টি একই সাথে উদ্ভাসিত হয়। আদিম চিরন্তন যে জেনেসিস এই গ্রন্থে তারই
সূচনা করেছেন কবি। সময় সৃষ্টির আগেই কবি পৌঁছে গেছেন তার অখ-উপস্থিতি নিয়ে আর সেই
সাথে পাঠকও পৌঁছে যান সময়ের পূর্বের সময়ে অনড় স্থিরতায়, যেখানে সূর্যাস্ত নেই, সূর্যোদয় নেই। সময়ের পূর্বের যে অখ-নীরবতা তাই যেন এই গ্রন্থের প্রেক্ষাপট। স্বাপ্নিক মানুষেরা যে
কাল্পনিক পৃথিবীর জন্ম দেয় তা ক্রমশ ক্ষুধার্তর পেটে চলে যায়, তবু অন্ধ গহ্বর থেকে
জন্ম নেয় কালের দে জা ভ্যু। গ্রন্থটি সম্পূর্ণ একটি আর্ট ওয়ার্ক। প্রথম থেকে শেষ
কবিতা পর্যন্ত কবি একই ধারাবাহিকতায় লিপিবদ্ধ করে গেছেন মানুষের ভেতরের আদিম,
বর্তমান এবং ভবিষ্য রূপটি; যেখানে একদিকে সে ক্ষুধার্ত অন্যদিকে ক্রন্দনরত আত্ম
সমালোচনারত। কবির মানসিক জগতে ছায়ারা সব মরে পড়ে থাকে - মৌসুমী বাগানে নিহত গোকূল। এই যে শত
শত মৃত্যু, মৃত্যুর ছায়া, তা শারীরিক
অর্থে নয় শুধু - এটা প্রকৃতির, সমাজের, অস্থির প্রাণহীন রূপ। জীবনানন্দ দাশের কবিতায়
প্রকৃতি যেমন শান্ত, সুন্দর, গম্ভীর এখানে যেন ঠিক তার উল্টো পৃথিবী যেখানে দোযখের সাপ, বিদেহী ইবলিশ, ফণা তোলা
সাপ সঞ্চরণশীল। তাদের সংগ্রাম, যন্ত্রণা, ক্ষত-বিক্ষত রূপটি উঠে এসেছে শব্দে
শব্দে। একটা যন্ত্রণাদগ্ধ আত্মা একের পর
এক খুলে ফেলছে ত্বকের আবরণ। যার এক
পরতে কালো জল, অন্য পরতে রাত ক্রমশ ঘন হয়ে আসে। সেই অন্ধকারকে স্পষ্ট করতে
জোনাকিরা আলেয়া হয়ে জ্বলতে থাকে।
‘আদিম পুস্তকে এইরূপে লেখা হয়েছিল’ গ্রন্থে কিছু চরিত্র আমরা দেখতে
পাই, যে মদের পিপা থেকে মদ ঢেলে খায়, সারারাত কাটা-ছেঁড়া করে
নিজেরই ত্বককে, যার অবয়ব আলো আর ছায়া দিয়ে তৈরি। খালি চোখে, জ্ঞানহীন সত্তায় তাকে
চেনা যায় না। সৌপ্তিক, নিরুদ্দেশ, পরবাস - এই কবিতাগুলোয় যে ক্যারেকটারকে
সন্তরণরত দেখি, তাকে
মনে হয় অবয়বহীন - যার মুখ নেই, চোখ নেই, কান নেই, আয়ুহীন, আয়ুর অতীত, আবার পর মুহূর্তেই সে হয়ে ওঠে নিদারুণ অভ্রান্ত। বিস্মৃতির অতল গহ্বর থেকে হাওয়ায়
তার শাল উড়তে দেখা যায়, আর সে চরিত্র আলোচিত পৃথিবীর বাইরে চলে যায়, নিরুদ্দেশে চলে যায়, যদিও তার প্রতি অসম্ভব প্রেম জমা
থাকে কবি ও পাঠকের মন ও মগজে। তাকে বাটিভর্তি দুধ খেতে দেওয়া হয়, বাঘকে বলা হয় মৌসুমী ফল আর লতা-পাতা খেতে। সে পুষু বিড়াল সে প্রিয়তম কোনোদিন
যেন আর ফিরে নাহি আসে তারই বন্দনা করে এই গ্রন্থের কবিতা, শব্দের স্থাপত্য।
এই একই গ্রন্থে ভিন্ন কথা বলতে শুনি কবিকে, যারা পরস্পর থেকে
মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদেরকে আহবান করা হয় একই পাত্রে আহার করার জন্য, পান করার
জন্য। এই যে কবিমানস তা সৃষ্টিশীল সত্তারই প্রকাশ। জীবন যেমন প্রতিমুহূর্তে নতুন,
পরিবর্তনশীল এবং একই সঙ্গে পুরনো, চেনা - তেমনি শব্দ, অক্ষর, কবিতাও শরীরে ধারণ করতে পারে ডাইকোটমি; দ্বৈততা। কখনো
সে মধ্য দুপুরে একলা কশাই, রাম দা
শানিয়ে হাড্ডি কোপায় আবার সেই সত্তাই মূক বধির কণ্ঠে এক কম্পমান শব্দ-ওম্। এই যে
বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে ছুটে চলা, এক বাহু থেকে অন্য বাহু, জ্ঞানের এক স্তর থেকে
অন্য স্তর, তা খুব নিরাভরণভাবে ঘটেছে কবিতায়। প্রতিটি
জড় ও জীবিত বস্তুর ভেতরে প্রবাহমান স্রোতধারা একই রক্তের কণিকায় ধারণ করে প্রেম ও ঘৃণাকে। যেখানে চলে যাওয়া নেই সেখানে ফিরে আসা নেই। এই যে যাওয়া-আসা
তা ক্রমশ পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেয় গ্রন্থি থেকে গ্রন্থিতে। আগুন-পাখি ফিনিক্সের
জন্ম হয় ছাই থেকে আবার সে আগুনের পাখি পড়ে থাকে সবুজ শ্যামলিমায়। হ্যাঁ হৃদয়ের
প্রতিটি তন্ত্রি এবং মজ্জার গোপন খেলা চলতে থাকে ধুলায় ধুলায়। একই কবিতায় ধনাত্মক ও
ঋণাত্মকতা আবার
একই শব্দের দ্ব্যর্থরূপ, আলোচ্য কবিতাগ্রন্থে সে
ধরনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখযোগ্য।
লোকালয় থেকে দূর, বহুদূর উপবন
বহুদিন পরবাস;
যারা গোত্রপিতার সাথে
শস্যভূমির খোঁজে পথ পাড়ি দেয়,
তারা কান্ত সবাই;
ক্ষতযন্ত্রণাময়, বিকলাঙ্গ ঘোড়ার মতো
শক্তিবিহীন
(ফেরা)
‘ফেরা’ কবিতাটিতে একটি সংস্কৃতির
আর্কিওটাইপ দেখতে পাওয়া যায়, শস্যভূমির খোঁজে পুরুষকে পাড়ি দিতে হয় বহু পথ কাস্তে-কোদালসহ।
ঘরে অপেক্ষারত সহধর্মী, সহোদরা। এই যাত্রা একদিন ফল থেকে বীজের জন্ম দেয়। এই যে একই কবিতার মধ্যে দীর্ঘ সময়ের
পরিভ্রমণ, এটা ঘটানোর জন্য বেশ দক্ষতার প্রয়োজন। ‘উপকথা’, ‘গায়েব’, ‘বসতি’, ‘প্রস্থান’ - এই কবিতাগুলোতে দীর্ঘ ভ্রমণের বিষয়টি রয়েছে। ‘উপকথা’র গদ্যধর্মী ভাষার ভেতর লুকানো আছে স্যাটায়ার। সময়ের ভেতর যে সময় রুয়ে থাকে তাকে ভেঙে ভেঙে ছোট
ছোট টুকরো করে দেখেছেন কবি। ‘উপকথা’র ভেতরকার দুয়েন্দে সময় উপচে ভেসে যায় ফেনিল সমুদ্রে, সেখানে এই সত্তাই তারা মাছ হয়ে আরেক
জীবনে। এই যে এক জীবনের ভেতর আরেক জীবন, প্যারালাল
লাইফ এই অনুভূতিটা ফিরে ফিরে আসে বিভিন্ন কবিতায়।
এই গ্রন্থের কবিতাগুলোর মূল শক্তি এর দর্শন, চিন্তা যেটা
সুপ্ত হয়ে আছে কবিতায়। কবিতা তো নানা জাতের আছে, কোনো কবিতা সরাসরি কথা বলে, কোনোটা
প্রতীকী, কোনোটা নৈর্ব্যক্তিক। জোবায়েরের কবিতায় প্রতীকী রূপটা বেশি
এসেছে। একটা পরিভ্রমণের
আদলে সময়, সংস্কৃতি, প্রকৃতি তার বহিঃআবরণ ভেদ করে প্রকাশ করে অন্তস্থ জেনেসিস।
শব্দের ব্যবহারে নতুনত্ব, ক্রিয়েটিভিটি রয়েছে। পুরনো শব্দই কবিতায় হয়ে উঠেছে নতুন,
যা হয়তো নতুন সময়ের, চিন্তার ইঙ্গিতকে বহন করে। তবে এই গ্রন্থের কবিতাগুলো বেশিরভাগই একজন যন্ত্রণাদগ্ধ আত্মার নীরব কথকতা। যা কবিতাকে
করে তুলেছে নিঃসঙ্গ একাকী। প্রতিটি মানুষ যেমন নিজের নিজের মতো একা, জোবেয়েরের কবিতাও তেমনই
এ্যালিয়েনেশনের প্রতীক। সমকালীনতা, প্রেম এইসব খুব সূক্ষভাবে কবিতায় রয়েছে, ততটা
স্পষ্ট নয় বরং চিরকালীনতা এখানকার কবিতাগুলোয় অনেক ঋজু। কিছু কবিতায় চরিত্রদের
একজন পরিব্রাজক হিসাবে হাজির করা হয়েছে যে হাড়হীন ঘোড়ায় সওয়ার হয়েছে। ঝোলার খাদ্য,
কিসমিস সব শেষ, যে ভ্রমণকারী চলছে তো চলছে, যার শরীরে পাথররূপী দরবেশ। গোত্রে গোত্রে
মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় আবার জেগে ওঠে। বিদ্যুতের আলোয় তার কুঁকড়ে যাওয়া শরীরকে
দেখা যায় আবার পরক্ষণেই বিদ্যুৎহীন কাঁটাতার। শিশু, উগরানো দুধ, আগুন ক্ষেত। এই যে
উপমার পর উপমা তা কবিতাকে গতিশীল রাখে। অংশত মৃত এবং অংশত জীবিত সত্তার সাথে
পৌনঃপুনিকভাবে কবি গেঁথে চলেছেন আদিম পুস্তকের সারবত্তা।
এখন রাত-
কর্কট-কাঁকলাস ছেয়েছে অলিভের দীর্ঘ জঙ্গল অতঃপর
কণ্টকশয্যায় শায়িত আমি, আর বিস্মরণশীল কীবের দল
নলখাগড়ার বন পেরিয়ে চলে যায় দীর্ঘ দূর কোন্ অরণ্যে
এখন রাত-
ক্ষয়-ক্ষোভ মৃত্যুর, মারী ও বিমারীর গন্ধ-উত্তাল বাতাসময়;
ছাইবর্ণের মেঘ-তা সমাগত আজ, ঠাণ্ডা হিম এক সরীসৃপ
.........................................
কান্নায় শ্বাসরোধ, জাগে কি মরণের শ্লেষ ও বিদ্রুপ সশব্দে!
উন্মুল কান্নার মতনই জাগরূক পত্রমর্মর অরণ্যে;
(প্রস্থান)
এই যে ‘প্রস্থান’ কবিতায় আত্মার আর্তনাদ, তা কেবল ক্লাসিক সাহিত্যেরই প্রতিচ্ছবি। ইয়েটস, এজরা পাউন্ড, রবীন্দ্রনাথ কবিতায় মানুষের,
প্রকৃতির নৈঃসঙ্গতাকে, বিচ্ছিন্নতাকে, যন্ত্রণাকে গেঁথে নিয়েছেন তাঁদের সাহিত্যে। তরুণতম কবি জোবায়ের খুব অদ্ভুতভাবেই এই বৈশিষ্ট্য তার কবিতায়
ব্যবহার করেছেন বা স্বতস্ফূর্তভাবেই তা এসেছে এবং তা
এই অঞ্চলের মন ও মননের সাথে বিশ্বমানবের আনন্দ ও আর্তনাদকেও প্রকাশ করেছে।
আয় জল্লাদ আয়,
নিকটে চলে আয়,
হোক না তাই হোক
মরণ হোক
এই যে আত্মকে নিয়ে একের পর এক মৃত্যুমুখী খেলা, গলগলে তাজা
রক্তে স্নান। শোক-তাপ-ক্রন্দন ভুলে সময়ের বাইরে অবগাহন, সূর্যের বেড় পেঁচিয়ে
নিঃশ্বাস, জ্যোর্তিময় ঘূর্ণন- এই সকল আত্ম-বিদ্ধতা কবি নিজের কন্ঠে ধারণ
করেন এবং একই সাথে গেঁথে নেন শব্দ দিয়ে। শব্দ
তো ব্রহ্মা, তাকে প্রভূতরূপে ব্যবহার করা যায়, জোবায়ের তা করেছেন। এই যে সময়ের
ভেতর যাপন, নগ্ন-পরিভ্রমণ, রঙধনুর আলাপন, বহ্নি উৎসব তা যেন কবিকে ক্লান্ত করে তুলেছে। সে চায় এখন নীরবতা, নির্ভরতা; কিন্তু তা কোনো গার্হস্থ্য সুখ নয়,
নয় কোনো কন্টকিত ফুলের শয্যা। কবি শরীরে চাবুকের আঘাত নিয়ে মাঠে মাঠে রুয়ে চলেছেন
স্বপ্নবীজ। যে বীজে ফুল হয়, ফল হয়, শান্ত নদীর বুকে স্পন্দন শোনা যায়
- এই তো কবিতা যা কবিকে
ছাড়িয়ে চলে যায় অন্যলোকে।
সব কবিতারই বিভিন্ন মাত্রা থাকে, ভাঙন থাকে। ‘আদিম পুস্তকে এইরূপে লেখা হয়েছিল’-এর কবিতাও তার ব্যতিক্রম নয়। ভাষা এখানে কমিউনিকেটিভ তবে অন্যরূপও দেখা যায়। জোবায়ের কবিতায় খুব বেশি কেটে-ছিঁড়ে
ল্যাবরেটরি ঘরের ছুরি-কাঁচির শব্দ শুনিয়েছেন বা তা হয়তো এই কবিতায় অনুসঙ্গ
হিসেবে চলে এসেছে। যা অনেক সময় পাঠকের জন্য,
কবিতার জন্য মাত্রাতিরিক্ত হয়ে পড়ে। সাহিত্যে প্রতীকের জন্মই হয়তো এধরনের অপারেশন
টেবিলের চিত্র স্বরূপে দেখতে না পাওয়ার জন্য। জোবায়ের আত্মা এবং চর্মের উপর কাটা-ছেঁড়া
করেছেন যা পাঠকের ত্বককে রক্তাক্ত করে। একমাত্র তৃষ্ণার্ত পাঠকের পক্ষে একে
সঠিকভাবে আস্বাদন করতে পারা সম্ভব, যা বিরল।
এবার জরায়ু চিরে বেড়িয়ে এসো, হাড় ও মুখ
নিয়ে দুইপাটি দাঁতের সম্ভাবনাসহ-
এই যে ইমেজের ভেতরের কঙ্কাল, তাকে ত্বক দিয়ে ঢেকে দেখতে অভ্যস্ত সাধারণ চোখ। তবে কবিতা পাঠকের জন্য এই সাধারণ চোখের সাথে
কয়েকজোড়া ভিন্ন পাওয়ারের চোখও দরকার হয়।
রবীন্দ্রনাথের সহজ ভাষার ভেতরের ভাষাটি বোঝবার জন্য যেমন সিমেনটিকস জানবার
প্রয়োজন নেই, তেমনি যে কোনো কবিতা আর্ট ফর্মের জন্য
হিস্ট্রি অফ আর্ট, জিনিওলজি না জানা থাকলেও বোধের বিষয়টা রয়েই যায়। তা তৈরি হয়
প্রকৃতিকে, সম্পর্ককে, মানুষকে পাঠ করার মধ্য দিয়ে। কবিও সে পাঠ নেন। ‘আদিম পুস্তকে এইরূপে লেখা হয়েছিল’-এর কবির এই পাঠদক্ষতা তাঁকে সময়ের চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে
গেছে।
কবিতা নিয়ে খুব বেশি কথা বলা যায় না বা সে নিজেই নিজেকে আবদ্ধ
করে রাখে মিহিদানা লোহার জালে। কখনো কখনো এই জাল ভেঙে পাঠক-অপাঠক অনেকেই ঢুকে পড়েন
কবিতার পৃথিবীতে ঝঞ্ঝারত জলরাশিতে। সেখানে কবি যেমন জল সাঁতরে এগিয়ে চলেন ভূখণ্ডের
খোঁজে, পাঠকও তেমনি সন্তরণরত। কখনো পাঠক সেই অতল জলরাশিতে হারিয়ে যান, তার চুলের আভাসও
মিলিয়ে যেতে থাকে; কখনো কবিও মিলিয়ে যান জলের গভীরে। এই যে জেগে ওঠা, ডুবে যাওয়া তারই মাঝে কিছু সময়ক্ষেপন, তাকেই হয়তো কবিতা
বলি। ‘আদিম পুস্তকে এইরূপে লেখা হয়েছিল’এর কবিতারাও সাঁতরে ঘর খুঁজছে ফিরবে
বলে।
(হিজল জোবায়ের জন্ম ৩রা মে
১৯৮৭ দিনাজপুরে। পেশায় ‘ইন্ডিপেন্ডেট ফিল্মমেকার’। কাব্যগ্রন্থ : ‘আদিম
পুস্তকে এইরূপে লেখা হয়েছিল’। সম্পাদনা করেন দুটি ওয়েব ম্যাগাজিন : ‘নকটার্ন’ ও ‘গিলগামেশ’।)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন