প্রিয়
হয়তো খুবই অবাক হবে তবুও
বলি
আমার প্রিয় বৃক্ষ হলো বাঁশ
তোমরা যাকে তুচ্ছ করো বলছি আমি
আমার প্রিয় সেই দূর্বাঘাস
এবং আমার প্রিয় পাখি কাজলদীঘির
জলে ভাসা শুভ্র পাতিহাঁস
হাড় কাঁপানো শীতের ভোরে খালের ধারে
শিশির গায়ে দাঁড়িয়ে থাকা আমার প্রিয়
ফুলটি হলো কাশ
আউশ ধানের মাঠ ভাসিয়ে হঠাৎ জোয়ার
উথলে ওঠা আষাঢ় আমার সবচে প্রিয় মাস
এবং তোমার ভালোবাসার আঘাত আমার
এই জীবনের সবচেয়ে প্রিয়
হঠাৎ সর্বনাশ।
হতাশা নগর
এখন যে স্থানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, এর নাম
হতাশা নগর। চারদিকে ঘোর লাগা দালানের
সারি; এলোমেলো বিক্ষিপ্ত গজিয়ে উঠছে লোভের,
মোহের, দম্ভের আর্কিটেকচার, দ্রুত, অবিরাম।
এইসব দালানের চেয়ে দীর্ঘ মানুষের লোভ,
দম্ভের পাখনা অশুভ ঝড়ের কসরতে লিপ্ত।
‘আরো চাই আরো’ বিভ্রান্ত প্রজন্ম, মোহান্ধ ও ক্ষিপ্ত।
সর্বত্রই হতাশা, সব মহলেই পুঞ্জিভূত ক্ষোভ।
শাসকেরা মিথ্যার বেশাতি ফেরি করে প্রতিদিন,
আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়ি তবু ব্যালটের বাক্সে,
গণতন্ত্র গণতন্ত্র তসবিহ জপি সারাক্ষণ।
স্বপ্নের স্বদেশ! প্রত্যাশার আলো ক্রমশই ক্ষীণ।
মরে যেতে যেতে বলি, স্বপ্ন এক টুকরো, থাক সে
হৃদয়ের খুব কাছে তবু, সুখের অনুরণন।।
আরো একটি সকাল
আরো একটি সকাল দরোজায় আলো ফেলে বলে
তুমি হেঁটে যাও রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিবসের দিকে
পেছনের সুদীর্ঘ রাতের ইতিহাস খেলাচ্ছলে
শৈশবের শ্লেট থেকে মুছে দিয়ে আমি বাড়াই পা।
অসভ্য অতীত কেন টেনে ধরে জামার কলার?
দু’পায়ে জড়ানো গারদের
ডান্ডাবেরি চৌদ্দশিকে
আটকাতে চায় সুদৃঢ় প্রত্যয়। করুণা ও কৃপা
সম্ভ্রমের আব্রু, একমাত্র অবলম্বন আমার।
কাফনের মতো সেঁটে আছে দ্বিধা, তাকাতে পারি না
অপেক্ষমান আলোর দিকে হায়, কম্পমান দু’পা।
যে অমোঘ অন্ধকার এসেছি মাড়িয়ে, তার সাথে
সখ্য কতখানি গভীর আমার, কতখানি ঘৃণা?
কেন বারবার মনে পড়ে তাকে, সে-ই অপরূপা
নির্মম বৃত্তের পাকে বেঁধেছে সে কৃষ্ণপক্ষ রাতে।
দ্বিধা
এখন কেবল পেছনে তাকিয়ে পথটাকে দেখি
হলুদ দালান, শার্সিতে গুলির ক্ষতচিহ্ন, খসে
পড়া পলেস্তরা, কখনো কখনো ভীষণ সাবেকী
একজন মানুষ, নির্লিপ্ত, অনুযোগহীন বসে
আছেন ইজিচেয়ারে, বিস্ময়হীন দু’চোখ, অন্ধ।
অথবা আমার পিতা, খুঁড়ছেন বাড়ির উঠোনে
এক সুবিশাল কবর। এসব অর্থহীন দ্বন্দ্ব
আমাকে আপ্লুত করে, রাখে আটকে নিভৃত কোণে।
অনাকাঙ্ক্ষিত কিসের এই দ্বিধা? দেয় না আমাকে
সম্মুখে তাকাতে, শুধু টেনে ধরে জামার আস্তিন?
খসে পড়া ডিম, ঝড়াহত বাবুইয়ের বাসা থেকে
অতীত স্বপ্নেরা আজ, ক্রমাগত ত্রাহি ডাকে
খরাক্রান্ত বুভুক্ষু মাটিতে পড়ে পড়ে রাত-দিন।
প্রসারিত হাত গেছে অভিশাপের দেওয়ালে ঠেকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন